নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম বলেন, দেশে জন্ম নেয়া ৫৫ শতাংশ নবজাতক মাতৃদুগ্ধ পান করতে পারলেও বঞ্চিত হচ্ছে ৪৫ শতাংশ নবজাতক। যার ফলে প্রতিবছর বাড়ছে শিশুমৃত্যুর হার।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, শিশু জন্মের দুই-তিনের মধ্যে যখন পর্যাপ্ত দুধ পাওয়া যায় না, তখন ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাক্তারদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনিও মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছেন, আমিও মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছি। এটা আমার এবং আপনার অধিকার ছিল। এখন যে শিশুরা জন্মাচ্ছে, আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁকে ফরমুলা দুধের পরামর্শ দেবেন না।
নূরজাহান বেগম বলেন, দুধ না আসলে ব্যবস্থাটা আগে থেকে করতে হয়। বাচ্চা যখন পেটে আসে, ছয় মাস পর থেকে কী করে মায়ের দুধ বেশি আসবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। মায়ের দুধ কোথায় থেকে আসবে, মা খেলে সন্তানের জন্য দুধ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, আগে শাল দুধ খাওয়া নিয়ে নানা ধরনের কুসংস্কার ছিল, এখন সেটি দূর হয়েছে। এখন ৫৫ শতাংশ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। আগে হার বেশি ছিল, এখন মায়ের দুধ খাওয়ার হার কমছে।
তিনি আরো বলেন, কর্মজীবী মায়েরা মাঠে ঘাটে নানা জায়গায় কাজ করেন। তাদেরকে সচেতন করতে হবে। আর এই মা যাতে পর্যাপ্ত খায়। সরকারি হিসেবে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ, বেসরকারিভাবে আরও বেশি। আর ২০ শতাংশও ধরি, এই ২০ শতাংশ যদি পর্যাপ্ত খেতে না পারে, তাহলে সন্তানকে পর্যাপ্ত দুধ দিতে পারবেন না। এজন্য দারিদ্র্য বিমোচনে সবাইকে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার প্রতি বছরই কমছে, যা একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এই প্রবণতা রোধ করে শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হলে পরিবার ও কর্মক্ষেত্র উভয় জায়গায় সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।
নূর জাহান বেগম বলেন, আমরা চাই আগামী বছরের মধ্যেই মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার বাড়ানো হোক। শিশুকে যেন দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো যায়, সে জন্য সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকতে হবে। এতে মায়েরা কর্মক্ষেত্রে থেকেও সন্তানের কাছে থাকতে পারবেন, শিশুও পাবে নিয়মিত মাতৃদুগ্ধ।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি মেধাসম্পন্ন ও সুস্থ জাতি গড়ে তোলা। এর জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে অবশ্যই শালদুধ খাওয়াতে হবে। কারণ শালদুধে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর প্রথম ছয় মাস শিশুকে একমাত্র মায়ের দুধেই রাখতে হবে। তারপরও শিশুর খাবারের পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্বীকার করেন, শহর ও গ্রামে বাস্তবতা ভিন্ন। শহরে কর্মজীবী মায়েরা সময়ের অভাব ও কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতার কারণে সন্তানের পাশে থাকতে পারেন না। আবার গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও সচেতনতার অভাবে শিশুকে ঠিকভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানো হয় না।
তিনি বলেন, শুধু মায়েদের সচেতনতা নয়, পরিবার ও সমাজকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কর্মক্ষেত্রগুলোতে যদি ডে-কেয়ার বা ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকে, তাহলে কর্মজীবী মায়েদের জন্য এটি হবে বড় সহায়ক পদক্ষেপ।
ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে-শহরে সর্বত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে প্রচারণা জোরদার করতে হবে। মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি করতে হবে যে, মায়ের দুধই শিশুর প্রথম ভ্যাকসিন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুছ আলীসহ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।