নিজস্ব প্রতিবেদক :
মানুষ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল মনে করে না। আওয়ামী লীগকে বলে পুলিশ লীগ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ওনারা (আ. লীগ) যদি মনে করে এ ভুয়া ভোট করে, জাল ভোট করে ক্ষমতায় থাকবেন, এতদিন (৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত যদি যেতে পারেন, তাহলে এ নির্বাচন আপনাদের নির্বাসনে পাঠাবে। আওয়ামী লীগ এমনিতেই নির্বাসনে গেছে। মানুষ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল মনে করে না। আওয়ামী লীগকে বলে পুলিশ লীগ।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এত বড় জালিমের শাসক পৃথিবীর আর কোথাও নাই। উন্নয়নের কথা বলে, কী উন্নয়ন হয়েছে? ধনীদের আয় বেড়েছে ৫০ গুন আর গরিবের জন্য পেঁয়াজ আড়াই শ টাকা। নৌকা এখন ভাসে না, নৌকায় এখন লুটের চাল। নৌকা এখন জনগণের নৌকা নাই। ভোটের প্রচারণা হবে না। নির্বাচন হবে না। কিন্তু ৭ তারিখ সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা হবে।
সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার স্ট্যাটাস বি ক্যাটাগরির। নেপাল-ভূটানের মতো দেশ এ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমরা এতগুলো বছর ধরে বি’তেই আছি, তার বেশি যেতে পারিনি। কারণ, আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চামচা। এত বড় জালিম-জুলুমের শাসন বাংলাদেশে আর কখনও হয়নি। খালি বলে গণতন্ত্রের কি দরকার, উন্নয়ন তো হয়েছে। আসলে লুটপাটের মহোৎসব চলছে দেশে।
দেশে সমস্ত জিনিসের দাম বেড়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মানুষের পেটে ক্ষুধার আগুন, খাবার নেই। আর ওরা বলছে উন্নয়ন খাও। এ উন্নয়নের নাম করে ওরা (সরকার) আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। নৌকা এখন আর ভাসে না। নৌকা আকাশ দিয়ে উড়ে। নৌকার মধ্যে লুটের চাল, লুটের সম্পদ। এ নৌকা আর জনগণের নৌকা নেই।
তিনি বলেন, সরকার বলছে মার্চে দুর্ভিক্ষ হবে, বিএনপি নাকি দুর্ভিক্ষ লাগাবে। এ কারওয়ান বাজারে আলুর দাম কত হবে, পটলের দাম কত হবে, পেঁয়াজের দাম কত হবে- এটা কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলতে পারবেন? কারওয়ান বাজারসহ যতগুলো বড় বড় বাজার আছে সমস্ত সিন্ডিকেটের মালিক আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই দুর্ভিক্ষ লাগাবে। এ আওয়ামী লীগ নিঃস্বকে আরও নিঃস্ব করেছে, গরিবকে আরও গরিব করেছে। তাই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, অপেক্ষা করেন সুদিন আসবে। সব ঋণ শোধ করতে হবে। যত টাকা লুট করেছেন, পাই পাই করে, গুনে গুনে, হিসাব করে বিচার করবো। এ যে ভাইকে পাননি, অন্য ভাইকে ধরে নিয়ে গেছেন, বাবাকে পাননি, যমজ ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন, দুই হাত কাটা তার নামে সন্ত্রাসের মামলা দিয়েছেন, ভালো মানুষের নামে সাজা দিয়েছেন। সবকিছুর বিচার হবে।
মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশের প্রতি যাদের দায়বোধ আছে তাঁরা আগামী ৭ তারিখে ভোট দিতে যাবে না। আগামী নির্বাচনে কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ ভোট দিতে পারে না। যাদের দেশের প্রতি দায়বোধ আছে তারা আগামী ৭ তারিখে ভোট দিতে যাবে না। ঐক্যবদ্ধ হোন, রাজপথের দখল নিন। তারা তফসিল, নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য হবে। মানুষ এই সরকারকে ধাওয়া করবে।
বাংলাদেশ আজকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম খুনের দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪০ লাখ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা। দুনিয়ায় আমাদের পরিচয় দাঁড়িয়েছে গুম, খুন, ভোটের অধিকার নাই এমন একটা দেশে। এই পরিচয় তৈরি করেছে এই জালিম সরকার, জনগণের এখানে কোনো দায় নেই।
মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে যে একটা মানবাধিকার কমিশন আছে তা দেশে অনেকেই জানে না। আমাদের পয়সায় তারা এসি রুমে চাকরি করেন কিন্তু তাদের যেটা দায়িত্ব মানুষের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সেটার কোনো খবর নাই। পুলিশবাহিনী মানুষ বিপদে পড়লে পাওয়া যায় না, কিন্তু যখন অধিকারের জন্য দাঁড়ায় তখন শত শত পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের না পেলে তাদের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানদের গ্রেপ্তার করছে। সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে ভাই-ব্রাদার মিলে ৭ জানুয়ারি প্রীতি নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এই আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ১৮ সালে ডাকাতির নির্বাচন করে সারা বিশ্বের সামনে আমাদের মুখে চুনকালি মেখেছে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে অসংখ্য মানুষকে খুন, গুম করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মানবাধিকার কমিশন কোনো কথা বলে না। এই কমিশন, অন্ধ, বোবা, খোঁড়া।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে নৌকা মার্কা, ডামি নৌকা মার্কা, স্বতন্ত্র নৌকা মার্কা, ১৪ দলের নৌকা মার্কা, জাতীয় পার্টির নৌকা মার্কার নির্বাচন হচ্ছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘শাজাহান ওমরকে মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠাল। তারপর তিনি যখন নৌকা মার্কায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেন আর কোনো মামলা তখন কাজ করল না। এই নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। আমরা রক্ত দিয়ে হলেও এই নির্বাচন প্রতিহত করব।’