Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ইন্তেকাল

ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এবং দেশের খ্যাতনামা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শোক প্রকাশ করেছেন।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদ্-দ্বীন হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ সকালে না ফেরার দেশে চলে যান এই প্রাজ্ঞ আইনজ্ঞ।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আইন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃততে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এ ছাড়া সিনিয়র আইনজীবীরাও গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তাঁরা বলেন, আইন ও বিচারাঙ্গনে তাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আকাশ বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে হবে। এরপর হাসপাতাল থেকে লাশ তাঁর পল্টনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে দুপুর ২টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজা হবে। পরে তাঁর মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর দক্ষিণ কলকাতার চেতলা গ্রামে। গ্রামের হাই স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে চলে যান কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার অ্যাট ল সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।

আরও পড়ুন : জার্মানি স্থপতির তৈরী বাঁশ-মাটির দৃষ্টিনন্দন ভবন

বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই করেন তিনি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন রফিক-উল হক। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রফিক-উল হক। কিন্তু কোনো সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা সব সময় তাঁকে পাশে পেয়েছেন। রাজনীতিবিদদের সম্মান সব সময়ই অর্জন করেছেন তিনি।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তাঁর জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়। আর তাঁর এই উদ্যোগকে বিরল বলে আখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তাঁর সমসাময়িকরা।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ইন্তেকাল

প্রকাশের সময় : ০৭:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এবং দেশের খ্যাতনামা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শোক প্রকাশ করেছেন।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদ্-দ্বীন হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ সকালে না ফেরার দেশে চলে যান এই প্রাজ্ঞ আইনজ্ঞ।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আইন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃততে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এ ছাড়া সিনিয়র আইনজীবীরাও গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তাঁরা বলেন, আইন ও বিচারাঙ্গনে তাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আকাশ বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে হবে। এরপর হাসপাতাল থেকে লাশ তাঁর পল্টনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে দুপুর ২টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজা হবে। পরে তাঁর মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর দক্ষিণ কলকাতার চেতলা গ্রামে। গ্রামের হাই স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে চলে যান কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার অ্যাট ল সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।

আরও পড়ুন : জার্মানি স্থপতির তৈরী বাঁশ-মাটির দৃষ্টিনন্দন ভবন

বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই করেন তিনি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন রফিক-উল হক। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রফিক-উল হক। কিন্তু কোনো সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা সব সময় তাঁকে পাশে পেয়েছেন। রাজনীতিবিদদের সম্মান সব সময়ই অর্জন করেছেন তিনি।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তাঁর জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়। আর তাঁর এই উদ্যোগকে বিরল বলে আখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তাঁর সমসাময়িকরা।