আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে দেশটিতে ৬৩২ জন নিহত হয়েছেন। এতে ৩২৯ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ১৯ মিনিট পর ৪ দশমিক ৯ মাত্রার আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়।
ইউএসজিএস জানায়, মারাকাশ শহরের ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। এর রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। এর গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। ভূমিকম্পটি ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ৫০০ বছরের মধ্যে ওই এলাকায় এত বড় ভূমিকম্প হয়নি।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে মরক্কোর রাজধানী রাবাতের দূরত্ব প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। সেখানেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ ছাড়া পাশের শহর কাসাব্লাঙ্কা ও এসাউইরাতে একই রকম কম্পন অনুভূত হয়।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মারাকেশ এবং দক্ষিণের বেশ কয়েকটি এলাকায় অনেক মানুষ মারা গেছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, ভূমিকম্পে আল-হাউজ, মারাকেশ, ওয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচাউয়া এবং তারউদান্ত প্রদেশে ৬৩২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩২৯ জন।
মারাকাশের বাসিন্দা আব্দেলহক এল আমরানি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমি ভবন নড়তে দেখছিলাম। তখন আমি বাইরে বের হয়ে দেখি রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। মানুষ আতঙ্কিত ও হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। শিশুরা কান্নাকাটি করছিল। ভূমিকম্পের পর ১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ এলেও কেউ আর নিজ ঘরে ফেরেননি।
ভূমিকম্পে ধসে গেছে রাবাত ও মারাকাশের বহু বাড়ি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধসে যাওয়া বাড়ি, রাস্তার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পের ফলে অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। আতঙ্কে মানুষ সারারাত রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন।
মরক্কোর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আটলাস পরবর্তমালার কিছু এলাকায় সব বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে। আর সেসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে ওই পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ সাধারণত মধ্যরাতে যেসব ভূমিকম্প সংঘটিত হয় সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কিছুটা সময় লাগে।
এই অঞ্চলে ভূমিকম্পগুলো অস্বাভাবিক হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এই মাত্রার ভূমিকম্প ১২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে দেখা যায়নি।
ইউএসজিএস বলেছে, ১৯০০ সাল থেকে এই ভূমিকম্পের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার চেয়ে বড় ভূমিকম্প দেখা যায়নি। তবে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
ইউএসজিএস ব্যাখ্যা করেছে যে, অ্যাটলাস পর্বতমালায় ‘তির্যক-বিপরীত ফল্টিং’ ভূমিকম্পের কারণ। খবরে বলা হয়েছে ভূমিকম্পটি স্পেন ও পর্তুগালেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা।