নিজস্ব প্রতিবেদক :
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় কয়েকশ হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী। এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার রায় সোমবার ঘোষণার কথা। তার আগে ই-মেইলে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা দাবি করেন, ‘তার অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিয়ন্ত্রিত ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো এক প্রহসন। এ বিচার শুরু থেকেই পূর্বনির্ধারিত রায়ের দিকে এগোচ্ছে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবারের রায়কে সামনে রেখে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ রায় বাংলাদেশের জন্য যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা বলেছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পরিকল্পিত ও প্রাণঘাতী সহিংসতায় ১ হাজার ৪০০ জন পর্যন্ত মানুষ নিহত হন।
ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এ প্রধানমন্ত্রী।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেশত্যাগের আগের কয়েক সপ্তাহে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংবা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ আমি কখনো দিইনি।’
এ বছরের শুরুতে টেলিফোন আলাপের ফাঁস হওয়া একটি অডিও যাচাই করে বিবিসি আই, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে শেখ হাসিনার অনুমোদন দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদালতে সেই অডিওটি বাজানো হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। অন্যদিকে আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাইয়ে তার ভূমিকার জন্য দোষ স্বীকার করলেও তাকে এখনো সাজা দেয়া হয়নি।
বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি বা নিজের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন» করতে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।’
সোমবার তার পক্ষে থাকা আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়ে তারা জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।
আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শেখ হাসিনা আশা করেন আগামী নির্বাচনের আগে তার দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
বিবিসির পক্ষ থেকে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত আরো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়েও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, যা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলায়ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি গোপন কারাগারের খোঁজ পাওয়া যায়, যেখানে বহু বছর ধরে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দিদের আটকে রাখা হয়েছিল। অপহৃত বা এসব কারাগারে আটক থাকা শেখ হাসিনার আরো বহু সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অবৈধভাবে হত্যা করারও অভিযোগ রয়েছে। এর দায় কার ওপর বর্তায় জিজ্ঞেস করা হলে হাসিনা জানান, তিনি এসব সম্পর্কে জানতেন না। নেতৃত্বে থাকাকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের জন্য তার দায়ী থাকার বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করছি। তবে কোনো কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ যদি থাকে, তবে তা যেন নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয়।’
শেখ হাসিনা ও তার সাবেক সরকারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক আদালতে বিচার চলছে, যে অভিযোগ তারা অস্বীকার করছেন।
প্রতিনিধির নাম 




















