স্পোর্টস ডেস্ক :
একটা কথা প্রচলন আছে। ফাইনাল খেলতে হয় না, ফাইনাল জিততে হয়। আর সেই কথাই প্রমাণ করলো অস্ট্রেলিয়া। জোড়া হার দিয়ে এবারের আসর শুরু করা দলটাই একমাত্র অপরাজিত থাকা দল স্বাগতিক ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জিতলো নিজেদের করে নিয়েছে অজিরা।
ঘরের মাঠে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে শিরোপা উদযাপনে মাতলো প্যাট কামিন্সের দল। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে কামিন্স বলেছিলেন, ভারতীয় লাখো দর্শককে চুপ করে দেওয়ায় আমাদের লক্ষ্য। সেটাই করে দেখালেন কামিন্সরা।
রোববার (১৯ নভেম্বর) আহমেদবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করে ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয় ভারত। দলের পক্ষে বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৫৪ ও লোকেশ রাহুল ১০৭ বলে ৬৬ রান করেন।
২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওয়ার্নারের ক্যাচ যায় স্লিপ অঞ্চলে। তবে সেখানে থাকা বিরাট কোহলি ও শুভমান গিলের ভুলে সেটি বাউন্ডারি হয়ে যায়। সেই ওভারেই আরো দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৫ রান তুলে দুই অজি ওপেনার। ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১৫ রান তুলে উড়ন্ত সূচনার ইঙ্গিত দেয় ট্রেভিস হেড ও ওয়ার্নার। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ শামির বলে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার ওয়ার্নার।
শামির বলে ডাউন উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ৩ বলে ৭ রান করে ফিরেন ওয়ার্নার। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন মিচেল মার্শ।
তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জাস্প্রিত বুমরার বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন মার্শ। এরপর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি স্টিভেন স্মিথ। বুমরার সপ্তম ওভারে লেগ বি ফোরের ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। দলীয় ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানো অজিরা চতুর্থ উইকেট জুটিতে ম্যাচে ফিরে।
ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন মিলে ইনিংসের ২০ তম ওভারে দলীয় শতরান পূরণ করেন। এরপর ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হন অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড। লাবুশেনকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটীয় শট খেলে স্বাগতিকদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন হেড।
ধারাবাহিক আক্রমণে ৯৫ বলেই বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজের শতক তুলে অনন্য এক কীর্তি গড়েন অজি এই ওপেনার। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও সেবার কেউই শতকের দেখা পায়নি। তবে ১৬ বছর অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে মনে করিয়ে দিয়ে ম্যাচ জয়ী এক শতক হাঁকান হেড।
অজি এই বাঁহাতি ওপেনারের শতকেই ইনিংসের ৩৪তম ওভারে ভারতীয়দের কাঁদিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভীত গড়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। শেষদিকে শতকের পূরণের পর আরো মারমুখী হন হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে অজিদের শিরোপা নিশ্চিত করে শেষদিকে মাঠ ছাড়েন তিনি। হেডের শতকে ৪২ বল হাতে রেখেই ৪৩তম ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতল অজিরা।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন রোহিত শর্মা। তবে ভারতের অধিনায়ককে সঙ্গ দিতে পারেননি শুভমান গিল। মিচেল স্টার্কের শর্ট অব লেন্থ ডেলিভারিতে সামনের পায়ের উপর ভর করে পুল করতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ক্যাচ দেন তিনি। গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৪ রান। দলীয় ৩০ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত।
গিল ফিরে গেলেও রোহিত শার্মার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কোহলির হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিতে সপ্তম ওভারেই পঞ্চাশ পূর্ণ করে ভারত। ইনিংসের অষ্টম ওভারে এসে প্রথমবার আক্রমণে স্পিনার হিসেবে ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আসেন প্যাট কামিন্স।
প্রথম ওভারে সাফল্য না পেলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারে উইকেট এনে দেন ম্যাক্সওয়েল। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা এবং চার মারেন রোহিত। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ফিরে যেতে হয় হেডের দুর্দান্ত ক্যাচে। দারুণ ব্যাটিং করা রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ৪৭ রান।
চার নম্বরে নেমে দ্রুতই ফিরে গেছেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা শ্রেয়াস আইয়ার। কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে জশ ইংলিসের ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন ৪ রান করে। মাত্র ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পর থেমে যায় ভারতের রান তোলার গতি।
এরপর সাবধানী ব্যাটিংয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন রাহুল এবং কোহলি। বাউন্ডারি না পেলেও নিয়মিত সিঙ্গেল নিতে থাকেন তারা দু’জন। স্রোতের বিপরীতে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘কিং’ কোহলি। এদিকে ৯৭ বল পর বাউন্ডারির দেখা পেয়েছে ভারত। হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেন কোহলি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করা কোহলিকে থামান কামিন্স। তাকে বোল্ড করেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে এই জুটিকে থিতু হতে দেননি জশ হ্যাজেলউড। ৯ রান করা জাদেজাকে তিনি উইকেটের পেছনে জশ ইংলিসের ক্যাচ বানিয়েছেন।
রাহুল হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ৬৬ রান করে ফেরেন। তাকে আউট করেন স্টার্ক। এই অজি পেসারের গুড লেন্থের বলে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে আউট সাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। এরপর মোহাম্মদ শামিকেও আউট করেন স্টার্ক। খানিক বাদে অ্যাডাম জাম্পার শিকার হয়ে জসপ্রিত বুমরাহ এলবিডব্লিউ হলে ভারতের ইনিংস আর বেশিদূর এগোতে পারেনি। ভারতের শেষ ভরসা সুরিয়া কুমার যাদব আউট হন মাত্র ১৮ রান করে। ফলে আড়াইশ রানের কোটা পার হতে পারেনি ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন মিচেল স্টার্ক। দু’টি করে উইকেট নেন জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স। একটি করে উইকেট শিকার করেন অ্যাডাম জাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
রেকর্ড শতক হাঁকিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন ট্রাভিস হেড।