নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুক্তিকামী বাঙালি ভেবেছিল যুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে দেশ তৈরি হবে সেই রাষ্ট্রের মালিক হবেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষ এখন মুক্তভাবে কথা বলতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা আজও পূরণ হয়নি। সেই মুক্তিকামী বাঙালি ভেবেছিল যুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে দেশ তৈরি হবে সেই রাষ্ট্রের মালিক হবেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষ এখন মুক্তভাবে কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে সরকার ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জোর করে ক্ষমতা দখলকারী সরকার আজ মানুষের বুকে চেপে বসেছে। অথচ তাদের ক্ষমতায় বসার কোনো বৈধতা নেই। এরা ১৯৭৫ সালেও বাকশালের মাধ্যমে প্রতারণা করেছিল, আর এখন ছদ্মবেশী গণতন্ত্রের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে ভোটাধিকারের মাধ্যম দেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সে অধিকার আজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ সত্য কথা বললেই গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চেয়েছি, তা নিয়ে সংগ্রাম করেছি। খালেদা জিয়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হওয়ার একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন, যে নির্বাচন হবে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু এসব কিছুই বাস্তবায়ন না করে বাকশালের মত একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। আর এজন্য দেশের যাবতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্থানে দলীয় লোক বসানো হয়েছে।
২০১৪ সালে নির্বাচনে কেউ অংশ নেয়নি, কেউ যেন অংশ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছিল সরকার- এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালে রাতে নির্বাচন করেছে। আর এবার এক নাটকীয় মাধ্যমে নিজেরা ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজেরাই ভোট করেছে। বিরোধী দল হিসেবে যারা দাবি করে, তাদেরও আসন কর্তন করা হয়েছে। এ নির্বাচন কেউ গ্রহণ করেনি। দেশের জনগণ ভোট দেয়নি। এমনকি বিশ্ব এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমাদের গণমানুষেরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে ভোটের মাধ্যমে। শান্তিতে বসবাস করতে পারবে, কথা বলতে ও লিখতে পারবে স্বাধীনভাবে। সেই আশা ও ভরসা নিয়ে সারাদেশের মানুষ যুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিল। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু ৫২ বছর পর সেই বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, স্মার্টফোনের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রতিটি লোকের ওপর নজরদারি করছে। ফলে মানুষ যখনই কথা বলতে চায়, বিদ্রোহ করতে চায়, তখনই তাকে তুলে নেওয়া হয়। এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াই করা এতো সহজ নয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, এখনো চালাচ্ছি। জনগণকেও আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তাহলেই বিজয় আসবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, যেখানে মানুষ তিনবেলা খাবার জোটাতে পারছে না। সেখানে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেই দায়ও সরকার নিচ্ছে না। তারা মেনে নিচ্ছে না, তাদের অক্ষমতা ও দুর্নীতির কারণেই বিপুল অংকের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে।
সরকারের লুটের কারণেই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন, এই একীভূতকরণও একটা দুর্নীতির ফাঁদ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।