রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
ভেঙে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় রংপুরের ৫৫০ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলে মারাত্মক জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন, সড়কে চারা রোপণ করে অভিনব প্রতিবাদ জানানোর মতো কর্মসূচি পালন করা হলেও তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের।
রংপুর এলজিইডি সূত্র জানায়, জেলার আট উপজেলায় সাত হাজার ৭৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৪০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল। এরমধ্যে বদরগঞ্জ উপজেলায় ২৭ দশমিক ১৯৭ কিলোমিটার, গংগাচড়া উপজেলায় ২২ দশমিক ২৯৫ কিলোমিটার, কাউনিয়া উপজেলায় ১৬ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার, মিঠাপুকুর উপজেলায় ৭৪ দশমিক ১২০ কিলোমিটার, পীরগাছা উপজেলায় ৩৩ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৪০ দশমিক ৪৭০ কিলোমিটার, তারাগঞ্জ উপজেলায় ১০ দশমিক ৪৮০ কিলোমিটার এবং সদর উপজেলায় ২০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার।
রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর ৩০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডের ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে চলাচল করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নগরীর জাহাজ কম্পানি থেকে সাতমাথা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ।
রংপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের ৩৮২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১১ কিলোমিটার সড়ক ভয়াবহ ভেঙেছে। মেডিক্যাল পূর্বগেট থেকে বুড়িরহাট পর্যন্ত দুই দশমিক ২৯ কিলোমিটার সড়কে ভয়াবহ ভাঙন ও খানাখন্দে ভরে গেছে। এছাড়া বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় পানিতে ডুবে থাকছে সড়ক। সাময়িক মেরামত করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া জাতীয় মহাসড়কের রংপুর মেডিক্যাল মোড় থেকে মডার্ন মোড় পর্যন্ত আট কিলোমিটার এবং পাগলাপীর এলাকায় এক কিলোমিটর সড়ক বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) রংপুর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেডিক্যালের পূর্বগেট থেকে বুড়িরহাট পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করার জন্য গত বছরের ১২ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়। সাত কোটি টাকার এই কাজ এখন সচীবের দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পড়ে আছে। কিন্তু অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া সড়ক বিভাগে মাত্র ৩৮ কোটি টাকার প্রয়োজন। সেটিই মিলছে না।
সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় এসব সড়কে হেলেদুলে চলছে ছোট-বড় পরিবহন।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, অল্প বৃষ্টিতেই সড়ক কাদার সাগরে পরিণত হয়। গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের কষ্ট সরকার দেখছে না, মন্ত্রনালয় দেখছে না। এগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পরিবহন মালিকরা বলেন, বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস ও ট্রাকগুলো সড়কের গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ভাড়াও বেড়েছে। এতে যাত্রীদের ওপর চাপ পড়ছে।
রংপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলের সড়ক সংস্কারের জন্য এই মুহূর্তে মাত্র ৩৭ কোটি টাকার প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখনো অর্থ ছাড়ের অনুমোদন মেলেনি। অনুমোদন ছাড়া আমরা কোনো কাজ শুরু করতে পারছি না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, ২৪০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১২০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া আগের বছর সংস্কারের ২০ কোটি টাকা পাওয়া যায়নি। সবমিলে ১৪০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৭০ কোটির অনুমোদন ইতোমধ্যে মিলেছে। বাকি টাকা না মিললে পুরো কাজ করা সম্ভব নয়।
রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, ৩০০ কিলোমিটার সড়কের জন্য ২১০ কোটি টাকার প্রয়োজন। টাকা না পাওয়ায় কোনো কাজই করা সম্ভব হচ্ছে না।