নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা না কমে উল্টো বাড়ছে জানিয়ে এই অবস্থাকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ঘাটতি নেই। মশা না কমলে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না। ডেঙ্গু রোগী বাড়লে মৃত্যুও বাড়বে। দেশে ওষুধের অভাব নেই তবে, এখনও ডেঙ্গু রোগী না কমে বাড়ছে। এটি উদ্বেগজনক।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলন অডিটোরিয়ামে ‘ডেঙ্গু ড্রপস’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, দায়িত্ববান সরকারি কর্মকর্তাসহ আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের আশপাশে পানি জমতে পারে- এমন পাত্র পরে আছে কি-না বা তাতে পানি জমে আছে কি-না, তা দেখতে হবে। আমরা সকলে মিলে কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
ডেঙ্গু বিষয়ে উদ্ভাবিত অ্যাপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশেও উদ্ভাবন হয়, আমাদের ছেলেরাও যে উদ্ভাবন করতে পারে তারই নিদর্শন হচ্ছে ডেঙ্গু অ্যাপস। এর মধ্যদিয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসায় বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে যাবে। রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাবেন। এটি জীবন বাঁচাবে। আমাদের দেশের ইমেজও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। ডেঙ্গুর ওপরে চিকিৎসক-নার্সদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত দু-এক দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা এখনও কমেনি, বরং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে, ডেঙ্গুও আনতে পারবে। তবে মশা নির্মূল করতে হবে। মশা বাড়লে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এরইমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ডেঙ্গু চিকিৎসায় অগ্রগতি লাভ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু ড্রপস অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর প্যারামিটারসহ সব বিষয় নির্ণয় করে কতটুকু ফ্লুইড দিতে হবে, তা দ্রুত সময়ে জানা যাবে।
তিনি বলেন, চিকিৎসক ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা অ্যাপটি তৈরি করেছেন। বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল প্রকৌশলীও এতে সহযোগিতা করেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর বয়স, উচ্চতা, লিঙ্গসহ সবকিছু নির্ণয় করে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এমআরআই মেশিন দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, আপনাদের থেকে আমাদের দায়িত্ব বেশি। যা যা করার আমরা করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু ড্রপস অ্যাপটি বুয়েটের বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট তৈরি করেছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। নতুন এই অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গু রোগীর ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ করতে পারবেন। রোগীর কখন কী পরিমাণ ফ্লুইড প্রয়োজন হবে তা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। অ্যাপটি প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপটি কীভাবে কাজ করবে সেটির জন্য আমাদের আইটি বিভাগ থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে। তারা এটি যাচাই-বাছাই করবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। যতদিন মশা নিধন করা না যাবে ততদিন রোগী অসুস্থ হবে এবং মারা যাবে। ডেঙ্গুর থেকেও করোনাভাইরাস বেশি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আশা করি ডেঙ্গুও আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেডিকেলের এমআরআই মেশিন নষ্ট, এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাহিদ মালেক বলেন, আপনাদের থেকে আমাদের দায়িত্ব বেশি, যা যা করার দরকার আমরা করছি। এই কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সত্য প্রসাদ মজুমদার। এতে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।