Dhaka শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতজুড়ে ইন্ডিগোর শিডিউল বিপর্যয়, একদিনেই রেকর্ড ৫৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো টানা তৃতীয় দিনেও বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যা, খারাপ আবহাওয়া, আকাশপথে ভিড় ও কর্মী সংকটের জেরে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে সংস্থাটি বৃহস্পতিবারই (৪ ডিসেম্বর) ৫৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বিমানবন্দরে ব্যাপক বিলম্বের জেরে শত শত যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, একদিনে ইন্ডিগোর ৫৫০টির বেশি বাতিল ফ্লাইটের মধ্যে শুধু দিল্লি বিমানবন্দরে বাতিল হয়েছে ১৭২টি। এরপর মুম্বাইয়ে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫টি, কলকাতায় ৩৫টি, চেন্নাইয়ে ২৬টি এবং গোয়ায় ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। গতকাল সারাদিনই ভারতীয় বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকেই একই ধরনের বাতিলের খবর এসেছে।

পরে বৃহস্পতিবার রাতে ইন্ডিগো এক বিবৃতিতে এ বিপর্যয়ের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে। টানা দুদিন ধরে নেটওয়ার্কজুড়ে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে বলেও সংস্থাটি জানায়। এক্স-এ দেয়া পোস্টে ইন্ডিগো লিখেছে, ‘গত দুই দিন ধরে আমাদের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সব গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

সংস্থাটি আরও জানায়, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় (এমওসিএ), ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ), নিরাপত্তা সংস্থা বিসিএএস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) ও বিভিন্ন বিমানবন্দর অপারেটরের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। গ্রাহকদের ফ্লাইটের আপডেট নিয়মিত জানতেও অনুরোধ করেছে ইন্ডিগো।

এদিকে ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের কারণে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়েছেন। এই বিপর্যয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ ইন্ডিগোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকের পর কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক বার্তায় ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার যাত্রীকে সেবা দিই। সবার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে চাই। গত কয়েক দিনে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি, এজন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

সিইও আরও জানান, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, সময়সূচির পরিবর্তন, খারাপ আবহাওয়া, আকাশপথে অতিরিক্ত ভিড় এবং নতুন এফডিটিএল নীতিমালা— সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্ডিগো সময়সূচি সংশোধন করেছে এবং আগেই পরিকল্পিত কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে। গত নভেম্বরেই ইন্ডিগো ১ হাজার ২৩২টি ফ্লাইট বাতিল করেছিল এবং বহু ফ্লাইট দীর্ঘসময় বিলম্বে চলেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইন্ডিগো সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তাদের সময়মতো ফ্লাইট ছাড়ার হার গত বুধবার কমে দাঁড়ায় মাত্র ১৯.৭ শতাংশে। গত মঙ্গলবারও এটি ছিল ৩৫ শতাংশ।

ডিজিসিএ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১৭০–২০০টি পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় সংস্থাটি তদন্ত শুরু করেছে এবং ফ্লাইট বাতিল ও দেরির কারণ ব্যাখ্যা করতে ইন্ডিগোকে নির্দেশ দিয়েছে। জবাবে ইন্ডিগো জানায়, বাতিল হওয়া ১ হাজার ২৩২টি ফ্লাইটের মধ্যে ৭৫৫টি বাতিল হয়েছে কর্মী সংকটে, ৯২টি এটিসি–এর ত্রুটির কারণে, ২৫৮টি বিমানবন্দরের বিধিনিষেধে এবং বাকি ১২৭টি অন্যান্য বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে।

এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি জনবল নিয়োগসহ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে ইন্ডিগোকে পরামর্শ দিয়েছে ডিজিসিএ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানের নির্দেশ

ভারতজুড়ে ইন্ডিগোর শিডিউল বিপর্যয়, একদিনেই রেকর্ড ৫৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল

প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো টানা তৃতীয় দিনেও বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যা, খারাপ আবহাওয়া, আকাশপথে ভিড় ও কর্মী সংকটের জেরে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে সংস্থাটি বৃহস্পতিবারই (৪ ডিসেম্বর) ৫৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বিমানবন্দরে ব্যাপক বিলম্বের জেরে শত শত যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, একদিনে ইন্ডিগোর ৫৫০টির বেশি বাতিল ফ্লাইটের মধ্যে শুধু দিল্লি বিমানবন্দরে বাতিল হয়েছে ১৭২টি। এরপর মুম্বাইয়ে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫টি, কলকাতায় ৩৫টি, চেন্নাইয়ে ২৬টি এবং গোয়ায় ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। গতকাল সারাদিনই ভারতীয় বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকেই একই ধরনের বাতিলের খবর এসেছে।

পরে বৃহস্পতিবার রাতে ইন্ডিগো এক বিবৃতিতে এ বিপর্যয়ের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে। টানা দুদিন ধরে নেটওয়ার্কজুড়ে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে বলেও সংস্থাটি জানায়। এক্স-এ দেয়া পোস্টে ইন্ডিগো লিখেছে, ‘গত দুই দিন ধরে আমাদের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সব গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

সংস্থাটি আরও জানায়, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় (এমওসিএ), ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ), নিরাপত্তা সংস্থা বিসিএএস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) ও বিভিন্ন বিমানবন্দর অপারেটরের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। গ্রাহকদের ফ্লাইটের আপডেট নিয়মিত জানতেও অনুরোধ করেছে ইন্ডিগো।

এদিকে ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের কারণে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়েছেন। এই বিপর্যয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ ইন্ডিগোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকের পর কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক বার্তায় ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার যাত্রীকে সেবা দিই। সবার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে চাই। গত কয়েক দিনে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি, এজন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

সিইও আরও জানান, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, সময়সূচির পরিবর্তন, খারাপ আবহাওয়া, আকাশপথে অতিরিক্ত ভিড় এবং নতুন এফডিটিএল নীতিমালা— সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্ডিগো সময়সূচি সংশোধন করেছে এবং আগেই পরিকল্পিত কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে। গত নভেম্বরেই ইন্ডিগো ১ হাজার ২৩২টি ফ্লাইট বাতিল করেছিল এবং বহু ফ্লাইট দীর্ঘসময় বিলম্বে চলেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইন্ডিগো সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তাদের সময়মতো ফ্লাইট ছাড়ার হার গত বুধবার কমে দাঁড়ায় মাত্র ১৯.৭ শতাংশে। গত মঙ্গলবারও এটি ছিল ৩৫ শতাংশ।

ডিজিসিএ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১৭০–২০০টি পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় সংস্থাটি তদন্ত শুরু করেছে এবং ফ্লাইট বাতিল ও দেরির কারণ ব্যাখ্যা করতে ইন্ডিগোকে নির্দেশ দিয়েছে। জবাবে ইন্ডিগো জানায়, বাতিল হওয়া ১ হাজার ২৩২টি ফ্লাইটের মধ্যে ৭৫৫টি বাতিল হয়েছে কর্মী সংকটে, ৯২টি এটিসি–এর ত্রুটির কারণে, ২৫৮টি বিমানবন্দরের বিধিনিষেধে এবং বাকি ১২৭টি অন্যান্য বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে।

এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি জনবল নিয়োগসহ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে ইন্ডিগোকে পরামর্শ দিয়েছে ডিজিসিএ।