নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভবিষ্যতে কেউ টাকা পাচার করলে ধরা পড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যানসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে কেউ টাকা পাচার করলে ধরা পড়বে। প্রাইভেট কিংবা পাবলিক সেক্টর যেই হোক ধরা পড়বে। অর্থনৈতিক খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ হচ্ছে। অর্থনীতিতে শুধু উন্নয়ন দেখানোর যে প্রবণতা, সেই উন্নয়ন কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। রাজস্ব খাতে পলিসি আর ইমপ্লিমেন্টশন আলাদা করা হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অনেক প্রকল্প করা হয়েছে, ফিজিবিলিটি টেস্ট করা হয়নি। আদানির বিষয়ে কোনো করই দেওয়া হয়নি। আদানিকে টাকা দেওয়ার জন্য সময় নেওয়া হয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে মাল্টিলেটারাল, বাইলেটারাল সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশি সহযোগীরাও সহায়তা কমিয়ে দেবে।
উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ হচ্ছে। অর্থনীতিতে শুধু উন্নয়ন দেখানোর যে প্রবণতা, সেই উন্নয়ন কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
রাজস্ব খাতে পলিসি আর ইমপ্লিমেন্টশন আলাদা করা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অনেক প্রকল্প করা হয়েছে, ফিজিবিলিটি টেস্ট করা হয়নি। সংস্কারের ক্ষেত্রে মাল্টিলেটারাল, বাইলেটারাল সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে, বিদেশি সহযোগীরাও সহায়তা কমিয়ে দেবে বলেও জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাবেক গভর্নর ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন। কারণ ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনোই কাজ হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন মহানন্দে ঘুমিয়ে আছেন।
তিনি বলেন, সবাই বলছে এত কিছু করার পরও মূল্যস্ফীতি কেন কমছে না। এর প্রধান কারণ, আগের সরকারের ভুল নীতি। গত ১৫ বছরে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার স্বল্প মেয়াদি সংস্কার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রায় কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত পুরো অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আমরা একটি নতুন রাস্তা তৈরি করছি। পরবর্তীতে যারা আসবে তাদেরকে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হবে। তাহলেই শান্তি ফিরে আসবে। আর যদি পুনরায় দুর্নীতি শুরু করেন তাহলে জনগণ আবারো ফুঁসে উঠতে পারে।
তথ্যগত বিশ্বস্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, এতদিন বিবিএসসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য দিয়ে এসেছে সেগুলোতে প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তথ্য প্রবাহ সঠিক রাখতে। সঠিক তথ্য না আসলে অন্যান্য তথ্যগুলো ভুল আসবে।
নীতিমালা প্রণয়ন ঠিক হবে না। এতদিন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না বলে এই সমস্যাগুলো হয়েছে। কোনো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেই সে বলে এই দুর্নীতি আমার আমলে ঘটেনি। আবার সে চলে গেলে পরের কর্মকর্তা এসেও একই উত্তর দেয়। এসব কারণেই একের পর এক দুর্নীতি ও অন্যায় হয়েছে, যার মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ।
ফিজিবিলিটি টেস্ট না করেই অনেক প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একটি প্রজেক্ট থেকে কত টাকা আয় হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, কত দিন সময় লাগবে এবং এসব প্রজেক্টে বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদের হার কী হবে, এসব বিষয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরই একটি সংস্থা আমাদেরকে উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ উচ্চ সুদের ঋণ নিলে আমরা পরিশোধ করতে পারব না।
সদ্য সাবেক গভর্নরের ওপর শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেন, উইথ ডিউ রেসপেক্ট আমি বলতে চাই, সাবেক গভর্নর ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন। কারণ ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনোই কাজ হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন মহানন্দে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানি না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পলিসিগত লিগ্যাসি বা নীতিগত দীর্ঘসূত্রিতা পেয়েছি। যার কারণে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেই দ্রুত করা যায় না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য তোমরা আন্দোলন করেছ। সেই সাহসিকতার জন্য তোমাদেরকে শুভেচ্ছা। কিন্তু পড়াশোনাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ অন্যজনকে ধাক্কা দিয়ে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হলে কোনো লাভ নেই। এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক তার নিজের গাড়ি গাড়ি উপভোগ করতে পারছে না। তোমরা যদি সুশিক্ষা অর্জন করতে পার তাহলে সেই সম্পদ কেউ লুট করতে পারবে না। আমরাও ছাত্র জীবনে অনেক কিছু করেছি। কিন্তু পড়াশোনাটা ভালোভাবে করেছিলাম বলে একটা ভালো চাকরি পেয়েছিলাম। তোমাদেরকেও বলতে চাই, চাকরি জীবনে সাহসের সাথে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে সালেহ উদ্দিন বলেন, গত ১৫ বছরে যত কিছু হয়েছে তা তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জানত। গভর্নর যা কিছু করেছে তার সবকিছু সমর্থন করে না এমন কেউ কি ছিল না প্রতিবাদ করার মতো? সাহসের সাথে সত্য কথা বললে চাকরি যায় না। কারণ আমিও সরকারের চাপ থাকা সত্ত্বেও গভর্নর থাকাকালীন অবস্থায় ব্যাংকের অনুমোদন দেইনি। কিছু সমস্যাতে পড়তে হয়েছে। কিন্তু চাকরি যায়নি। তাই তোমাদের উদ্দেশে বলতে চাই সাহসের সাথে কাজ করবে।
অর্থনীতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি অর্থনৈতিক ক্রাইসিস বা সংকট বলতে চাই না। ২০০৬ বা ২০০৭ সালে যেমনটা (অর্থনৈতিক সংকট) ছিল। এই পরিস্থিতিকে আমি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বলতে চাই। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভুলের কারণে এখন এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। এখান থেকে উত্তরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হোসেন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ।