Dhaka শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মস্কোতে কনসার্টে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত আটটার পরপর মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রোকাস সিটি হলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি’র বরাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রুশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়।

হামলার সময় হলটিতে পিকনিক নামে একটি ব্যান্ডের পরিবেশনার প্রস্তুতি চলছিল। এই কনসার্টের জন্য ছয় হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। ওই হলে নয় হাজারের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। হামলার পর হতাহতের উদ্ধারে আসে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঘটনার পরপর নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে আইএসের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স; যদিও আইএসের ওই পোস্ট স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

হামলার নিন্দা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের এলাকা খালি করে দেওয়া হয়েছে। হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাশিয়ার তদন্তকারী সংস্থা।

রাশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারীরা ছদ্মবেশে কনসার্ট হলে ঢুকেছিল। তাদের কাছে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক ছিল।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স হামলার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে এবং হলের মধ্যেই বোমা ছুড়ছে। অডিটোরিয়ামের ছাদে আগুন লেগে চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে।

প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। গুলি চালানো বন্ধ হলে লোকজন সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

রাশিয়ার আপৎকালীন মন্ত্রণালয় তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, হামলার হাত থেকে বাঁচতে হলের বেসমেন্টে প্রায় ১০০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। হলের ছাদেও আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। সকলকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা করা উচিত।’ হামলার নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ঘটনায় জাতিসংঘ, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ শোক প্রকাশ করেছে।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুলির আঘাতে এবং রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কনসার্ট হলে সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে এতে ব্যবহার করা হয়েছে অটোমেটিক রাইফেল। হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলসহ অন্যান্য যেসব অস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফেলে গেছে সেগুলো জব্দ করেছেন তদন্তকারীরা।

এছাড়া কনসার্ট হলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা দাহ্য তরল পদার্থ ব্যবহার করেছে।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি বলেছে, ব্রায়ান্সক অঞ্চলের বিশেষ সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, ইউক্রেনের সীমান্তের কাছ থেকে, মস্কোর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকা চার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাশিয়ার বার্তাসংস্থা টাস নিউজ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির বরাতে জানিয়েছে, হামলার আগে গোপন জায়গায় অস্ত্রগুলো প্রস্তুত করেছে এই সন্ত্রাসীরা। হামলা চালানোর পর তারা রাশিয়া থেকে ইউক্রেন সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং তাদের সঙ্গে ইউক্রেন সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ ছিল। সন্ত্রাসীরা খুবই পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছে।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মস্কোতে কনসার্টে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩

প্রকাশের সময় : ০৭:৩০:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত আটটার পরপর মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রোকাস সিটি হলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি’র বরাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রুশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়।

হামলার সময় হলটিতে পিকনিক নামে একটি ব্যান্ডের পরিবেশনার প্রস্তুতি চলছিল। এই কনসার্টের জন্য ছয় হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। ওই হলে নয় হাজারের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। হামলার পর হতাহতের উদ্ধারে আসে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঘটনার পরপর নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে আইএসের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স; যদিও আইএসের ওই পোস্ট স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

হামলার নিন্দা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের এলাকা খালি করে দেওয়া হয়েছে। হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাশিয়ার তদন্তকারী সংস্থা।

রাশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারীরা ছদ্মবেশে কনসার্ট হলে ঢুকেছিল। তাদের কাছে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক ছিল।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স হামলার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে এবং হলের মধ্যেই বোমা ছুড়ছে। অডিটোরিয়ামের ছাদে আগুন লেগে চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে।

প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। গুলি চালানো বন্ধ হলে লোকজন সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

রাশিয়ার আপৎকালীন মন্ত্রণালয় তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, হামলার হাত থেকে বাঁচতে হলের বেসমেন্টে প্রায় ১০০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। হলের ছাদেও আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। সকলকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা করা উচিত।’ হামলার নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ঘটনায় জাতিসংঘ, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ শোক প্রকাশ করেছে।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুলির আঘাতে এবং রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কনসার্ট হলে সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে এতে ব্যবহার করা হয়েছে অটোমেটিক রাইফেল। হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলসহ অন্যান্য যেসব অস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফেলে গেছে সেগুলো জব্দ করেছেন তদন্তকারীরা।

এছাড়া কনসার্ট হলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা দাহ্য তরল পদার্থ ব্যবহার করেছে।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি বলেছে, ব্রায়ান্সক অঞ্চলের বিশেষ সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, ইউক্রেনের সীমান্তের কাছ থেকে, মস্কোর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকা চার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাশিয়ার বার্তাসংস্থা টাস নিউজ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির বরাতে জানিয়েছে, হামলার আগে গোপন জায়গায় অস্ত্রগুলো প্রস্তুত করেছে এই সন্ত্রাসীরা। হামলা চালানোর পর তারা রাশিয়া থেকে ইউক্রেন সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং তাদের সঙ্গে ইউক্রেন সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ ছিল। সন্ত্রাসীরা খুবই পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছে।