মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ২০২২ সালে মামলার নিস্পত্তি ৩০ ভাগ বেড়েছে। যদি এভাবে চলে, যদি ফাইলিং ঠিকমত করা যায় তাহলে ৫-৭ বছরে মামলার জট একটা সহনশীল পর্যায়ে আসবে।
বুধবার (০৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিতব্য ‘ন্যায়কুঞ্জের’ ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মামলাজট বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অন্তরায়। ভূমি বিরোধ থেকে অধিকাংশ ফৌজদারি বিরোধের উৎপত্তি। বিচারকালে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য পরিহার করে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন এটাই আমার আবেদন। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দেওয়ানি বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে মামলা জটে বিচার বিভাগ সংবিধান প্রতিশ্রুত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি জানিয়ে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, এখন ১৭ কোটি মানুষের দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করবো। এ জন্য আমাদের যেটি দরকার, তা হলো রাষ্ট্রের অন্যান্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিচারব্যবস্থাকে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
প্রধান বিচারপতি বলেন, যে যতটুকু অপরাধ করবে, তার ঠিক ততটুকু শাস্তি পেতে হবে। তা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আইনের শাসন, গণতন্ত্র—কিছুই প্রতিষ্ঠিত হবে না।
বিচারব্যবস্থা ফেইল করলে গণতন্ত্র ফেইল করবে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্র ফেইল করলে রাষ্ট্র ফেইল করবে। এ কারণে বিচারব্যবস্থা ঠিক রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সর্বোপরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীদের দায়িত্ব আছে। দায়িত্ব আছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা বিচারব্যবস্থা যাতে এগিয়ে নিতে পারি সে চেষ্টা সবাইকে করতে হবে। একে-অপরকে সহযোগিতা করবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীকে আদালতে এসে হয়রানির শিকার হতে না হয়। যদি কোনও মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকে, তাহলে বিচারপ্রার্থীরা ভাববে, দেশে বিচার-আচার নেই। এটাই বিচার বিভাগের জন্য হবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এটি আমরা হতে দিতে পারি না।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত বয়কটের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বারবার ভাববেন কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র না বিচার বিভাগ, আইনের শাসন না মানুষের মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি না বিচারপ্রার্থী জনগণ।
তিনি বলেন, আইনতো মহাসমুদ্র। সবার পক্ষে সব আইন জানা সম্ভব নয়। সব আইনজীবীকে আমি অনুরোধ করবো এই বলে যে, আপনার এমন একটি হৃদয় হোক যা কখনো শক্ত হয় না। এমন একটা মেজাজ থাকুক যা কখনো ক্লান্ত হয় না। আপনার আচরণই আপনার স্থান ঠিক করে দেবে। প্রিয় আইনজীবীবৃন্দ আমাদের মনে রাখতে হবে আদালতে যারা বিচার চাইতে আসে তারাও আমাদের মতো মানুষ। আমাদের সবার উচিত তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা। মানবতা নিজের ভেতরটাকে ভালো করে দেয়। যে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলীর প্রকাশ যত বেশি তিনি তত অনুকরণীয় অন্যদের কাছে। জীবনের অর্থই হলো মানবতার সেবা করা। আপনারা মানবতার কথা মনে রাখবেন, আর সব কিছু ভুলে গেলেও চলবে। মানুষের হৃদয়ে নিজেদের জায়গা করে নেবেন নিজেদের আলোকিত করবেন।
এরপর বিকাল ৫টায় জেলা আইনজীবী সমিতির ১৭৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে কেক কেটে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাকারিয়া মোল্লার সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুর রহমান, মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র ও জেলা দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফায়জুন্নেছা, জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন।