নিজস্ব প্রতিবেদক :
আমেরিকার ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাপের বেটির ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্র এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শান্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জননেতাদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, উনারা (আমেরিকা) এখন কী বলে এটা সেটা ভিসা নীতির কথা। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী এবং আদর্শের উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাপের বেটি, যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা। কী কইছে? তুমি (আমেরিকা) সেংশন দিলে আমিও সেংশন দেব, আমার জনগণ দেবে। এরপর আর কোন কথা থাকে?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে খুব সমালোচনা চলছে। কে কী বললো, এগুলা এখন বিবেচনার বিষয় না। বিদেশে আমাদের কোনো প্রভু নেই, আমাদের প্রভু বাংলার জনগণ। এ রাষ্ট্র আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন করেছি। আজ বন্ধুবন্ধু নেই, তার যোগ্য কন্যা আছে। তার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ঠেকানোর জন্য। কিন্ত তারা পারেনি, রাশিয়া তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি নিয়ে ভেটো দিয়েছিল। তারা বলেছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে স্থায়ী বোঝা হবে।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা যাওয়া লাগবে কেন? আমাদের কোনো দরকার নেই। আমাদের সাবেক চিফ জাস্টিস ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছিলেন, আমি কখনও আমেরিকান ভিসা নেই নাই, আমার কখনও প্রয়োজনও নেই। আর আমি বলব, দেশ কি আমেরিকার কথায় চলবে, নাকি আমাদের জনগণের কথায় চলবে? ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে সংবিধান বঙ্গবন্ধু লিখে দিয়েছিলেন সেখানে বলা আছে, এই রাষ্ট্রের মালিক বাংলার জনগণ। বিদেশিরা আমাদের প্রভু নয়। কাজেই এটা কোনো বিবেচনের বিষয় নয়।
১৯৭৪ সালের ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে চাল আর গম কিনেছিল। সে গম চাল চিটাগাং পোর্টে এসে পৌঁছায়নি। মধ্যপথে উধাও হয়ে গেছে। যার ফলে কৃত্রিম এক দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
১৯৭১ সালে আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ঠেকানোর জন্য আমেরিকা ডিসেম্বরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। আমার মনে আছে, ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে আমেরিকার প্রতিনিধি বলেছিল ‘সিজ ফায়ার’। তার মানে যুদ্ধ থামিয়ে যে যার অবস্থানে থাকা। আর এটা যদি আমরা মেনে নিতাম অথবা জাতিসংঘে এটা পাস হতো তাহলে আমরা ১৬ ডিসেম্বস স্বাধীনতা পেতাম না, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করত না। আমাদের যুদ্ধটা আরও বেশি সম্প্রসারিত হতো। সে সময় আমেরিকার প্রস্তাবে রাশিয়া ভেটো দিয়েছিল, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন আমেরিকার প্রতিনিধি দল বলেছিল, বাংলাদেশকে যদি সদস্যপদ দেওয়া হয় তাহলে এটা পুরো পৃথিবীর জন্য স্থায়ী একটা বোঝা হবে। এর আগে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেটও বলেছিল।
তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিল তারা আমাদের আশেপাশেই আছে। ওরা আজকে আবার আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে খামচে ধরতে চায়। যে কারণে আজকে আমরা শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের মতো ত্যাগী শহীদ নেতাদের অভাব অনুভব করি। আর যারা আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে খামচে ধরতে চায়, দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তাদের মোকাবেলা করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।
এসময় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শহীদ ময়েজ উদ্দীন স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ অনেকে।