Dhaka রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতকে উড়িয়ে যুব এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৯৪ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

বৈভব সূর্যবংশীসহ ভারতের অন্য ক্রিকেটাররা ডাগআউটে মাথা নিচু করে বসে আছেন। ভারতের কোচিং স্টাফদের চোখেমুখেও দেখা গেছে হতাশা। যতই ব্যাটিংবান্ধব পিচ হোক, হাতে ১ উইকেট নিয়ে ২০০-এর বেশি রান করা একরকম অসম্ভবই বটে। দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভারতকে বিধ্বস্ত করে হেসেখেলে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভারতের টেলএন্ডার ব্যাটার হেনিল প্যাটেল ফেরার পর পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানিদের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন দীপেশ দেবেন্দ্রন। ভারতের এই পেসার একের পর এক চার-ছক্কা মেরে শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন। তাঁকে ফিরিয়েই পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে ২০২৫ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরো পাকিস্তান ডাগআউট উল্লাসে ফেটে পড়ে। সতীর্থদের ঘাড়ে চড়েও ক্রিকেটারদের অনেকে মেতেছেন শিরোপা জয়ের আনন্দে।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা পাকিস্তান এর আগে একবারই জিতেছিল। ২০১২ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ১৩ বছর পর এবার আর শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়নি ভারত-পাকিস্তানকে। দুবাইয়ে আইসিসি একাডেমি মাঠে ভারতকে ১৯১ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে ৩৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে বিস্ফোরক শুরু করে ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা আলী রাজাকে পিটিয়ে ২১ রান নিয়েছে ভারত। যার মধ্যে ২ ছক্কা ও ১ চারে একাই ১৮ রান নেন সূর্যবংশী। ব্যক্তিগত ২৪ রানে একবার তিনি জীবনও পেয়েছেন। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সায়েমকে উড়িয়ে মারতে যান সূর্যবংশী। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে দৌড়ে এসেও বলের নাগাল পাননি আলী রাজা।

সূর্যবংশীর ক্যাচ মিসের পর হয়তো মনে হচ্ছিল, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে যদি তিনি ভারতকে জিতিয়ে দেন। তবে পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে চোখে রীতিমতো সর্ষেফুল দেখেছে ভারত। ২.২ ওভারে ১ উইকেটে ৩২ রান থেকে ২৩.২ ওভারে ৯ উইকেটে ১২০ রানে পরিণত হয় আয়ুশ মাত্রের নেতৃত্বাধীন ভারত। ২৪ রানে বেঁচে যাওয়া সূর্যবংশী আউট হয়েছেন ২৬ রানে।

ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি হয়েছে দশম উইকেটেই। কিশান সিং ও দীপেশ দেবেন্দ্রন ১৮ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দেবেন্দ্রনকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসের ইতি টেনেছেন পাকিস্তানি পেসার আলী রাজা। ১৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় দেবেন্দ্রনের ৩৬ রানই ভারতের ইনিংস সর্বোচ্চ রান। আয়ুশ মাত্রের দল ২৬.২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়। পাকিস্তানের আলী রাজা নিয়েছেন ৪ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সায়েম, আবদুল সুবহান ও হুজাইফা হাসান।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক আয়ুষ মাথ্রে। তবে সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল প্রমাণিত হলো, তা শুরু থেকেই বুঝিয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা, বিশেষ করে সামীর মিনহাস।

ইনিংসের শুরুটা মোটামুটি ভালোই ছিল পাকিস্তানের। ওপেনিং জুটিতে মিনহাস ও হামজা জাহুর যোগ করেন ৩১ রান। তবে চতুর্থ ওভারে হেনিল প্যাটেলের বলে ১৮ রান করে ফিরেন হামজা। এরপর উসমান খানকে নিয়ে ইনিংসের রাশ টেনে ধরেন মিনহাস। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৭৯ বলে ৯২ রানের দ্রুত জুটি গড়ে পাকিস্তানকে শক্ত ভিত দেন তারা। ১৭তম ওভারে খিলান প্যাটেলের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন উসমান খান। ৪৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

এরপর শুরু হয় ইনিংসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তৃতীয় উইকেটে আহমেদ হুসাইনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩৭ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়েন মিনহাস। ৭৩ বলে ৫৬ রান করেন আহমেদ, তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কা। পাকিস্তান অধিনায়ক ফারহান ইউসুফের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে মিনহাস যোগ করেন আরও ৪২ রান। ৪৩তম ওভারের শেষ বলে দীপেশ দেবেন্দ্রনের শিকার হন মিনহাস।

আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন ১১৩ বলে ১৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস। ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কায়। এই ইনিংসই কার্যত পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যায়। মিনহাস আউট হওয়ার পর হঠাৎই ধস নামে পাকিস্তানের ইনিংসে। অধিনায়ক ফারহান ইউসুফসহ দ্রুত আরও চারটি উইকেট হারায় দল। এক পর্যায়ে স্কোর নেমে আসে ৪৬.৪ ওভারে ৩২৭/৮-এ।

শেষ দিকে অবশ্য কিছুটা সামলে নেন মোহাম্মদ সাইয়াম ও নিখাব শাফিক। তারা দুজনই অপরাজিত থেকে যথাক্রমে ১৩ ও ১২ রান যোগ করেন, যার ফলে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৩৪৭ রানে পৌঁছায়। ভারতের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন দীপেশ দেবেন্দ্রন। তিনি ১০ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। এছাড়া হেনিল প্যাটেল ও খিলান প্যাটেল নেন দুটি করে উইকেট, আর একটি উইকেট পান কানিষ্ক চৌহান।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

৪ বছর ধরে বন্ধ মূল সেতুর নির্মাণ কাজ, বিকল্প সাঁকোটিও চলাচলের অনুপযোগী

ভারতকে উড়িয়ে যুব এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক : 

বৈভব সূর্যবংশীসহ ভারতের অন্য ক্রিকেটাররা ডাগআউটে মাথা নিচু করে বসে আছেন। ভারতের কোচিং স্টাফদের চোখেমুখেও দেখা গেছে হতাশা। যতই ব্যাটিংবান্ধব পিচ হোক, হাতে ১ উইকেট নিয়ে ২০০-এর বেশি রান করা একরকম অসম্ভবই বটে। দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভারতকে বিধ্বস্ত করে হেসেখেলে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভারতের টেলএন্ডার ব্যাটার হেনিল প্যাটেল ফেরার পর পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানিদের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন দীপেশ দেবেন্দ্রন। ভারতের এই পেসার একের পর এক চার-ছক্কা মেরে শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন। তাঁকে ফিরিয়েই পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে ২০২৫ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরো পাকিস্তান ডাগআউট উল্লাসে ফেটে পড়ে। সতীর্থদের ঘাড়ে চড়েও ক্রিকেটারদের অনেকে মেতেছেন শিরোপা জয়ের আনন্দে।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা পাকিস্তান এর আগে একবারই জিতেছিল। ২০১২ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ১৩ বছর পর এবার আর শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়নি ভারত-পাকিস্তানকে। দুবাইয়ে আইসিসি একাডেমি মাঠে ভারতকে ১৯১ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে ৩৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে বিস্ফোরক শুরু করে ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা আলী রাজাকে পিটিয়ে ২১ রান নিয়েছে ভারত। যার মধ্যে ২ ছক্কা ও ১ চারে একাই ১৮ রান নেন সূর্যবংশী। ব্যক্তিগত ২৪ রানে একবার তিনি জীবনও পেয়েছেন। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সায়েমকে উড়িয়ে মারতে যান সূর্যবংশী। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে দৌড়ে এসেও বলের নাগাল পাননি আলী রাজা।

সূর্যবংশীর ক্যাচ মিসের পর হয়তো মনে হচ্ছিল, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে যদি তিনি ভারতকে জিতিয়ে দেন। তবে পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে চোখে রীতিমতো সর্ষেফুল দেখেছে ভারত। ২.২ ওভারে ১ উইকেটে ৩২ রান থেকে ২৩.২ ওভারে ৯ উইকেটে ১২০ রানে পরিণত হয় আয়ুশ মাত্রের নেতৃত্বাধীন ভারত। ২৪ রানে বেঁচে যাওয়া সূর্যবংশী আউট হয়েছেন ২৬ রানে।

ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি হয়েছে দশম উইকেটেই। কিশান সিং ও দীপেশ দেবেন্দ্রন ১৮ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দেবেন্দ্রনকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসের ইতি টেনেছেন পাকিস্তানি পেসার আলী রাজা। ১৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় দেবেন্দ্রনের ৩৬ রানই ভারতের ইনিংস সর্বোচ্চ রান। আয়ুশ মাত্রের দল ২৬.২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়। পাকিস্তানের আলী রাজা নিয়েছেন ৪ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সায়েম, আবদুল সুবহান ও হুজাইফা হাসান।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক আয়ুষ মাথ্রে। তবে সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল প্রমাণিত হলো, তা শুরু থেকেই বুঝিয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা, বিশেষ করে সামীর মিনহাস।

ইনিংসের শুরুটা মোটামুটি ভালোই ছিল পাকিস্তানের। ওপেনিং জুটিতে মিনহাস ও হামজা জাহুর যোগ করেন ৩১ রান। তবে চতুর্থ ওভারে হেনিল প্যাটেলের বলে ১৮ রান করে ফিরেন হামজা। এরপর উসমান খানকে নিয়ে ইনিংসের রাশ টেনে ধরেন মিনহাস। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৭৯ বলে ৯২ রানের দ্রুত জুটি গড়ে পাকিস্তানকে শক্ত ভিত দেন তারা। ১৭তম ওভারে খিলান প্যাটেলের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন উসমান খান। ৪৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

এরপর শুরু হয় ইনিংসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তৃতীয় উইকেটে আহমেদ হুসাইনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩৭ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়েন মিনহাস। ৭৩ বলে ৫৬ রান করেন আহমেদ, তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কা। পাকিস্তান অধিনায়ক ফারহান ইউসুফের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে মিনহাস যোগ করেন আরও ৪২ রান। ৪৩তম ওভারের শেষ বলে দীপেশ দেবেন্দ্রনের শিকার হন মিনহাস।

আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন ১১৩ বলে ১৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস। ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কায়। এই ইনিংসই কার্যত পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যায়। মিনহাস আউট হওয়ার পর হঠাৎই ধস নামে পাকিস্তানের ইনিংসে। অধিনায়ক ফারহান ইউসুফসহ দ্রুত আরও চারটি উইকেট হারায় দল। এক পর্যায়ে স্কোর নেমে আসে ৪৬.৪ ওভারে ৩২৭/৮-এ।

শেষ দিকে অবশ্য কিছুটা সামলে নেন মোহাম্মদ সাইয়াম ও নিখাব শাফিক। তারা দুজনই অপরাজিত থেকে যথাক্রমে ১৩ ও ১২ রান যোগ করেন, যার ফলে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৩৪৭ রানে পৌঁছায়। ভারতের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন দীপেশ দেবেন্দ্রন। তিনি ১০ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। এছাড়া হেনিল প্যাটেল ও খিলান প্যাটেল নেন দুটি করে উইকেট, আর একটি উইকেট পান কানিষ্ক চৌহান।