স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে যেখান থেকে শেষ করেছিলো, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলো কাতারে রূপকথার জন্ম দেওয়া মরক্কো। নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ও ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল ব্রাজিলকে হারিয়ে দিলো ২-১ গোলে। বিশ্বকাপ থেকে আফ্রিকার দেশটি যে রূপকথার জন্ম দিয়েছে, তা যে শুধুই অঘটন নয় এবার ব্রাজিলকে হারিয়ে যেন সেটিই বুঝিয়ে দিলো হাকিমি-জিয়েচরা।
বাংলাদেশ সময় রোববার (২৬ মার্চ) রাত ৪.০০ মিনিটে মরক্কোর প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে নাকানি চুবানি খাইয়ে বিদায় করেছে আশরাফ হাকিমির দেশটি।
মরক্কানদের রূপকথা যেমন চলছে, তেমনি একের পর এক ব্যর্থতার চাদরে নিজেদের যেন হারিয়ে খুঁজছে সেলেসাওরা। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায়, এবার বিশ্বকাপের পর প্রথম প্রীতি ম্যাচেই হেরে গেলো মরক্কোর কাছে।
এই ম্যাচ উপলক্ষ্যে তরুণ নির্ভর দল ঘোষণা করে ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ কোচ র্যামন মেনেজেস। এরপরই তিনি বিশ্বকাপ দলের অনেককে বাদ দিয়ে দল গড়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন। টানা দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কাতার থেকে দেশে ফিরেই পদত্যাগ করেন দলটির কোচ তিতে।
অন্যদিকে, এর আগেই পুরো মৌসুমের জন্য ছিটকে গেছেন নেইমার। ইনজুরির কারণে নেই দলের নিয়মিত অধিনায়ক ডি সিলভা। নতুন দলে রাখা হয়নি সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে থাকা বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া, আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি ও মিডফিল্ডার ব্রুনো গুইমারেস। তবুও ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ভালো ফলের আশা নিয়েই নতুন শুরু করতে চেয়েছিল।
এদিন ভারপ্রাপ্ত কোচ মেনেজেস সম্ভাবনাময়ী পাঁচ তরুণকে আন্তর্জাতিক অভিষেক করিয়েছেন। আরেকটা কারণেও মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বিশেষ। কিংবদন্তি পেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম ব্রাজিলের মাঠে নামা। ম্যাচের শুরুতে তাই পেলেকে স্মরণ এবং প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জার্সির পেছনেও ছিল ফুটবল-রাজার নাম। এসব উপলক্ষ্যও যেন ব্রাজিলকে উজ্জীবিত করতে পারেনি!
ম্যাচটি ছিলো ব্রাজিলের কাছে একটু আলাদাও বটে। কিংবদন্তি পেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম মাঠে নেমেছিলো ব্রাজিল, তার স্মরণেই ম্যাচটিতে সব ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের জার্সির পেছনেই ছিলো লেখা ছিলো পেলের নাম। পেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে খেলা শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয় ইবনে বতুতা স্টেডিয়ামে। ফুটবল সম্রাটের স্মরণে মাঠে নেমেও সেই ম্যাচেই হারতে হলো ব্রাজিলকে। এদিকে, তৃতীয়বারের দেখাতেই ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পেলো অ্যাটলাস লায়নসরা।
ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে ব্রাজিলে হয়ে ছিলেন না দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। তার অনুপস্থিতি বেশ ভালোওতোই ভুগিয়েছে হলুদ জার্সিধারীদের। মাঠের খেলা অবশ্য আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে বেশ জমেছিলো। শট নেওয়ার দিকেও এগিয়ে ছিলো ব্রাজিলই। ১৪ শটের ৪ টি পোস্টে রেখেও মাত্র ১টি গোল করতে পারে ব্রাজিল, অন্যদিকে, ১৩ শটের ৩ টি পোস্টে রেখেই ২ গোল আদায় করে নেয় স্বাগতিকরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই তুলনামূলক বেশি গতিসম্পন্ন ছিল মরক্কো। ব্রাজিলিয়ানদের থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুতই তারা আক্রমণে উঠছিল বারবার। এতে ম্যাচের মাঝপথে দু’দলের খেলোয়াড়রা একাধিকবার ঝামেলাও বাঁধিয়েছে। অবশ্য ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। ১৩ মিনিটে লুকাস পাকুয়েতার থ্রু বল পেয়ে কাছ থেকেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রনি।
মিনিট দশেক পর মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনুর ভুলে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ব্রাজিল। আন্দ্রে সান্তোসের শট এগিয়ে আসা বুনুর হাত ফসকে পেছনে গোলমুখের দিকে চলে যাচ্ছিল। শেষমুহূর্তে পেছনে গিয়ে বল নিয়ন্ত্রনে নেন তিনি। এর দুই মিনিট পরই অবশ্য বল জালে পাঠান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে আক্রমণ তৈরির সময় অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়।
২৯ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যায় মরক্কো। বিলাল এল খাননুসের কাছ থেকে বল নিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন বুফাল। ৩৬ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ ছিল রদ্রিগোর সামনে। নেইমারের অনুপস্থিতিতে দশ নম্বর জার্সি পরা এই ফরোয়ার্ড শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন।
বিরতি থেকে ফিরে ৬৭ মিনিটে অবশ্য সমতা ফেরানো গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। ক্যাসেমিরোর দূরপাল্লার শট ইয়াসিন বোনোর হাত ফসকে বেরিয়ে মরক্কোর জালে জড়ায়।সমতা ফিরিয়েও অবশ্য লাভ হয়নি সেলেসাওদের।
কিন্তু ৭৯তম মিনিটে ব্রাজিলের চূড়ান্ত সর্বনাশ হয় ডিফেন্সের ভুলেই। বক্সে আলগা বল পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগান মরক্কান মিডফিল্ডার আবদেলহামিদ সাবিরি। শেষ পর্যন্ত যা জয়সূচক গোলে পরিণত হয়। বাকি সময়েও স্বাগতিকরা ব্রাজিলকে চাপে রাখে। তাছাড়া কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন তো আছেই। যা দারুণভাবে উজ্জীবিত রেখেছে বিশ্বকাপের নায়কদের।
গোল শোধের আপ্রাণ চেষ্টা করেও আর কিছু করতে পারেনি ব্রাজিল। অন্তর্র্বতীকালীন কোচ র্যামন মেনেজেসের অধীনে ২-১ গোলের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলকে। ক্যামেরুনের পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দেশ হিসেবে ব্রাজিলকে হারানোর সাদ পেলো মরক্কো।
আগামী ২৮ মার্চ আরও একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে তারা, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ পেরু। তবে ব্রাজিল এই মার্চে আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে না।