রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারে না। ক্ষমতায় থাকতে দেব না। এতো সহজ নয়। আপনারা ভাবছেন এভাবে লাফালাফি করেই ক্ষমতায় যেতে পারবেন। আজকে ভূ-রাজনীতিতে বিএনপি হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। সুতরাং এত লাফালাফি করে লাভ নেই।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর পাঠানপাড়ার শিমুল তলা মোড়ে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বুকের রক্ত ঢেলে সমস্ত ষড়যন্ত্র, চক্ষু রাঙানিকে উপড়ে ফেলে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আজকেও কেউ কেউ চোখ রাঙায়। এটি শেখ হাসিনা, যার ধমনি-শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহমান। যে রক্ত আপস মানে না। যে রক্ত রক্তচক্ষুর সামনেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়- সেটি হচ্ছে শেখ হাসিনা। ১৪ সালেও সড়যন্ত্র হয়েছিল। বলেছিল নির্বাচন করলে এক মাসও টিকবে না। আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। ১৮ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন করার পর বিএনপি বলেছিল, টান দিয়ে ফেলে দেব। খালেদা জিয়া জেলে থাকলেও তার ও তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিল। টান দিতে গিয়েই তারাই রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমাদের বলেছে ফাইনাল খেলা আগামী মাসে হবে। আমরা প্রস্তুত আছি ফাইনাল খেলার জন্য। আমরা প্রিপারেশন নিয়েছি ফাইনাল খেলার জন্য। কোথায় খেলবেন ফাইনাল খেলা বলেন। আমরা সেখানে যাব। আমরা আওয়ামী লীগ যাব না, যুবলীগকে সেখানে পাঠাব ফাইনাল খেলার জন্য। আমাদের ফাস্ট টিম পাঠাব না, সেকেন্ড টিম পাঠাব। প্রয়োজনে মহিলা আওয়ামী লীগকে পাঠাব। ওদের সাথে আগে খেলেন। তারপর আওয়ামী লীগ প্রয়োজনে আপনাদের সাথে খেলবে। যুব মহিলা লীগ যদি যেতে চায় যুবলীগ তাদের নিয়ে যেতে পারে। আমরা ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত আছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, ফাইনাল খেলার আগে আপনাদের খেলোয়াড়রা দলে থাকে নাকি দল বদল করে ফেলে সেই দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। ফাইনাল খেলার আগে যদি আপনাদের খেলোয়াড়রা দল বদল করে ফেলে তাহলে ফাইনাল খেলতে পারবেন না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপির নেতাকর্মীরা) বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক (তারেক রহমান) আবার আসবেন। আবার এলে হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবন বানাবেন। তারা আবার সুযোগ পেলে ৫০০ জায়গায় নয়, পাঁচ হাজার জায়গায় বোমা হামলা হবে। দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাকে ভিসা দেবে না দেবে এটা তাদের ব্যাপার। এ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কারে (কাকে) ভিসা দেবে, কারে (কাকে) ভিসা দেবে না, কারে (কাকে) ১০ বছর দেবে, কারে (কাকে) ১ বছর দেবে, বা কারে (কাকে) দেবে না এগুলো তাদের ব্যাপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। দেখলেন না ভারতে কীভাবে সেলফি তুললো জো বাইডেন। ছবিই তো কথা বলবে।
তিনি বলেন, আপনারা আমার বিএনপি দলের কোন নেতাকে ভিসানীতি দিবেন কিংবা আমাদের আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে ভিসানীতি দিবেন সেটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু গণমাধ্যমকে কেন ভিসানীতিতে ফেলা হবে সেটি আমার বোধগম্য নয়। তাদের এ ভিসানীতি আমাদের স্বাধীন গগণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করা।
হাসান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর করার বিষয়টি স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপের শামিল। এর প্রভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করবে। গণমাধ্যমকর্মীদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত।
মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কাকে ভিসা দেবে, কাকে দিবে না- সেটা তাদের ব্যাপার। ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার।
আওয়ামী যুবলীগকে আওয়ামী লীগের অগ্রগামী বাহিনী ভ্যানগার্ড হিসেবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে দেশ যখন বদলে গেছে তখন দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশকে যারা সন্ত্রাসের অভয়রাণ্য বানাতে চাচ্ছে, যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে, দেশকে যারা বিশ্ববেনিয়াদের ক্রীড়াক্ষেত্র বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, বাংলাদেশকে যারা পেছনে নিয়ে যেতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হচ্ছে যুবলীগ।
তিনি বলেন, সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত যুবলীগ ইনশাআল্লাহ ভেঙ্গে দেবে এবং আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পরপর চতুর্থবার তথা পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রীর আসনে আসীন করে আমরা ঘরে ফিরে যাবো।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আবিদা আনজুম মিতা, যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু সালেহ।
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টুর সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু ও সদস্য বেগম আখতার জাহান।