Dhaka শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আতঙ্কে পারাপার হচ্ছে ৮-১০ গ্রামের মানুষ

ময়মনসিংহে কালভার্টের তলার মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে চলাচলে

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : 

ময়মনসিংহের ফুলপুরে মালিঝি নদীর ওপর নির্মাণের ছয় বছরের মধ্যে একটি বক্স কালভার্টের পাটাতনের তলার মাটি সরে গিয়ে চলাচলে বেড়েছে ঝুঁকি। এতে আতঙ্কে পারাপার হচ্ছে অন্তত ৮-১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর একে অপরকে দায়ী করছে। সাময়িক ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি কালভার্টটি সম্পন্নভাবে মেরামত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানোর কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জেলার ফুলপুর উপজেলার ছনধরা ইউনিয়নের বাইসকাহনিয়া রামসোনা বাজারের রাস্তায় খালের ওপর নির্মাণ করা হয় বক্স কালভার্টটি। ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা।

নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুভ এন্টারপ্রাইজ। গত মে মাসের আগাম বন্যার পানির স্রোতে বক্স কালভার্টটির তলার মাটি সরে গিয়ে অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এতে পাটাতন ও মাটির দূরত্ব বেড়েছে অন্তত তিন-পাঁচ ফুট। কালভার্টটির দুপাশেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে নদী খননের কারণে মাটি সরে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য, বক্স কালভার্ট নির্মাণের আগে তাদের অনুমতি না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে করায় মাটি সরে গেছে। চলাচলে ঝুঁকি বাড়ায় ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলছেন, ১০-১৫ হাজার মানুষের চলাচলের বক্স কালভার্টটি দ্রুত যেন মেরামত করা হয়।

বাইসকাহনিয়া গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, সেতুটির ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন গেলে কাঁপতে শুরু করে। মনে আতঙ্ক কাজ করে। তাই সেতুটি যেন ধসে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে বড় যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয় না। আমরা চাই দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হোক।

মালিঝি গ্রামের আবুল কালাম বলেন, সেতুটি দিয়ে অন্তত ৮-১০ গ্রামের ১০-১৫ হাজার মানুষ চলাচল করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও চলাচল করে। কৃষিপণ্য নিয়ে আমরা সহজে যাওয়া-আসা করি। সেতুটির এমন অবস্থায় আমাদের মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সেই প্রত্যাশা করি।

ফুলপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশীষ কর্মকার বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড মালিঝি নদী খনন করলে কালভার্টটির তলার মাটি সরে যায়। তাদের অপরিকল্পিত খননের কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় চলতি বছরের শুরুতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেরামতের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেরামত করা হলেও মে মাসের আগাম বন্যার পানির স্রোতে আবারও পাটাতন থেকে মাটি সরে যায়। স্থায়ীভাবে মেরামত করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম আবিদ হোসেন বলেন, যে স্থানে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেই স্থানে নদীর প্রস্থ ৮০ ফুট। সেখানে ৩৬ ফুট ব্রিজ কীভাবে উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ করে, তা বোধগম্য নয়। তাদের সীমিত বাজেটের মধ্যে দায়সারাভাবে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করায় যেমন মাটি সরে ঝুঁকি বেড়েছে, ঠিক তেমনি দখল হচ্ছে নদীর জায়গা। আমরা নদী খনন করার সময় বক্স কালভার্টটির উভয় পাশে ২০ ফুট করে দূরত্ব বজায় রাখলেও পানির স্রোতের কারণে পাটাতনের তলার মাটি সরে গেছে।

তিনি আরও বলেন, নিয়ম হচ্ছে নদের ওপর কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া। কিন্তু তারা তা না নেওয়ায় এমন ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে কথা বলেছি। তারা অচিরেই পরিদর্শনে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর

আতঙ্কে পারাপার হচ্ছে ৮-১০ গ্রামের মানুষ

ময়মনসিংহে কালভার্টের তলার মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে চলাচলে

প্রকাশের সময় : ১১:৪১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : 

ময়মনসিংহের ফুলপুরে মালিঝি নদীর ওপর নির্মাণের ছয় বছরের মধ্যে একটি বক্স কালভার্টের পাটাতনের তলার মাটি সরে গিয়ে চলাচলে বেড়েছে ঝুঁকি। এতে আতঙ্কে পারাপার হচ্ছে অন্তত ৮-১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর একে অপরকে দায়ী করছে। সাময়িক ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি কালভার্টটি সম্পন্নভাবে মেরামত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানোর কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জেলার ফুলপুর উপজেলার ছনধরা ইউনিয়নের বাইসকাহনিয়া রামসোনা বাজারের রাস্তায় খালের ওপর নির্মাণ করা হয় বক্স কালভার্টটি। ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা।

নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুভ এন্টারপ্রাইজ। গত মে মাসের আগাম বন্যার পানির স্রোতে বক্স কালভার্টটির তলার মাটি সরে গিয়ে অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এতে পাটাতন ও মাটির দূরত্ব বেড়েছে অন্তত তিন-পাঁচ ফুট। কালভার্টটির দুপাশেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে নদী খননের কারণে মাটি সরে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য, বক্স কালভার্ট নির্মাণের আগে তাদের অনুমতি না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে করায় মাটি সরে গেছে। চলাচলে ঝুঁকি বাড়ায় ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলছেন, ১০-১৫ হাজার মানুষের চলাচলের বক্স কালভার্টটি দ্রুত যেন মেরামত করা হয়।

বাইসকাহনিয়া গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, সেতুটির ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন গেলে কাঁপতে শুরু করে। মনে আতঙ্ক কাজ করে। তাই সেতুটি যেন ধসে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে বড় যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয় না। আমরা চাই দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হোক।

মালিঝি গ্রামের আবুল কালাম বলেন, সেতুটি দিয়ে অন্তত ৮-১০ গ্রামের ১০-১৫ হাজার মানুষ চলাচল করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও চলাচল করে। কৃষিপণ্য নিয়ে আমরা সহজে যাওয়া-আসা করি। সেতুটির এমন অবস্থায় আমাদের মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সেই প্রত্যাশা করি।

ফুলপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশীষ কর্মকার বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড মালিঝি নদী খনন করলে কালভার্টটির তলার মাটি সরে যায়। তাদের অপরিকল্পিত খননের কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় চলতি বছরের শুরুতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেরামতের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেরামত করা হলেও মে মাসের আগাম বন্যার পানির স্রোতে আবারও পাটাতন থেকে মাটি সরে যায়। স্থায়ীভাবে মেরামত করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম আবিদ হোসেন বলেন, যে স্থানে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেই স্থানে নদীর প্রস্থ ৮০ ফুট। সেখানে ৩৬ ফুট ব্রিজ কীভাবে উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ করে, তা বোধগম্য নয়। তাদের সীমিত বাজেটের মধ্যে দায়সারাভাবে বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করায় যেমন মাটি সরে ঝুঁকি বেড়েছে, ঠিক তেমনি দখল হচ্ছে নদীর জায়গা। আমরা নদী খনন করার সময় বক্স কালভার্টটির উভয় পাশে ২০ ফুট করে দূরত্ব বজায় রাখলেও পানির স্রোতের কারণে পাটাতনের তলার মাটি সরে গেছে।

তিনি আরও বলেন, নিয়ম হচ্ছে নদের ওপর কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া। কিন্তু তারা তা না নেওয়ায় এমন ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে কথা বলেছি। তারা অচিরেই পরিদর্শনে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।