নিজস্ব প্রতিবেদক :
মানুষের ভোটের অধিকার একমাত্র আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখন সামরিক একনায়করা নির্বাচন করত, খালেদা জিয়া যখন ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করল তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুষ্ঠু ভোটের সুর কোথায় ছিল।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকালে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ যখন ভোট চুরি করল, করল এবং ১৫’ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করল তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিকথা কোথায় ছিল। ২০০১’ এর নির্বাচনে অত্যাচার-নির্যাতন করে জোর করে আমাদের হারানো হল।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে। এদেশে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেওয়া ও আলাদা বাজেট দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, আগামীতেও ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বিশ্বাস করি।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করে কিছু টাকা যাবে গুলশানে, কিছু যাবে হাওয়া ভবনে, বাকিটা যাবে লন্ডনে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে, দুর্নীতি করতে করতে এক সময় তারা বলবে আমরা পারব না। সেই দলকে জনগণ ভোট দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাব, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৪ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটি পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরীব মানুষ একটাও থাকবে না।
সিঙ্গাপুরে বিএনপি নেতাদের চিকিৎসা ও বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কটা নির্বাচন হয়ে গেল সেগুলোতে কি জনগণ অংশ নিতে পারেনি? বিদেশে গিয়ে কার শিং গজালো এটা আমি কিভাবে দেখব। ঠিক আছে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব। এ নিয়ে চিন্তার কিছু দেখি না।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের জমাকৃত অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ বলছেন, এই টাকা জমা দিলে আর পাওয়া যাবে না; কেউ আবার বলছেন, আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে ফান্ড কালেকশনের জন্য এই অর্থ তুলছে। সুতরাং জনগণের এই টাকার সুরক্ষার জন্য সরকার কী নিশ্চয়তা দিচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের জন্য ফান্ড কালেকশন করতে হবে এমন দৈন্যতায় আওয়ামী লীগ পড়েনি। সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, সেটি কার্যকর করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ জনগণের সেই সুবিধা নেই। তাই জনগণ পেনশনের জন্য টাকা জমা দেবে, সেই টাকা নির্দিষ্ট একটা সময় পর তুলতে পারবে। এই অর্থ সরাসরি পেনশন স্কিমে জমা হবে, কোষাগারে জমা হবে। তাই অন্যকেউ সেই টাকা তুলে নিতে বা নয়ছয় করতে পারবে না।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কাজ করতে গেলেই অপপ্রচার হয়। যারা এগুলো করে, তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তারা নিজেরাই অর্বাচীন, বিষন্নতায় ভোগে।
এই ধরনের কোনো অপপ্রচারে কান না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা সমালোচনা করছে, তারাই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হবে। এই ধরনের মানুষের সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
সিন্ডিকেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব। যখন হয় আমরা তো ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। বাণিজ্য মন্ত্রী এটা বলেছে, যে হাত দেওয়া যাবে না। আমি ধরব তো। সে কি আছে এখানে? হাত দেওয়া যাবে না কে বলছে? এটা করার সব সময় একটা শ্রেণি আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ আছে। তারা যখনই দাম বাড়ায় আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিই। কাজেই সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না, এটা নয়। এটা কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলছে। নিজেরা যত উৎপাদন করতে পারব সিন্ডিকেট এমনিই ভেঙে যাবে।
আফ্রিকায় জমি কেনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় লাগবে। আমাদের দেশেই তো এখন নতুন নতুন বীজ উৎপাদন হচ্ছে। আগে তো ঘর দেখতে হবে। আমরা সংরক্ষণাগার গড়ে তুলব। এখানে অতিরিক্ত ফসল রাখা ও বারো মাস ব্যবহার করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্থিতিশীলতা অস্থিতিশীল। রিজার্ভে যে চাপ, সেটা তো সামাল দিতে হবে। আফ্রিকায় বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলে সেটা করতে পারে। তবে এখান থেকে ডলার পাঠিয়ে বিনিয়োগের চেয়ে নিজের দেশে বিনিয়োগেই আমাদের আগ্রহ বেশি।
দেশে হচ্ছে কি, হবে কি-এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হচ্ছে কি হবে কি এটার উত্তর কে দেবে? এটা তো জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়। শুধু মেগা প্রকল্প না। খাদ্য উৎপাদনেও তো ঘাটতি নেই। মেগাপ্রকল্পের সুফল তো জনগণই ভোগ করে। জনগণ যাদের প্রত্যাখান করেছিল তাদের মনে তো বেদনা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনি যাই ভালো করেন খারাপই দেখবে। আমার একটাই কথা, জনগণের জন্য আছি। উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। দ্রুত এত পরিবর্তন আনা কি সহজ কাজ! এটা আওয়ামী লীগ আছে বলেই সম্ভব হয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করে রাখি, ক্ষমতায় আসলে সেটা বাস্তবায়ন করি।
প্রধামন্ত্রী বলেন, দেশে ভূমিহীন থাকবে না। এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম প্রথমবার সরকারে আসার সময়। আরও ১১ থেকে ১২ হাজার ভূমিহীন আছে। তাদের ঘর তৈরি হচ্ছে। এটা হয়ে গেলে বলতে পারব গৃহহীন আর নেই। এটা করার সক্ষমতা অর্জন করেছি আমরা। আমি যখন বিদেশে গেলাম প্রত্যেকাটা দেশের যার সাথে দেখা হয়েছে জানতে চেয়েছে কিভাবে এত উন্নতি করল? আমাদের দেশে কিছু মানুষ পরশ্রীকতর। কেউ এটাতে ভুগলে কিছু বলার নাই।
এখনই ব্রিকস-এর সদস্যপদ পেতে হবে এমন কোনও চিন্তা বাংলাদেশের ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখনই সদস্য পদ পেতে হবে সেই ধরনের কোনও চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। চাইলে পাবো না সেই অবস্থাটা নাই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্যপদ চাইলে পাবো না সেই অবস্থাটা নাই। প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমার সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হলো, আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিকস সম্মেলন করবেন। আমাকে আসতে বললেন। এবং তখন আমাকে এও জানালেন তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেনও। সেই বিষয়ে আমার মতামতও জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে। ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এই পাঁচটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ সব সময় ছিল এবং আছে। সেই সময় এটা নিয়ে আলোচনা হলো পর্যন্ত।
ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন শুনলাম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হবে, আমাদের ওটার ওপর বেশি আগ্রহটা ছিল। যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকেই এই আগ্রহটা ছিল এর সঙ্গে যুক্ত হবো। ব্রিকসের সদস্য পদের ক্ষেত্রে তখন প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন ধাপে ধাপে নেবেন। ভৌগোলিক অবস্থানটা বিবেচনা করে নেবেন। পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ নিলে আমরা খুব খুশি। তবে আমরা খুব ওইভাবে ব্রিকস-এর এখনই সদস্যপদ পাবো, প্রথমবারেই যেয়েই সদস্য পদ পাবো, সেই ধরনের কোনও চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। সেইভাবে কাউকে বলিনিওনি। সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ার প্রাইমমিনিস্টার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন। তখন থেকে আমরা জানি যে প্রথমে কয়েকজনকে নেবে। লাঞ্চের সময় ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের মহাসচিব, ওই সময় আলোচনা হয় যে, আমরা এই কয়জন নেবো। এরপর ধাপে ধাপে সদস্য পদ বাড়াবে।
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। আমাদের অপজিশন থেকে হুতাশ যে আমরা পাইনি। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা মার্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে ওটাই ছিল। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনও অবস্থানই ছিল না। বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি, বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠাক। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইনমতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্নসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়… আমাদের কি সেখানে হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো?
শেখ হাসিনা বলেন, মামলা নিয়ে আমি আলোচনা করি না, কেননা এটা সাব জুডিস। যেখানে এটা সাব জুডিস হিসেবে নিজের দেশেই গণ্য করা হয়। সেখানে বাহির থেকে বিবৃতি এনে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বলা, আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার?
তিনি বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে। কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।