নিজস্ব প্রতিবেদক 
নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেভাবে পরিবর্তনের ধারা সূচনা করতে হবে। কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলাদেশকে একটি আদর্শ জায়গা বলে বিবেচনা করতে পারবে। এ দেশের জনগণকে বা তরুণ প্রজন্মকে যেন আর কখনও তার অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিতে না হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় লাখ লাখ মানুষ যে প্রতিরোধ রচনা করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন, এটা তাদের সুস্পষ্ট বার্তা আমাদের কাছে, যেন পরবর্তী প্রজন্মে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের তরুণ ও নাগরিকদের এভাবে পথে নেমে প্রাণ দিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না হয়। আমরা সবাই মিলে সেই চেষ্টা করছি। আশা করি, রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলো এক জায়গায় আসতে পারব। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ জায়গায় অনুঘটকের কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এ ঐক্যের জায়গায় আসতে হবে, জনগণকে এ ঐক্যের জায়গায় থাকতে হবে তবেই এটা অর্জন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও শক্তির লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে যেন এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি, যা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত করবে।
আলী রীয়াজ বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একটিই লক্ষ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেন গুম, খুনের শিকার হতে না হয়। নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকে, যেন জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকে, যেন এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী বা যা-ই হোন না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে না যান এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত না হন। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছি।
আলী রীয়াজ বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে ছিলাম, সেইভাবে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তনের ধারা সূচনা করতে পারব। কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলাদেশকে আদর্শ জায়গা বলে বিবেচনা করবে। এটা গত ৫৩ বছর ধরে মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং গত ১৬ বছর ধরে সংগ্রাম। যে সংগ্রামে প্রচুর মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন।
সকলের ঐকমত্যে ভবিষ্যত বাংলাদেশের একটি পথরেখা তৈরির আশাবাদ ব্যক্ত করে সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা সকলেই চেষ্টা করছি একমত হয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে যা ভবিষ্যত বাংলাদেশের পথরেখা নির্দেশ করবে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে কমিশন অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। মূলত, রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং জনগণকে ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে হবে, তবেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত আছেন-কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
আলোচনায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর নেতৃত্বে দলটির মহাসচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুল কাদের, পারভীন নাসের খান ভাসানী এবং আমিনুল ইসলাম সেলিমসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
