নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
চলমান অবরোধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জকে যারা অশান্ত করতে চায়, তাদের বলব এগুলো করবেন না। একটা মানুষের গাড়িতে যখন আগুন দিবেন, তার যে হাহাকার; সেটা সরাসরি আরশে পৌঁছে যায়। এই হাহাকারের সামনে বাঁচবেন না। তিনি বলেন, আমরা ধৈর্য ধরছি, কারণ আমাদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা কাউকে আঘাত করিনি। আমরা ব্যাক্তিগত বা দলগতভাবে কোনো উদ্যোগ নেইনি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষের গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমরা এই বাংলাদেশ চাই না। এটা যদি রাজনীতি হয়, তাহলে রাজনীতি কলঙ্কিত হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যারা লন্ডনে বসে কথা বলছে, তারা সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। তারা লন্ডন থেকে কথা বলে মানুষকে উসকে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য কী, তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বর্জন করে একটা পাপেট সরকার আনা। তবে জাতির পিতার কন্যা থাকতে ওদের এই আশা সফল হবে না। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। দেশে নির্বাচনও হবে, আর আওয়ামী লীগই জিতবে। যারা বিএনপি করে তারা তো আমাদেরই সন্তান। তাদের যখন কিছু হবে, তখন কিন্তু বিএনপির কেউ দায় নেবে না। আমরা চাই না মানুষের জানমালে আঘাত আসুক।’
একেএম শামীম ওসমান বলেন, আমরা অনুরোধ করব, যারা এই ছেলেদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মাঠে নামিয়ে নাশকতা করাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এদের কিন্তু কনভিকশন হবে। তখন কিন্তু এ সকল নেতারা থাকবেন না। তারা ইতোমধ্যে দল বদলানোর জন্য চেষ্টা করছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমরা চাইনা কোনো বাসে আগুন লাগুক। মানুষের ব্যাক্তিগত সম্পদের ক্ষতি হোক। মানুষ চাইলে অবরোধ করবে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা জোর করে গাড়ি চালাতে বলব না। তেমনি কারও উচিত না জোর করে গাড়ি বন্ধ করা।
তিনি আরও বলেন, ২৮ তারিখ একজন পুলিশকে ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা কুপিয়ে হত্যা করল। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়। সাংবাদিকদের কাজ খবর প্রচার করা। সেই সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হল ২৮ তারিখ সেই বর্বর হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। সারা দেশে ওরা এ কাজ করছে। ওরা ২০১৩-১৪ সালের মত করতে চাচ্ছে। তবে এবার ওরা সফল হবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৬-৭ জন মানুষ নিয়ে এই সাইনবোর্ডে অগ্নিসংযোগ করছেন। এতে বোঝা যায়, ওদের রাজনীতি কোন পর্যায়ে গেছে। রাজনীতি করতে চাইলে গ্রেপ্তার হোন।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, জাতির পিতার সঙ্গে তার কন্যার পার্থক্য আছে। জাতির পিতা সবাইকে বিশ্বাস করতেন, আর তার কন্যা বিশ্বাসঘাতকদের চিনে রেখেছেন। ঢাকার সমাবেশে লাখ লাখ লোকের সমাগম প্রমাণ করে মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। ওরা তো পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছে। যারা পুলিশদের পিটিয়ে হত্যা করে। অসত্য কখনও সত্যের সঙ্গে পারে না।
একেএম শামীম ওসমান বলেনে, আমি জানি না এটা কেমন অবরোধ, আমার ঢাকা থেকে আসতে মাত্র ১০ মিনিট সময় লেগেছে। এটাকে আমার অবরোধ মনে হচ্ছে না।
শামীম ওসমান বলেন, এ পর্যন্ত আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো ঝামেলা করি নাই। তারপরও আমরা দেখতে পারছি মানুষের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীকে বলতে চাই, এটা কোন বাংলাদেশ! এমন দেশ তো আমরা চাই না। ২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে আমাদের একজন পুলিশকে হত্যা করা হলো, নারীদের ওপর হামলা করা হলো, বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সাংবাদিক তো কোনো দলের লোকজন না, তাদের ওপরও নির্মম হামলা করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের উপর যে বর্বর হামলা করা হলো তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এই নেতা বলেন, যেভাবে মানুষের জান-প্রাণ রক্ষার জন্য কাজ করছেন, সে জন্য আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। যে কারোই অবরোধ কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। মানুষ ইচ্ছা করলে গাড়ি চালাবে না। আবার জোর করে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়াও উচিত না।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সচিব রিজভীর মতো নেতা ৭-৮ জন লোক নিয়ে নারায়ণগঞ্জে অগ্নিসংযোগ করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাই যদি এমন করেন, তাহলে বুঝতে হবে রাজনীতি কোথায় গেছে। তাদের এখন জনগণ মানে না। তাদের ধ্বংসাত্মক কাজ কখনো স্বাধীনতার শক্তির সঙ্গে পারবে না। তারা পশুর চেয়ে অধম হয়ে গেছে। তা না হলে মৃত মানুষকে এভাবে কিভাবে মারে। যারা আগুন নিয়ে খেলছেন, মানুষের এমন অভিশাপ নেবেন না। এভাবে রাজনীতি হয় না।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু প্রমুখ।