এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। বাংলাদেশের মানুষও আশায় ছিল। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে সর্বশেষ আপডেটের দিকে নজর ছিল তাদের। বৃটেনের পর ভারতও যখন অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়, তখন সবার ধারণা জন্মে যে সহসাই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসছে। টাকা ছাড়ের কথাও বলা হয়। এসব আশার খবরের মাঝে হঠাৎই খবর এলো ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাতেই বাজ পড়েছে অনেকের মাথায়। তীব্র হতাশা দেখা দিয়েছে গোটা বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই এসে যাবে টিকার ৫০ লাখ ডোজ। এ টিকার তিন কোটি ডোজ পেতে বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল আগেই। কিন্তু অনেকটা আকস্মিকভাবে ভারত সরকার টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো।
আর এ সিদ্ধান্তে হতাশা তৈরি হয়েছে পুরো বাংলাদেশেই। সংবাদ মাধ্যমে খবরটি জানার পর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের ভাষ্য হচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানাতে পারেনি। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কারণে টিকা পেতে সমস্যা হবে না।
তবে একটি সূত্র বলছে, এই বিষয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ এক্সেম্পসন’ বা ছাড় পাবে বলে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে। ভারত সরকারও এই বিষয়ে পূর্বে বাংলাদেশকে অনানুষ্ঠানিকভাবে আশ্বস্ত করেছিল। এক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে ওই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে হবে, যেমনটা যুক্তরাজ্য ও ভারত দিয়েছে। নিবন্ধন বা অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বেক্সিমকো ফার্মা জমা দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ থেকে অনুমোদন পেলেই ভারতের কাছ থেকে এক্সেম্পসনে’র জন্য আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ও ভারতের সিরামের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে চুক্তি হয় নভেম্বরে। তার আগে আগস্টে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে আসেন। ওই সফরেই সিরাম ইন্সটিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশের পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। ওই সফরের পরই মূলত সিরাম-বেক্সিমকো সমঝোতা গতি পায়।
আরও পড়ুন : অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন রপ্তানি নিষিদ্ধ করলো ভারত
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কার্যকারিতা কিছুটা কম হলেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছে। কারণ এটির দাম কিছুটা কম এবং সরবরাহ করা যায় সহজে। এ টিকা পেতে উন্নয়নশীল দেশগুলো সিরাম ইন্সটিটিউটের ওপর নির্ভর করছিল। সিরামের সক্ষমতা রয়েছে বিপুল টিকা উৎপাদনের। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করেছে। আচমকা ভারতীয় কতৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে, সিরাম এখন ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারছে না।
অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন হলেও কোন দেশই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে এরইমধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তাই ভারতীয় কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনৈতিক বলছেন, বিশ্লেষকরা। এছাড়া, বাড়ির পাশের বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ না হলে ভারতে করোনা নিয়ন্ত্রণ কতোটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ভারত অতীতে পিয়াজ রপ্তানি নিয়েও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি। বাংলাদেশেরে যখন প্রয়োজন তখন বারবার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আবার বাংলাদেশের পিয়াজ যখন বাজারে আসে তখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভ্যাকসিন এখন একধরনের মৌলিক প্রয়োজনে পরিনত হয়েছে। সিরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে চুক্তির কারণেই বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করেনি। এখন এ চুক্তি যদি বরখেলাপ করা হয় তা শুধু হতাশাজনক নয়, অমানবিকও বটে।