Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সহিংসতা প্রতিহত করতে হবে: কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর তত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অপশক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায় বিএনপি। এজন্য সতর্কতা প্রয়োজন। যেকোনো উপায়ে সহিংসতা প্রতিহত করতে হবে।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা করে কি না, মানুষ ভয় পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে গণতন্ত্র ব্যাহত হতে দেব না- এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বারবার অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া উচিত না। এই অপশক্তির চিরতরে অবসান ঘটাতে হবে।

বিএনপি অশান্তি করতে চায় মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, আগামীকালও শান্তি সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব?

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদেরকে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তাদের (বিএনপি) দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িকতাসহ তাদের অশুভ খেলার পরিকল্পনা আছে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমাদেরকে অপমান করেছে। আমাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তারপরেও আমরা পথ ছাড়বো না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশ করে দেখিয়ে দেবো, আমরা অশান্তির বিরুদ্ধে।

তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচন চাই শান্তিপূর্ণ। কাজেই অশান্তি আমরা করতে চাই না। অশান্তি কারা চায়? যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, যারা দেশের নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অপচেষ্টার বিরুদ্ধে যে চ্যালেঞ্জ তারা নিচ্ছে, আমাদের তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। দেশ স্বাধীনতার আদর্শ অনুযায়ী চলবে নাকি ‘৪৭-এর দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে চলবে?

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা মরতে হলেও মরবো, তবুও মাঠ ছাড়বো না। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটাতে জিততে পারবো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।

২৮ অক্টোবর নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো চাপে আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো চাপে নেই, তবে পুরনো দিনের কথা ভুলতে পারি না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনো চাপে নেই, তবে পুরনো দিনের কথা ভুলতে পারি না। ২০১৩, ১৪ সালের অগ্নিসংযোগের কথা ভুলতে পারি না। তারাতো আগুন ছাড়া কথা বলে না। শান্তি তারা আসলে মন থেকে চায় কিনা, এটা দেখতে হবে।

নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত বক্তব্যে গোটা নির্বাচন নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। একটা বিষয়ে একেকজন একেক ধরনের মতামত দিতে পারে। কিন্তু একটা ইস্যুর মতামত নিয়ে পুরো নির্বাচন নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন হবে না, এমন সন্দেহ কী তারা করেছে? করেনি। আগে পরের বক্তব্য দেখেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে, কোনো সংশয়ের কারণ নেই। আপনারাতো বাইরের কেউ না দেশেরই মানুষ, আপনারা দেখবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুলের সব খেলা ধরে ফেলি। কী করবে, টেমস নদীর পাড় থেকে ধমক খায়। মাঝে মধ্যে নার্ভাস দেখা যায়।

তিনি বলেন, বিএনপির কর্মী হত্যা মামলায় খোকন গ্রেফতার। অথচ অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার। তাহলে কী আপনাদের কর্মী হত্যার বিচার হবে না? এ ক্ষেত্রে সরকারতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেয়নি। আপনিতো টেনেটুনে ২২ জনের নাম বলেছেন। আর আপনারা আমাদের ২২ হাজার নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছেন, আমরা ভুলিনি।

ওবায়দুল কাদের দাবি করে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের মঞ্চ করতে দেয়নি। মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করেছে, সরকার নাকি আমাদের অনুমতি দিয়েছে, মঞ্চ করছি। আমরা কিছুটা করেছিলাম, পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ যখন অনুমতি দেবে, আমরা তখনই মঞ্চ করবো।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও পরিশীলিত। এটা আমরা বিদেশী কূটনীতিকদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। যার কারণে নিজেদের ক্ষুধার আগুন নেভাতে মরণ কামড় দেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাস হলো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, ও স্বৈরশাসনের ইতিহাস। ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও হত্যা ধর্ষণের এবং দুর্নীতির ইতিহাস। বার বার বিশ্বে বাংলাদেশকে কালেমালেপন করেছে। দুর্নীতি করে নিজের আখের গোছায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তি উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে একটি চিহ্নিত মহল সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে। বিএনপি জামায়তের নেতৃত্বে দেশি বিদেশি মহল আবারও দেশে নৈরাজ্য করতে চায়।

কাদের বলেন, আপনাদের মনে আছে, এরাই ২০১৩, ২০১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসংযোগ ও মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রধান অন্তরায়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আইআরআই জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে দেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কোনো কিছুই ব্যাহত হতে দেবে না।

সভা-সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করছেন দাবি করে কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার সভা সমাবেশ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।

কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলকে কথা নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবকিছুতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুঁজে নির্বাচনের আগে এবং পরেও। আওয়ামী লীগের কথায় কাজে মিল রয়েছে কি না, সেটাই বিষয়; ফখরুল কী বলছে না বলছে সেটা বিষয় নয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের কার্যকলাপ, তাদের মুখের ভাষা, প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠানোর ঘোষণা দেয় তারা, যে দল ‘৭৫-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার- শ্লোগান দেয়, তারা কখনও দেশের উন্নয়ন চাইতে পারে না। তাই এই অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। এই অপশক্তিকে চিরতরে অবসান করতে হবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হবে, রাজপথে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। কিন্তু মানুষ তাদের ভয় পাচ্ছে। কারণ তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মানুষ তাই মনে করছে, আবার ‘১৪ সালের মতো তারা (বিএনপি নেতাকর্মী) নাশকতা করবে কিনা। সেজন্য আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নেতারা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিসর্জন দিতে দেবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অনির্বাচিতদের হাতে কোনোভাবেই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি না আমরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা কখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন? বড় বড় কথা বলবেন না। তালিকাটা তৈরি করেন। তারা ডাহা মিথ্যা কথা সাজাচ্ছে। মির্জা ফখরুল আজকে ডাহা মিথ্যাচার করেছে, তিনি বলেছেন, বিএনপিকে নাকি মঞ্চ তৈরি করতে দেওয়া হয় না। আপনারা আসেন, দেখে যান।

তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই নিজে নিজের দায়িত্ব নেবেন। এ যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা আমাদের বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী আমরা করতে পারবো। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি নেতাদের আস্ফালন প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছিলাম। আর বিএনপি তা বিতর্কিত করেছে। ২০০১ সালে এবং ২০০৬ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করিনি। বাতিল করেছেন আদালত। বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের কচুকাটা করেননি, বরং বিএনপি সংবিধানকে কচুকাটা করেছে, ছিন্নভিন্ন করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকা মানে আমাদের দেশকে ছোট করা, দেশের অর্জনকে ছোট করা।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমাদের অপমান করেছে। আমাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তার পরও আমরা পথ ছাড়ব না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশ করে দেখিয়ে দেব, আমরা অশান্তির বিরুদ্ধে।

নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক সেই সময় যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চায়, তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মো. ফারুক খান, শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সহিংসতা প্রতিহত করতে হবে: কাদের

প্রকাশের সময় : ০৭:২৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর তত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অপশক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায় বিএনপি। এজন্য সতর্কতা প্রয়োজন। যেকোনো উপায়ে সহিংসতা প্রতিহত করতে হবে।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা করে কি না, মানুষ ভয় পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে গণতন্ত্র ব্যাহত হতে দেব না- এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বারবার অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া উচিত না। এই অপশক্তির চিরতরে অবসান ঘটাতে হবে।

বিএনপি অশান্তি করতে চায় মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, আগামীকালও শান্তি সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব?

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদেরকে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তাদের (বিএনপি) দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িকতাসহ তাদের অশুভ খেলার পরিকল্পনা আছে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমাদেরকে অপমান করেছে। আমাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তারপরেও আমরা পথ ছাড়বো না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশ করে দেখিয়ে দেবো, আমরা অশান্তির বিরুদ্ধে।

তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচন চাই শান্তিপূর্ণ। কাজেই অশান্তি আমরা করতে চাই না। অশান্তি কারা চায়? যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, যারা দেশের নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অপচেষ্টার বিরুদ্ধে যে চ্যালেঞ্জ তারা নিচ্ছে, আমাদের তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। দেশ স্বাধীনতার আদর্শ অনুযায়ী চলবে নাকি ‘৪৭-এর দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে চলবে?

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা মরতে হলেও মরবো, তবুও মাঠ ছাড়বো না। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটাতে জিততে পারবো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।

২৮ অক্টোবর নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো চাপে আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো চাপে নেই, তবে পুরনো দিনের কথা ভুলতে পারি না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনো চাপে নেই, তবে পুরনো দিনের কথা ভুলতে পারি না। ২০১৩, ১৪ সালের অগ্নিসংযোগের কথা ভুলতে পারি না। তারাতো আগুন ছাড়া কথা বলে না। শান্তি তারা আসলে মন থেকে চায় কিনা, এটা দেখতে হবে।

নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত বক্তব্যে গোটা নির্বাচন নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। একটা বিষয়ে একেকজন একেক ধরনের মতামত দিতে পারে। কিন্তু একটা ইস্যুর মতামত নিয়ে পুরো নির্বাচন নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন হবে না, এমন সন্দেহ কী তারা করেছে? করেনি। আগে পরের বক্তব্য দেখেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে, কোনো সংশয়ের কারণ নেই। আপনারাতো বাইরের কেউ না দেশেরই মানুষ, আপনারা দেখবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুলের সব খেলা ধরে ফেলি। কী করবে, টেমস নদীর পাড় থেকে ধমক খায়। মাঝে মধ্যে নার্ভাস দেখা যায়।

তিনি বলেন, বিএনপির কর্মী হত্যা মামলায় খোকন গ্রেফতার। অথচ অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার। তাহলে কী আপনাদের কর্মী হত্যার বিচার হবে না? এ ক্ষেত্রে সরকারতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেয়নি। আপনিতো টেনেটুনে ২২ জনের নাম বলেছেন। আর আপনারা আমাদের ২২ হাজার নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছেন, আমরা ভুলিনি।

ওবায়দুল কাদের দাবি করে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের মঞ্চ করতে দেয়নি। মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করেছে, সরকার নাকি আমাদের অনুমতি দিয়েছে, মঞ্চ করছি। আমরা কিছুটা করেছিলাম, পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ যখন অনুমতি দেবে, আমরা তখনই মঞ্চ করবো।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও পরিশীলিত। এটা আমরা বিদেশী কূটনীতিকদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। যার কারণে নিজেদের ক্ষুধার আগুন নেভাতে মরণ কামড় দেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাস হলো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, ও স্বৈরশাসনের ইতিহাস। ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও হত্যা ধর্ষণের এবং দুর্নীতির ইতিহাস। বার বার বিশ্বে বাংলাদেশকে কালেমালেপন করেছে। দুর্নীতি করে নিজের আখের গোছায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তি উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে একটি চিহ্নিত মহল সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে। বিএনপি জামায়তের নেতৃত্বে দেশি বিদেশি মহল আবারও দেশে নৈরাজ্য করতে চায়।

কাদের বলেন, আপনাদের মনে আছে, এরাই ২০১৩, ২০১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসংযোগ ও মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রধান অন্তরায়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আইআরআই জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে দেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কোনো কিছুই ব্যাহত হতে দেবে না।

সভা-সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করছেন দাবি করে কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার সভা সমাবেশ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।

কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলকে কথা নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবকিছুতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুঁজে নির্বাচনের আগে এবং পরেও। আওয়ামী লীগের কথায় কাজে মিল রয়েছে কি না, সেটাই বিষয়; ফখরুল কী বলছে না বলছে সেটা বিষয় নয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের কার্যকলাপ, তাদের মুখের ভাষা, প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠানোর ঘোষণা দেয় তারা, যে দল ‘৭৫-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার- শ্লোগান দেয়, তারা কখনও দেশের উন্নয়ন চাইতে পারে না। তাই এই অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। এই অপশক্তিকে চিরতরে অবসান করতে হবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হবে, রাজপথে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। কিন্তু মানুষ তাদের ভয় পাচ্ছে। কারণ তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মানুষ তাই মনে করছে, আবার ‘১৪ সালের মতো তারা (বিএনপি নেতাকর্মী) নাশকতা করবে কিনা। সেজন্য আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নেতারা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিসর্জন দিতে দেবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অনির্বাচিতদের হাতে কোনোভাবেই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি না আমরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা কখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন? বড় বড় কথা বলবেন না। তালিকাটা তৈরি করেন। তারা ডাহা মিথ্যা কথা সাজাচ্ছে। মির্জা ফখরুল আজকে ডাহা মিথ্যাচার করেছে, তিনি বলেছেন, বিএনপিকে নাকি মঞ্চ তৈরি করতে দেওয়া হয় না। আপনারা আসেন, দেখে যান।

তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই নিজে নিজের দায়িত্ব নেবেন। এ যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা আমাদের বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী আমরা করতে পারবো। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি নেতাদের আস্ফালন প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছিলাম। আর বিএনপি তা বিতর্কিত করেছে। ২০০১ সালে এবং ২০০৬ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করিনি। বাতিল করেছেন আদালত। বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের কচুকাটা করেননি, বরং বিএনপি সংবিধানকে কচুকাটা করেছে, ছিন্নভিন্ন করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকা মানে আমাদের দেশকে ছোট করা, দেশের অর্জনকে ছোট করা।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমাদের অপমান করেছে। আমাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তার পরও আমরা পথ ছাড়ব না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশ করে দেখিয়ে দেব, আমরা অশান্তির বিরুদ্ধে।

নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক সেই সময় যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চায়, তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মো. ফারুক খান, শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন প্রমুখ।