Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবতাবিরোধী অপরাধে ভান্ডারিয়ার ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিচারপতি শাহীনুর ইসলামসহ তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হেতালিয়া এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নাফ (৭৫), একই এলাকার আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭), চরখালী এলাকার মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (৬৮) (জামিনে) এবং নুরুল আমীন হাওলাদার (পলাতক)। মামলায় প্রথমে সাতজন আসামি থাকলেও এখন এই চারজন জীবিত আছেন।

মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম।

এ মামলায় তদন্ত সম্পন্ন করে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এরপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা বদরুল আলম এ তদন্ত শুরু করেন। এরপর ৬ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত শেষে এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মোট চারটি অভিযোগ আনা হয়।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ৩ নম্বর ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতিশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষিকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণপূর্বক গুলি চালিয়ে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০-৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান।

আর চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে। এরমধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে এরমধ্যে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মানবতাবিরোধী অপরাধে ভান্ডারিয়ার ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশের সময় : ১২:২৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিচারপতি শাহীনুর ইসলামসহ তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হেতালিয়া এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নাফ (৭৫), একই এলাকার আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭), চরখালী এলাকার মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (৬৮) (জামিনে) এবং নুরুল আমীন হাওলাদার (পলাতক)। মামলায় প্রথমে সাতজন আসামি থাকলেও এখন এই চারজন জীবিত আছেন।

মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম।

এ মামলায় তদন্ত সম্পন্ন করে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এরপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা বদরুল আলম এ তদন্ত শুরু করেন। এরপর ৬ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত শেষে এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মোট চারটি অভিযোগ আনা হয়।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ৩ নম্বর ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতিশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষিকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণপূর্বক গুলি চালিয়ে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০-৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান।

আর চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে। এরমধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে এরমধ্যে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।