মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় চান্দেরচর বাজার সংলগ্ন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে ছিলেন এলাকার লোকজন। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঐতিহ্যবাহী চান্দের চর হাটের ব্যবসীয়দের কষ্ট লাঘব হবে। তবে সেতুটির নির্মাণকাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় হওয়া মামলা ও ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শুরু হলেও, কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এতে তিন ইউনিয়নের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ আটকে আছে। সেতুটির অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্তত ১০-১৫ হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী চান্দেরচর হাট সংলগ্ন সেতুটির অবস্থান। সেতুটির বাজার প্রান্তের কিছু জমি অধিগ্রহণ না করায় একটি মামলা দায়ের করেন জমির মালিক ওয়াহেদ আলী মৃধা।
সেতুটি চান্দের চর হাট ভায়া দ্বিতীয়খণ্ড, কাদিরপুর, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন মানুষের যাতায়াত। দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সেতুটি না হওয়ায় উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারছেন না কৃষকেরা। বিকল্প সড়ক করলে সেখানে মাঝে মধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থ চান্দেরচর হাট সেতু নির্মাণে ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সেতুটির ২০২৫ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় মামলা করা নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাধার মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সোস হা-মীম ইন্টারন্যাশনাল। তবে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজটি নির্মাণ হলে অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতুর পাশ দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে মানুষকে। তাদের অন্তত ২০ জনের সঙ্গে এ প্রতিনিধির কথা হয়। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে সেতুর কাজ বন্ধ। ঠিকাদার নেই, সরকারি লোকজনেরও খোঁজ নেই। এই সেতু এখন গ্রামবাসীর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না করায় প্রায় দুই বছর ধরে যানবাহন চলাচল করে বাইপাস সড়ক দিয়ে। এর ফলে এই বাজারে ধান, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে কষ্ট হচ্ছে। এতে দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন করি যাতে দ্রুত আমাদের এ ব্রিজটির কাজ শেষ হয়।
সেতুর সংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই ব্রিজটি অর্ধেক হয়ে থেমে গেছে। কি কারণে কাজ হচ্ছে না জানি না, তবে শুনেছি জায়গা-জমি নিয়ে মামলা হয়েছে। তাছাড়া এই জমির মালিক ওয়াহেব মৃধা। সেতুটি শেষ না হওয়ায় এলাকার মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। তাই সরকারের কাছে আবেদন জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ চালু করা হোক।
জমির মালিক ওয়াহেদ মৃধার ছেলে আলমগীর মৃধা বলেন, সেতুটির কাজ আমাদের জমির ওপর দিয়ে শুরু হলে আমরা ক্ষতিপূরণ চাই, কিন্তু সেটি দেওয়া হয়নি। তারপর আমরা একটি মামলা করি। এরপর গত কয়েকদিন আগে ভূমি অধিগ্রহণের একটি কাগজ হাতে পেয়েছি। আমরা চাই ব্রিজটি দ্রুত হোক। কিন্তু তার আগে আমাদের অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় বাকি কাজটি আটকে আছে। এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। অধিগ্রহণের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।