সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ভিসামুক্ত সম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেটে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত প্রতিদিন শুধু ঢাকা থেকে পাঁচ হাজার ভিসা ইস্যু করে। আর আমেরিকার ভিসার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট নিতেই বছর লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ভারত আমাদের অনেক সুবিধা দিচ্ছে। তারা চিন্তা করছে এই সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায়। আমি বলেছি, অদূর ভবিষ্যতে ভিসামুক্ত ভারত-বাংলাদেশ চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের ক্রিটিকাল ইস্যুগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করেছি। আমাদের দেশের উন্নয়নের সঙ্গে ভারতবর্ষেও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। আবার ভারতবর্ষের সঙ্গে আমাদের দেশেও অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের দেশের বহু লোক ভারতে ব্যবসার জন্য যান। ভারতেরও প্রায় পাঁচ লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করছেন। তারা বিভিন্নভাবে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন, তাদের দেশেও টাকা পাঠাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি একবার গুয়াহাটিতে গিয়েছিলাম। সেখানকার চিফ মিনিস্টার আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন। আমি জানতে চাইলাম কেন এত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। তিনি বললেন আমাদের মেঘালয় ও আসাম এই প্রদেশগুলো অত্যন্ত রিচ ও পটেনশিয়াল। কিন্তু কেউ এখানে বিনিয়োগ করত না, ভয় করত। সন্ত্রাসের আতঙ্ক ছিল এখানে। শেখ হাসিনার সরকার আসার পর তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করায় এখানে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস বেড়েছে, আস্থা বেড়েছে। এখন আসামে প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে ভারতে ভ্রমণ করেন। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস প্রতিদিন পাঁচ থেকে ৯ হাজার ভিসা ইস্যু করে। কিন্তু আমাদের এর চেয়ে বহু বহুগুণ বেশি মানুষ ভারতে যেতে চান। কিন্তু তারা (ভারতীয় দূতাবাস) আমাকে জানিয়েছেন, তাদের এতো বেশি জনবল নেই বলে তাদের ভিসা ইস্যু করতে দেরি হচ্ছে। তবে আমি বলেছি, অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভারতের সঙ্গে ভিসামুক্ত সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছে ভারতে। যা ভারতের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিলচরের পর এই ডায়লগ উভয় দেশের নানা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে খোলামেলা কথা হয়েছে। আপনারা শুনে খুশি হবেন, উভয় দেশের সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। প্রথম দিনে পাঁচটি প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছি। পাঁচটির একটি ইকোনমিক, আরও আরও বিনিয়োগ।
তিনি বলেন, এ ছাড়া বিদ্যুৎ সমন্বয়ের কথা বলেছি। আমরা ভারত থেকে ১ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনি, আরও কিনতে চাই। নেপাল থেকেও এনার্জি কিনতে ভারত আমাদের সাহায্য করবে। তাছাড়া দেশের নদীগুলোর কথা বলেছি, যাতে উভয় দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হয়। আগে নানা কারণে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটতো। এখন সেগুলো কমেছে।
বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত নীতিগতভাবে একমত। কোনো একটা কারণে এটা আটকে আছে। সময়ের ব্যবধানে এটি ঠিক হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘তলে তলে’ কিছু হয়ে থাকলে আমি জানি না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ভিসানীতি নিয়ে বলেছেন, কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়ে নীতিগতভাবে বাংলাদেশ ও ভারত এক বলেও জানান। কোনো একটা কারণে এটি আটকে আছে। সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এবং দুই দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্যবসা উন্নয়নের স্বার্থে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সিলেটে এই সংলাপ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।