স্পোর্টস ডেস্ক :
ব্রাজিলের নারী এবং পুরুষ ফুটবল মিলিয়ে সবথেকে বেশি গোল করার রেকর্ডটি মার্তার। বর্ষসেরা নারী ফুটবলার হয়েছে ৬ বার। তবে আক্ষেপ ছিল একটাই, কখনোই বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিকে সোন জেতা হয়নি। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এসে সেই আক্ষেপ দূর করার লক্ষ্য নিয়েই খেলেছেন প্যারিস অলিম্পিকে। তবে খুব কাছে গিয়েও সন্তুষ্ট থাকতে হল রুপা জিতেই। শনিবার (১০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফাইনালে হেরে সোনা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে ব্রাজিলের। ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো অলিম্পিক নারী ফুটবলের সোনা জিতলো যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা।
১৯৯৬ সালে অলিম্পিকে নারী ফুটবল অন্তর্ভুক্তির পর চারবার শিরোপা জিতেছিল মার্কিন মেয়েরা। শনিবার রাতে তাদের হাতে উঠলো পঞ্চম শিরোপা। লাতিন আমেরিকার দেশটিকে আগের দুইবারই হারের তেতো স্বাদ দিয়েছিল আমেরিকার মেয়েরা।
ব্রাজিলের মেয়েদের সামনে ছিল মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার হাতছানি। কিন্তু প্যারিসেও সেই প্রতিশোধ নেওয়া হলো না। পিএসজির ঘরের মাঠ পার্ক ডি প্রিন্সেসে হারতে হলো মার্তাদের। এ নিয়ে অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে তিনবার উঠে তিনবারই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারতে হলো ব্রাজিলকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৬০ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখেছিল ব্রাজিল। আমেরিকানদের চাপে রেখে গোলের লক্ষ্যে শটও নিয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো এই ইভেন্টের ফাইনালে উঠল ব্রাজিল। কিন্তু এবারও সোনার হাসি সঙ্গী হলো না তাদের। দলটির রেকর্ড গোলদাতা মার্তাকেও অলিম্পিকস শেষ করতে হলো আক্ষেপ নিয়ে।
কার্ডের খাঁড়ায় দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকা মার্তাকে বেঞ্চে রেখে সেরা একাদশ সাজান ব্রাজিল কোচ। তবে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা মেলা দলটি। দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত তারা, কিন্তু সতীর্থের থ্রু পাস ধরে লুদমিলার শট আটকান গোলরক্ষক এলিশা নায়ের।
চার মিনিট পর যুক্তরাষ্ট্রের সোফিয়া স্মিথের শট ফেরান ব্রাজিল গোলরক্ষক লোরেনা। ষোড়শ মিনিটে জালে বল জড়িয়ে উদযাপনে মেতেছিলেন লুদমিলা, কিন্তু এবার তার হাসি মিলিয়ে যায় অফ-সাইডের পতাকা ওঠায়।
বলের নিয়ন্ত্রণে ও আক্রমণে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েও পেয়েছিল ভালো সুযোগ। কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে গাবি পোর্থিওর দারুণ শট ফিরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাতা এলিশা।
৫৯তম মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে বল পেয়ে এক ছুটে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন সোয়াসোন। এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এর একটু পর লুদমিলাকে তুলে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা মার্তাকে নামান ব্রাজিল কোচ।
বদলি নামা মার্তা অবশ্য ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ৮৯তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেছিলেন ‘স্কার্ট পরা পেলে’ খ্যাত এই ফরোয়ার্ড, কিন্তু গোল মেলেনি।
প্যারিসের আসরই নিজের শেষ অলিম্পিকস-টুর্নামেন্টের আগেই বলেছিলেন মার্তা। কিন্তু আসর রাঙাতে পারলেন না ৩৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। সোনা জিততে পারেননি, নিজে গোলও পাননি, কার্ডের কারণে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন দুই ম্যাচের, সব মিলিয়ে প্যারিসের আসর তার শেষ হলো চরম হতাশায়।
২০২৭ সালে নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলে। তবে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এই টুর্নামেন্টে তাকে হয়তো দেখা যাবে না। বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার বলেন, ‘আমার মনে হয় না, আপনারা আমাকে আবারও বিশ্বকাপে দেখতে পাবেন। আমি জানি না কী হবে, কিংবা জাতীয় দলের পরিকল্পনা কী। কিন্তু আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, যেকোনোভাবে দলকে সাহায্য করে যাওয়া। কারণ, এটাই আমার জীবন।’
এবারের অলিম্পিকে ব্রাজিলের পারফর্ম্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় আমরা যা করেছি, দল নিয়ে গর্বিত। এটা খুবই কঠিন টুর্নামেন্ট ছিল। প্রতি দুই দিন পরপর ম্যাচ এবং চোটও ছিল অনেক। এরপরও ফাইনালে আসার জন্য আমরা নিজেদের ছাড়িয়ে গেছি এবং নিজেদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করেছি, যা ছিল একটি পদক নিয়ে আসা।’