Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহাসমাবেশ রুখে দিতে চক্রান্ত করছে সরকার : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির মহাসমাবেশ রুখে দিতে সরকার নতুন চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট।

তিনি বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) যে মহাসমাবেশ ডেকেছি সেই মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ। কোনো চক্রান্ত করে, কোনো ষড়যন্ত্র করে, কোনো সহিংসতা করে এই মহাসমাবেশকে নস্যাৎ করা যাবে না। আমি আহ্বান জানাতে চাই কর্তৃপক্ষের কাছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা করবেন। অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকে, কর্তৃপক্ষকে এবং যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে বহন করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের এই যে রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের যে আন্দোলন, মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেওয়ার জন্য তারা (সরকার) নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তিনি একটা সভায় বলেছেন যে, বিএনপি বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করবার জন্যে সীমান্তে অস্ত্র জড়ো করছে। কী ভয়ংকর কথা। কোন সময়ে? যখন জনগণ জেগে উঠছে, যখন জনগণ তাদের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করেছে ঠিক সেই সময়ে এই কথা বলে তারা নতুন একটা চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র শুরু করার পাঁয়তারা করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সমস্ত কথা বলে আপনারা যদি আবার জনগণের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করেন, তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে বহন করতে হবে এবং জনগণ তার উত্তর দেবে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই সরকার সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগ তাদের ২৪ তারিখের প্রোগ্রাম ২৭ তারিখে নিয়ে গেছে। কেন? কারণ তারা জনগণের সঙ্গে সংঘাত করতে চায়। তখনই কেউ সহিংসতা চায়, যখন তার জনসমর্থন হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগও তার জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে।

ফখরুল বলেন, সংসদে যে সরকার বসে আছে, তারা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। অস্থিতিশীলতা, ভয়াবহ পরিস্থিতি, অনিশ্চয়তা জাতির সামনে সৃষ্টি করা হয়েছে। এরা আমাদের বিচার ব্যবস্থা খেয়ে ফেলেছে, জনগণের যে ন্যূনতম অধিকার ভোট, তাও কেড়ে নিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কেন সংঘাতে যাব? আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে। যারা জনবিচ্ছিন্ন তারাই সংঘাত সৃষ্টি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে, গুম খুন করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। কোনো লাভ নেই, জেগে উঠেছে জনতা, এ অবৈধ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল একতাবদ্ধ হয়ে একদফা দাবি আমরা ঘোষণা করেছি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, চলমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। যা এ ডুগডুগি বাজানো নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে হবে না। এজন্য এ কমিশনকে বিদায় করতে হবে। যোগ্য-দক্ষ, দেশপ্রেমিক এবং মেধাবী মানুষদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। রাজপথে নামলেই রক্ত ঝরাচ্ছে। অথচ কাটাছাঁটা সংবিধানের দোহাই দিয়ে তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাইছে। শেখ হাসিনার অধীনে নাকি ভোট সুষ্ঠু হবে। হিরো আলম নামে যে ছেলেটা, তাকেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে দিতে চায় না এ আওয়ামী লীগ সরকার। তাই বলব, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। জনগণের একটাই দাবি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এত বড় রাজনৈতিক সংকট এ দেশে এসেছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমানে কথিত একটা সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসে করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসা যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য কঠিন কাজ।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীকের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘এখানে একজন বলেছেন- সহিংস সশস্ত্র শক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র মানুষের লড়াই কঠিন কাজ। আমিও সেটা মনে করি। কিন্তু ইতিহাস বলে- জনতার শক্তির কাছে কোনো কিছুই টিকে থাকতে পারে না। আমরা জনগণের সেই শক্তিতে বিশ্বাস করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথেই হাঁটতে চাই।

ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

মহাসমাবেশ রুখে দিতে চক্রান্ত করছে সরকার : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১০:২৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির মহাসমাবেশ রুখে দিতে সরকার নতুন চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট।

তিনি বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) যে মহাসমাবেশ ডেকেছি সেই মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ। কোনো চক্রান্ত করে, কোনো ষড়যন্ত্র করে, কোনো সহিংসতা করে এই মহাসমাবেশকে নস্যাৎ করা যাবে না। আমি আহ্বান জানাতে চাই কর্তৃপক্ষের কাছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা করবেন। অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকে, কর্তৃপক্ষকে এবং যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে বহন করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের এই যে রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের যে আন্দোলন, মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেওয়ার জন্য তারা (সরকার) নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তিনি একটা সভায় বলেছেন যে, বিএনপি বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করবার জন্যে সীমান্তে অস্ত্র জড়ো করছে। কী ভয়ংকর কথা। কোন সময়ে? যখন জনগণ জেগে উঠছে, যখন জনগণ তাদের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করেছে ঠিক সেই সময়ে এই কথা বলে তারা নতুন একটা চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র শুরু করার পাঁয়তারা করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সমস্ত কথা বলে আপনারা যদি আবার জনগণের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করেন, তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে বহন করতে হবে এবং জনগণ তার উত্তর দেবে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই সরকার সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগ তাদের ২৪ তারিখের প্রোগ্রাম ২৭ তারিখে নিয়ে গেছে। কেন? কারণ তারা জনগণের সঙ্গে সংঘাত করতে চায়। তখনই কেউ সহিংসতা চায়, যখন তার জনসমর্থন হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগও তার জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে।

ফখরুল বলেন, সংসদে যে সরকার বসে আছে, তারা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। অস্থিতিশীলতা, ভয়াবহ পরিস্থিতি, অনিশ্চয়তা জাতির সামনে সৃষ্টি করা হয়েছে। এরা আমাদের বিচার ব্যবস্থা খেয়ে ফেলেছে, জনগণের যে ন্যূনতম অধিকার ভোট, তাও কেড়ে নিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কেন সংঘাতে যাব? আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে। যারা জনবিচ্ছিন্ন তারাই সংঘাত সৃষ্টি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে, গুম খুন করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। কোনো লাভ নেই, জেগে উঠেছে জনতা, এ অবৈধ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল একতাবদ্ধ হয়ে একদফা দাবি আমরা ঘোষণা করেছি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, চলমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। যা এ ডুগডুগি বাজানো নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে হবে না। এজন্য এ কমিশনকে বিদায় করতে হবে। যোগ্য-দক্ষ, দেশপ্রেমিক এবং মেধাবী মানুষদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। রাজপথে নামলেই রক্ত ঝরাচ্ছে। অথচ কাটাছাঁটা সংবিধানের দোহাই দিয়ে তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাইছে। শেখ হাসিনার অধীনে নাকি ভোট সুষ্ঠু হবে। হিরো আলম নামে যে ছেলেটা, তাকেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে দিতে চায় না এ আওয়ামী লীগ সরকার। তাই বলব, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। জনগণের একটাই দাবি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এত বড় রাজনৈতিক সংকট এ দেশে এসেছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমানে কথিত একটা সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসে করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসা যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য কঠিন কাজ।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীকের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘এখানে একজন বলেছেন- সহিংস সশস্ত্র শক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র মানুষের লড়াই কঠিন কাজ। আমিও সেটা মনে করি। কিন্তু ইতিহাস বলে- জনতার শক্তির কাছে কোনো কিছুই টিকে থাকতে পারে না। আমরা জনগণের সেই শক্তিতে বিশ্বাস করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথেই হাঁটতে চাই।

ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।