Dhaka শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানহানির পাঁচ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৯০ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকীর করা মানহানির (মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিনসহ) এ পাঁচ মামলায় খালাস পান খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দেন।

এর মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত চারটি এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত একটি মামলায় খালাস দেন।

জানা গেছে, আজ মামলাগুলো শুনানির জন্য ছিল। তবে মামলার বাদীরা আদালতে হাজির হননি। কয়েকটি মামলার বাদী এ বি সিদ্দিক মারা গেছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। পরে আদালত তাকে মামলাগুলো থেকে খালাসের আদেশ দেন।

খালাসের রায় ঘোষণার পর মাসুদ আহমেদ তালুকদার নিজেই গণমাধ্যমকে রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এসব মামলায় আজ চার্জ শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বাদী পক্ষ হাজির না হওয়ায় আমরা খালাস চেয়ে আবেদন করি। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে এসব মামলা থেকে খালাস দেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন। এছাড়া বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে মানহানিসহ আরও অনেক মামলা হয়।

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে মিথ্যা মামলায় তাদের নেত্রীকে কারাবন্দি করা হয়েছে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান তিনি। গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে ১৯ ও ২২ আগস্ট দুই জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল। ১৯৯১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ সাল। তার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সাল। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ৫ আগস্ট ১৯৪৬ সাল।

মামলায় বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য তিনি ওইদিন জন্মদিন পালন করেন।

অপরদিকে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানিসহ কয়েকটি অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

স্বাধীনতা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে জাতিকে আর বিভক্ত করা যাবে না : সালাহউদ্দিন

মানহানির পাঁচ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ১২:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকীর করা মানহানির (মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিনসহ) এ পাঁচ মামলায় খালাস পান খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দেন।

এর মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত চারটি এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত একটি মামলায় খালাস দেন।

জানা গেছে, আজ মামলাগুলো শুনানির জন্য ছিল। তবে মামলার বাদীরা আদালতে হাজির হননি। কয়েকটি মামলার বাদী এ বি সিদ্দিক মারা গেছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। পরে আদালত তাকে মামলাগুলো থেকে খালাসের আদেশ দেন।

খালাসের রায় ঘোষণার পর মাসুদ আহমেদ তালুকদার নিজেই গণমাধ্যমকে রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এসব মামলায় আজ চার্জ শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বাদী পক্ষ হাজির না হওয়ায় আমরা খালাস চেয়ে আবেদন করি। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে এসব মামলা থেকে খালাস দেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন। এছাড়া বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে মানহানিসহ আরও অনেক মামলা হয়।

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে মিথ্যা মামলায় তাদের নেত্রীকে কারাবন্দি করা হয়েছে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান তিনি। গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে ১৯ ও ২২ আগস্ট দুই জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল। ১৯৯১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ সাল। তার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সাল। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ৫ আগস্ট ১৯৪৬ সাল।

মামলায় বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য তিনি ওইদিন জন্মদিন পালন করেন।

অপরদিকে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানিসহ কয়েকটি অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন।