Dhaka রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পূজারা অবসর

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৯২ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ভারতের টেস্ট ক্রিকেট মানেই একসময় ছিল চেতেশ্বর পূজারা। ধৈর্য, দৃঢ়তা আর অটল মানসিক শক্তির এক অনন্য মিশেল। অবশেষে সেই ব্যাটিং প্রাচীর বিদায় জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। রোববার (২৪ আগস্ট) এক আবেগঘন বার্তায় পূজারা ঘোষণা দেন, আর কখনও ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন না।

২০২৩ সালের জুনে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালই ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর আর ভারতের জার্সি গায়ে নামা হয়নি তার।

অবসরের বার্তায় তাই লিখেছেন, ভারতের জার্সি গায়ে চাপিয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে যতবার মাঠে নেমেছি, সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে যেমন বলা হয়, সব ভালো কিছুরই একদিন শেষ হয়। তাই অপরিসীম কৃতজ্ঞতা নিয়ে আমি ভারতীয় ক্রিকেটে সব সংস্করণ থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

৩৭ বছর বয়সী পুজারা ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ভারতের হয়ে ১০৩টি টেস্ট ও ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। টেস্টে তার রান সংখ্যা ৭,১৯৫, গড় ৪৩.৬০; রয়েছে ১৯টি সেঞ্চুরি ও ৩৫টি হাফ-সেঞ্চুরি। নিজ দেশে তিনি করেছেন ৩,৮৩৯ রান, যেখানে তার গড় ছিল ৫২.৫৮।

টানা এক দশকেরও বেশি সময় ভারতের টেস্ট দলে ‘নম্বর ৩’ পজিশনের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার ছিলেন পুজারা। দেশের মাটিতে হোক বা বিদেশের উইকেটে — অনেক ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তার শেষ টেস্ট ম্যাচ ছিল ২০২৩ সালের জুনে, ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। এরপর যদিও ভারতের শীর্ষ সারির ব্যাটারদের তালিকায় তিনি জায়গা হারান, কিন্তু রঞ্জি ট্রফিতে সৌরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডে সাসেক্সের হয়ে রেড-বল ক্রিকেট খেলতে থাকেন।

২০১২ সালের আগস্টে হায়দরাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন পুজারা। ওই বছরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে করেন তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। মুম্বাই টেস্টে আরেকটি সেঞ্চুরি করেন, যদিও ম্যাচটি বেশি পরিচিত কেভিন পিটারসেনের দারুণ ইনিংসের জন্য।

২০১৩ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রায় ছয় ঘণ্টা ব্যাট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৩ রান করেন পুজারা, যা ছিল এক উত্তেজনাপূর্ণ ড্র হওয়া টেস্টে তার দৃঢ় মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।

২০১৫ সালে কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংস ওপেন করে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। আবার ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে সাউদ্যাম্পটনে এক কঠিন পিচে ১৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন, যেখানে পরের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল কোহলির ৪৬।

রাঁচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭২ মিনিট ও ৫২৫ বল খেলে একটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, যা তার সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের অনন্য উদাহরণ। টেস্ট ক্রিকেটে এমন কীর্তি রয়েছে মাত্র তিন ভারতীয়র — এমএল জয়সিমা, রবি শাস্ত্রী এবং চেতেশ্বর পুজারার; যারা পাঁচ দিনই ব্যাটিং করেছেন এক টেস্টে।

পুজারা ছিলেন ভারতের পরপর দুই অস্ট্রেলিয়া সফরের টেস্ট সিরিজ জয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ২০১৮-১৯ সিরিজে অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন ও সিডনিতে তিনটি সেঞ্চুরি করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি।

এরপর ২০২০-২১ সিরিজে তার দৃঢ়তা ছিল অনন্য — চার টেস্টে ৯২৮টি বল মোকাবিলা করেন, যেখানে প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্কদের মতো বোলারদের সামলাতে গিয়ে অনেকবার শরীরে আঘাতও পান। পার্থ টেস্টে তার ২১১ বল খেলে করা ৫৬ রানের ইনিংস ছিল ভারতের এক স্মরণীয় জয় এনে দেওয়া অবদান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ভারতের সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পূজারা অবসর

প্রকাশের সময় : ০৪:১৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ভারতের টেস্ট ক্রিকেট মানেই একসময় ছিল চেতেশ্বর পূজারা। ধৈর্য, দৃঢ়তা আর অটল মানসিক শক্তির এক অনন্য মিশেল। অবশেষে সেই ব্যাটিং প্রাচীর বিদায় জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। রোববার (২৪ আগস্ট) এক আবেগঘন বার্তায় পূজারা ঘোষণা দেন, আর কখনও ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন না।

২০২৩ সালের জুনে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালই ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর আর ভারতের জার্সি গায়ে নামা হয়নি তার।

অবসরের বার্তায় তাই লিখেছেন, ভারতের জার্সি গায়ে চাপিয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে যতবার মাঠে নেমেছি, সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে যেমন বলা হয়, সব ভালো কিছুরই একদিন শেষ হয়। তাই অপরিসীম কৃতজ্ঞতা নিয়ে আমি ভারতীয় ক্রিকেটে সব সংস্করণ থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

৩৭ বছর বয়সী পুজারা ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ভারতের হয়ে ১০৩টি টেস্ট ও ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। টেস্টে তার রান সংখ্যা ৭,১৯৫, গড় ৪৩.৬০; রয়েছে ১৯টি সেঞ্চুরি ও ৩৫টি হাফ-সেঞ্চুরি। নিজ দেশে তিনি করেছেন ৩,৮৩৯ রান, যেখানে তার গড় ছিল ৫২.৫৮।

টানা এক দশকেরও বেশি সময় ভারতের টেস্ট দলে ‘নম্বর ৩’ পজিশনের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার ছিলেন পুজারা। দেশের মাটিতে হোক বা বিদেশের উইকেটে — অনেক ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তার শেষ টেস্ট ম্যাচ ছিল ২০২৩ সালের জুনে, ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। এরপর যদিও ভারতের শীর্ষ সারির ব্যাটারদের তালিকায় তিনি জায়গা হারান, কিন্তু রঞ্জি ট্রফিতে সৌরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডে সাসেক্সের হয়ে রেড-বল ক্রিকেট খেলতে থাকেন।

২০১২ সালের আগস্টে হায়দরাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন পুজারা। ওই বছরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে করেন তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। মুম্বাই টেস্টে আরেকটি সেঞ্চুরি করেন, যদিও ম্যাচটি বেশি পরিচিত কেভিন পিটারসেনের দারুণ ইনিংসের জন্য।

২০১৩ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রায় ছয় ঘণ্টা ব্যাট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৩ রান করেন পুজারা, যা ছিল এক উত্তেজনাপূর্ণ ড্র হওয়া টেস্টে তার দৃঢ় মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।

২০১৫ সালে কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংস ওপেন করে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। আবার ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে সাউদ্যাম্পটনে এক কঠিন পিচে ১৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন, যেখানে পরের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল কোহলির ৪৬।

রাঁচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭২ মিনিট ও ৫২৫ বল খেলে একটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, যা তার সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের অনন্য উদাহরণ। টেস্ট ক্রিকেটে এমন কীর্তি রয়েছে মাত্র তিন ভারতীয়র — এমএল জয়সিমা, রবি শাস্ত্রী এবং চেতেশ্বর পুজারার; যারা পাঁচ দিনই ব্যাটিং করেছেন এক টেস্টে।

পুজারা ছিলেন ভারতের পরপর দুই অস্ট্রেলিয়া সফরের টেস্ট সিরিজ জয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ২০১৮-১৯ সিরিজে অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন ও সিডনিতে তিনটি সেঞ্চুরি করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি।

এরপর ২০২০-২১ সিরিজে তার দৃঢ়তা ছিল অনন্য — চার টেস্টে ৯২৮টি বল মোকাবিলা করেন, যেখানে প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্কদের মতো বোলারদের সামলাতে গিয়ে অনেকবার শরীরে আঘাতও পান। পার্থ টেস্টে তার ২১১ বল খেলে করা ৫৬ রানের ইনিংস ছিল ভারতের এক স্মরণীয় জয় এনে দেওয়া অবদান।