Dhaka শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করাই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শনিবার (২০ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই ‘স্টেক হোল্ডারস ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি: টুওয়ার্ডস অ্যা প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

নসরুল হামিদ বলেন, শুরু থেকেই আমাদের গ্যাস নিয়ে কোনো সু-পরিকল্পনা হয়নি। যখনই গ্যাস পাওয়া গেছে, বলেছে ভাই দিয়ে দেন। কোথায়? বাড়িতে। আমরা গ্যাস কী পরিমাণে ইমপোর্ট করব, কীভাবে করব, কিছুই ঠিক করা হয়নি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে আমদানিযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ হবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ঘনফুট। ২০৩০ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ৬ হাজার ঘনফুটে। গত ১৩ বছরে গ্যাসের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। এখনও অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ কারখানা গ্যাস সংযোগ চাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিত কারখানার কারণে গ্যাস সংকট ঘণীভূত হয়েছে। একটা কারখানা গ্যাসের অনুমোদন নিলে বাইপাস (অবৈধ) লাইন নিয়েছেন। প্রতিদিন আমরা অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করছি, আবার প্রতিদিন নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেন আমরা গ্যাসের ওপরে ভাসছি, আসলে এটা সত্য নয়। যদি কাতারের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আমরা কোথায়? আমাদের নানান জায়গায় গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ওঠানো সম্ভব হয় না। এ কারণে পরিমাণেও কমতে থাকে। একটা গ্যাসের কূপ খনন করতে ৯-৫১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এরপর আপনি সেখানে গ্যাস নাও পেতে পারেন। ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস আনার চেষ্টা করছি। ওখানে পাইপলাইন নেই। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত সিএনজি করে যাতে আনা যায়। আমি আরও ৮ হাজার ঘনফুট গ্যাস আনলেও কাভার হবে না। ৭০০ থেকে ৮০০ ঘনফুট গ্যাস আমদানি করতে ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এই টাকাটাও একটা বড় অংক। টাকাটা কীভাবে আসবে, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।

নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে তিন হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে দেশীয় গ্যাস দিয়ে সার তৈরি করা হতো। কারণ তখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাতে গ্যাসের তেমন চাহিদা ছিলো না। সারের পরে এসব গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলো। তবে বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রি খাতে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। এর ফলে এসব জায়গায় গ্যাস সংযোগ দিতে অনেক সমস্যা হয়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে দুই হাজার ৯০৭ এমএমসিএফডি গ্যাসের সাপ্লাই রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি গ্যাস খরচ হয়। বিদ্যুৎ খাতে মোট গ্যাসের ৪২ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি খাতে ব্যবহার হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সার উৎপাদনে ৬ শতাংশ, সিএনজিতে ৩ শতাংশ এবং কমার্শিয়াল অ্যান্ড চা খাতে ১ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেটের আগে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর আশঙ্কা নেই। তবে তেল গ্যাসের দাম নির্ধারণে পলিসি তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু দাম বাড়বে না, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে; তাহলে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে দেশের বাজারেও দাম কমানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হলো গ্যাস আমরা আরও কীভাবে বাড়াতে পারি। আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন ইকোনমিক জোনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করে যাচ্ছি। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের লক্ষ্য ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই চ্যালেঞ্জিং বাজারে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি এতে বড় ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার প্রাইস মেকানিজমের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, এর মাধ্যমে প্রতিমাসে ধীরে ধীরে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের দাম নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে পলিসি তৈরি করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাজারে দামের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিক্রি করা হবে।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ফয়সাল করিম খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী, এফআইসিসিআই’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়ক বেহাল, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করাই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শনিবার (২০ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই ‘স্টেক হোল্ডারস ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি: টুওয়ার্ডস অ্যা প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

নসরুল হামিদ বলেন, শুরু থেকেই আমাদের গ্যাস নিয়ে কোনো সু-পরিকল্পনা হয়নি। যখনই গ্যাস পাওয়া গেছে, বলেছে ভাই দিয়ে দেন। কোথায়? বাড়িতে। আমরা গ্যাস কী পরিমাণে ইমপোর্ট করব, কীভাবে করব, কিছুই ঠিক করা হয়নি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে আমদানিযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ হবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ঘনফুট। ২০৩০ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ৬ হাজার ঘনফুটে। গত ১৩ বছরে গ্যাসের চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। এখনও অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ কারখানা গ্যাস সংযোগ চাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিত কারখানার কারণে গ্যাস সংকট ঘণীভূত হয়েছে। একটা কারখানা গ্যাসের অনুমোদন নিলে বাইপাস (অবৈধ) লাইন নিয়েছেন। প্রতিদিন আমরা অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করছি, আবার প্রতিদিন নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেন আমরা গ্যাসের ওপরে ভাসছি, আসলে এটা সত্য নয়। যদি কাতারের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আমরা কোথায়? আমাদের নানান জায়গায় গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ওঠানো সম্ভব হয় না। এ কারণে পরিমাণেও কমতে থাকে। একটা গ্যাসের কূপ খনন করতে ৯-৫১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এরপর আপনি সেখানে গ্যাস নাও পেতে পারেন। ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস আনার চেষ্টা করছি। ওখানে পাইপলাইন নেই। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত সিএনজি করে যাতে আনা যায়। আমি আরও ৮ হাজার ঘনফুট গ্যাস আনলেও কাভার হবে না। ৭০০ থেকে ৮০০ ঘনফুট গ্যাস আমদানি করতে ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এই টাকাটাও একটা বড় অংক। টাকাটা কীভাবে আসবে, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।

নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে তিন হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে দেশীয় গ্যাস দিয়ে সার তৈরি করা হতো। কারণ তখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাতে গ্যাসের তেমন চাহিদা ছিলো না। সারের পরে এসব গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলো। তবে বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রি খাতে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। এর ফলে এসব জায়গায় গ্যাস সংযোগ দিতে অনেক সমস্যা হয়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে দুই হাজার ৯০৭ এমএমসিএফডি গ্যাসের সাপ্লাই রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি গ্যাস খরচ হয়। বিদ্যুৎ খাতে মোট গ্যাসের ৪২ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি খাতে ব্যবহার হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সার উৎপাদনে ৬ শতাংশ, সিএনজিতে ৩ শতাংশ এবং কমার্শিয়াল অ্যান্ড চা খাতে ১ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেটের আগে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর আশঙ্কা নেই। তবে তেল গ্যাসের দাম নির্ধারণে পলিসি তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু দাম বাড়বে না, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে; তাহলে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে দেশের বাজারেও দাম কমানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হলো গ্যাস আমরা আরও কীভাবে বাড়াতে পারি। আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন ইকোনমিক জোনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করে যাচ্ছি। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের লক্ষ্য ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই চ্যালেঞ্জিং বাজারে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি এতে বড় ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার প্রাইস মেকানিজমের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, এর মাধ্যমে প্রতিমাসে ধীরে ধীরে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের দাম নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে পলিসি তৈরি করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাজারে দামের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিক্রি করা হবে।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ফয়সাল করিম খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী, এফআইসিসিআই’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান প্রমুখ।