নিজস্ব প্রতিবেদক :
শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কিনা-জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি অবাক। তিনি (ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী) এ ধরনের কথা কেন বললেন? আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। আমি কোনোভাবে মনে করি না, ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ-বিগ্রহ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি এটা কী তার নিজের দেশের কনজামশানের জন্য বলেছিলেন কিনা-সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আর তিনি যেভাবে বলেছেন, ‘বিটিং অ্যারাউন্ড দ্যা বুশ’ অনেকটা। কারণ, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তো ভারতে যুদ্ধ প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন দেখি না বা হামাসের সঙ্গে যে সমস্যা হয়েছে তাতে করে ভারতের এখানে কী সম্পর্ক?
তিনি বলেন, আর এর সঙ্গে ইউক্রেন ও হামাসের সঙ্গে বাংলাদেশ কি করে তুলনীয় হয় এটাও আমার বোধগম্যতার বাইরে। অপ্রয়োজনীয় হবে এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। আমরা অবশ্যই দেখব যে, তিনি (রাজনাথ সিং) এ রকম কথা কেন বলেছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ইউরোপ ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সামনে রেখে, সেটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে বেশি অবাক। যে উনি (ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং) কেন এ কথা বললেন? আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না।
তিনি বলেন, আমি কোনো অবস্থায়ই মনে করি না ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধবিগ্রহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। উনি এটা তার নিজের দেশের কনজামপশনের জন্য বলেছেন কি না সেটা আমাদের বুঝতে হবে। উনি যেভাবে বলেছেন বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ অনেকটা। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তো ভারতের যুদ্ধের প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন দেখি না। হামাসের সঙ্গে যে সমস্যা হচ্ছে তাতে করেই বা ভারতের কী সম্পর্ক। ইউক্রেন-হামাসের সঙ্গে বাংলাদেশ কী করে তুলনীয় হয় এটাও আমার বোধগম্যের বাইরে। আমি কোনো রি-অ্যাকশন দেখাতে চাই না। আমরা অবশ্যই দেখবো উনি কেন এ কথা বলেছেন।
ভারতকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা বাংলাদেশের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন কিনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এখনো মনে করি উনি (রাজনাথ সিং) এটা নিজস্ব অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হয়তো সচেতনতার জন্য বলেছেন। কাজেই আমি কোনো অনুমান করতে চাই না।
দিল্লির সঙ্গে এ নিয়ে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি এই মুহূর্তে এটা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি বলব এটুকু যোগাযোগ হয়েছে, ওটুকু যোগাযোগ হয়েছে বরং আমি বলেছি, আমরা কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। আমরা অবশ্যই এটা দেখব কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। এটা আমাকে দেখতে হবে। সেটা আমরা দেখব।
ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে সে বিষয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, স্বাভাবিকভাবে যে কোন দেশ যে কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। দেওয়া উচিত কি না, এক্ষেত্রে সেটা দেখার বিষয়, আমরা তা দেখব। রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে প্রতিবাদ জানাবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখা যাক; সেই পরিস্থিতিতে আপনারা তখন প্রশ্ন করলে আমরা উত্তর দিব। আপাতত এটা থাকুক।
১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এবং ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি আমরা আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না। কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছি। বিজিবি প্রতিদিনই ফেরত পাঠাচ্ছে, যাদেরকে আমরা ধরতে পারছি। কিন্তু একটা বড় এলাকা নিয়ে তারা ঢুকছে। সবাইকে যে আমরা ধরতে পারছি সেটি নয়, সামর্থ্যেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা যেখানে পারছি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইউএনএইচসিআর চায় আমরা তাদের আশ্রয় দেই, কিন্তু আমরা তাদের কাছে স্পষ্ট করেছি আমরা যে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের যেটুকু ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি পালন করেছি। যারা আমাদের উপদেশ দিতে চায় তারা বরং তাদেরকে নিয়ে যাক। বিজিবি প্রধানের সঙ্গে আজ বৈঠক হয়েছে। আমরা আরেকটু গভীরভাবে আলোচনা করব।