স্পোর্টস ডেস্ক :
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ সমতায়। এতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ভারতকে (৩-২) গোলে কাঁদিয়ে শিরোপা উচ্ছ্বাসে মেতেছে সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা।
রোববার কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে ফাইনালে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ভারত। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। গোল শোধে মরিয়া বাংলাদেশ কিছুতেই তা শোধ করতে পারছিল না। ফলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটে মরিয়মের গোলে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়া ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে বাংলাদেশ গোলরক্ষক ইয়ারজান একাই ঠেকিয়ে দেন ভারতের তিনটি শট। সুরভী আকন্দ প্রীতির প্রথম শট নষ্ট হলেও ইয়ারজান সেটা বুঝতেই দেননি। ফিরিয়ে দেন দিবায়ানি, আলিনা দেবী ও বোনিফিলিয়া শুল্লাইয়ের শট। বাংলাদেশ দুটি শট নষ্ট করলেও ইয়ারজানের বীরত্বে সেই আক্ষেপ আর থাকেনি বাংলাদেশের।
টানা চতুর্থবারের মতো একই অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে নামে বাংলাদেশ। একই একাদশ গ্রুপপর্বে খেলেছে ভারতের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষ চেনা হওয়ায় সুযোগটা প্রথমে কাজে লাগিয়েছে ভারতই।
ফাইনালের আগে গ্রুপপর্বে ১১ গোল করেছে বাংলাদেশ। গোল হজম করেছিল মাত্র একটি। সেই একটি গোল করেছিল ভারতই। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচেই আগে গোল করা বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো পিছিয়ে পড়ে ফাইনালে গিয়ে।
ম্যাচের বয়স যখন মাত্র ৪ মিনিট তখনই বাংলাদেশের রক্ষণ চমকে দিয়ে এগিয়ে যায় ভারত। নিজেদের অর্ধ থেকে বোনিফিলিয়া শুল্লাইয়ের লম্বা ক্রস ধরে অফসাইড ফাঁদ ভেঙে বক্সে ঢুকে পড়েন আনুশকা কুমারী। বাঁ পায়ের শটে দূর পোস্ট লক্ষ্য করে নেন শট। তাতেই লক্ষ্যভেদ। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পায়নি বাংলাদেশের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম।
পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফেরার বারংবার চেষ্টা করে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের জমাটে রক্ষণকে কেউই তেমনভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। টুর্নামেন্টে ৫ গোল করা সুরভী আকন্দ প্রীতিকে কড়া পাহাড়ায় রেখেছিল ভারতের রক্ষণ। তাই বারবার বল পাওয়ার পরও ঠিকঠাক শট করতে পারেননি সুরভী।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে টানা দুইটি সেট পিস পায় বাংলাদেশ। ফাতেমা আক্তারের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল প্রথমবারের চেষ্টায় ফেরাতে পারেনি ভারতের গোলরক্ষক কিন্তু জটলার মধ্যে থেকে পরে অবশ্য বিপদ মুক্ত করেন। প্রথমার্ধ শেষে ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধের পর ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা। বলের বেশির ভাগ দখলটা থাকে সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যদের পায়ে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ মরিয়া হয়ে ভারতের রক্ষণে হানা দিতে দিতেই পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত গোল।
৭০ মিনিটে আলপি আক্তারের ফ্রিকিক কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ভারত গোলরক্ষক মুন্নি। সেই কর্নারটাই খুলে দেয় বাংলাদেশের গোলের দুয়ার। পরের মিনিটে অনন্যা মুর্মু বীথির নেওয়া কর্নার শট থেকে বলে ছোঁয়া লাগিয়ে দলকে সমতায় ফেরান ডিফেন্ডার মরিয়ম বিনতে হান্না।
সমতায় ফেরার পর আক্রমণে প্রাণ ফেরে বাংলাদেশের। সুরভী-আলপিরা চেষ্টা করে গেছেন ভারতের জালে আরেকবার বল জড়াতে। কিন্তু শেষ ২০ মিনিটে বলার মতো কোনো আক্রমণ গড়তে পারেনি কোনো দলই। শিরোপার নিষ্পত্তি গড়ায় টাইব্রেকারে। আর ভাগ্যের পরীক্ষায় বাংলাদেশকে জিতিয়ে শিরোপা এনে দেন গোলরক্ষক ইয়ারজান। টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন লাল-সবুজ ফরোয়ার্ড সুরভী আকন্দ প্রীতি।