নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্যালট বা ইভিএমে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বলেন সিইসি।
সিইসি বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা। শতভাগ সুষ্ঠু ভোট ব্যালট বা ইভিএমে সম্ভব না। ইভিএম বা ব্যালট নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ নয়। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ। সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত কমিশনের থাকবে। সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
আরেকজন সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত কোনো চাপে নয়। কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ব্যালটের চাইতে ইভিএম নিরাপদ বেশি। কারচুপি বন্ধ করা সহজ। ইভিএম বা ব্যালটটা কিন্তু আমাদের নির্বাচনের মোটেই বড় চ্যালেঞ্জ নয়। আমাদের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে যে রাজনৈতিক সঙ্কটটা বিরাজ করছে। নির্বাচনে সবাই বা প্রধানতম দলগুলো অংশগ্রহণ করবেন কি করবে না? সেটা হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যালটে ভোট নেওয়া যতটা কষ্টকর তার চেয়ে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া ততটা কষ্টকর না।
তিনি বলেন, বড় দলগুলো একেবারেই অংশগ্রহণ করল না। লিগ্যালিটি ও লেজিটিমেসির পার্থক্য বুঝতে হবে। লিগ্যালি নির্বাচন শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু লেজিটিমেট হয়তো হবে না।
আগাম কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, আগাম ভোটের প্রশ্নই আসে না। রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কিনা, সেটা আমরা এখনো বলতে পারবো না। আমরা প্রথম থেকে বলেছি সব দল নির্বাচনে অংশ নিক। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। আমরা জোর করে কাউকে আনতে পারছি না। কিন্তু আপিল আমরা করেই যাবো। আমাদের কথায় যে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকট সরকারের সঙ্গে দলগুলোর হয়ে থাকে। বা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে। আমরা বলবো রাজনৈতিক সেই সংকটগুলো আপনারাই নিরসন করে নির্বাচনকে সহজ এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য অনুকূল করে দেন।
দলগুলো সমঝোতায় ইসি কি ভূমিকা নেওয়ার কোনো উপায় নেই, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, ইসির রুল প্লে (ভূমিকা পালন) করার কোনো সুযোগ নেই। এটাই আমাদের রুল, আপনারা আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন। সংলাপ করে বিরাজমান কোনো দূরত্ব যদি থাকে, কোনো সংশয় যদি থাকে এবং বিরোধ থাকে, তা মিটিয়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। এক কথায় বলেছি, সবগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম থেকে আমরা সরে এসেছি সেদিন। এটা নিয়ে বাজারে একটা আছে যে, এটা কি চাপে করা হলো, না ওইটা করা হলো। এটা নিয়ে কিন্তু আমরা কমিশন দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। প্রথমে আমাদের কোনো একটা দলের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ আসনেই ইভিএম। সবকিছু শুনেটুনে ১৫০টা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইভিএমে ১২০০ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে একটাও অভিযোগ পড়েনি যে আমরা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ম্যালফাংশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ভূত আছে বা ইয়ে আছে কি বলে, দশটা ভোট দিলে তিনটা ভোট থাকে, সতটা ভোট থাকে না। কাজেই আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। এটা একেবারেই সত্য নয়। আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি কিন্তু আমাদের বিশ্বাস দিয়ে তো হবে না, যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করবো সীমিত সাধ্যের মধ্যে। তবে এটা সত্য ব্যালটে রিগিং প্রতিহত করা যত কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়। অনেকেই বলেন যে রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য আমি জানি না। তবে একটা পারসেপশন ক্রিয়েট হয়ে গেছে, রাতেও ভোট হতে পারে। কিন্তু ইভিএম সকাল ৮টার আগে চালুই হবে না। ইট ইজ সো অটোমেটিক। ন্যূনতম সুযোগ নেই। এদিক থেকে ইভিএমে সুযোগ ছিল, যেটা ব্যালটে নেই। আমরা তুলনামূলক বললাম। আবার ইভিএম ব্যয়বহুল, ব্যালট তত নয়।