Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বোমার শব্দে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত

টেকনাফ উপজেলা প্রতিনিধি : 

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে বোমা বিস্ফোরণ ও মর্টারশেলের শব্দে কাঁপছে এপারে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত পার করেছে সীমান্তবাসী। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার (২ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত। বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে কেঁপে উঠে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বসতবাড়িও।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে থেমে থেমে রোববার ভোর পর্যন্ত হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমা ও মর্টারশেলের ভারী শব্দ এপারের সীমান্তে ভেসে আসে। টেকনাফ, হ্নীলা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সীমান্তজুড়ে মিয়ানমারের রাখাইনে বিস্ফোরণের শব্দ এপারের বাসিন্দাদের কানে লাগছে। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু ও তার আশপাশের সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলছে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সেলিম উল্লাহ বলেন, সারারাত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। রাখাইন সীমান্তে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমা ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর ভূমিকম্পনের মতো কেঁপে ওঠে।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, শনিবার সকাল ও দুপুরে মিয়ানামার অংশে দুই-একবার হেলিকপ্টর উড়তে দেখা গেছে। এরপরই হেলিকপ্টর থেকে বোমা নিক্ষেপ শুরু হয়েছে।

হ্নীলার দমদমিযা এলাকায় বাসিন্দা আমানুল্লাহ ও সাবরাং লেজিরপাড়ার আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে টানা মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা কামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে চললেও গত রাতের মতো বোমা নিক্ষেপ এর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিমান দিয়ে বোমা নিক্ষেপের কারণে টেকনাফ সীমান্তের বসবাসকারী মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। বোমার আঘাতে এবারের মানুষের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। সারারাত বোমা ও বিমানের বিকট শব্দে এপারে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, টেকনাফ, উপজেলার পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া,নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপসহ নাফ নদীর মোহনা সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বড় বড় বিকট শব্দ।

টেকনাফ নাইট্যংপাড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে রাতভর পর পর বিকট শব্দ ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। মনে হচ্ছে মর্টারশেল বোমার আওয়াজ।

হ্নীলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, রাত সাড়ে ৯ টার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছে। সারারাত থেমে থেমে বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। আমার বাড়িতে ও বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের চলমান সংঘাতে এপারের বাসিন্দারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের অভ্যন্তরে চলা এই যুদ্ধ এক-দুই দিন বন্ধ থাকলেও আবারো শুরু হয়। এতে সীমান্তসহ সাগর ও নাফ নদেতে জেলেরা যেতে ভয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে রাত জেগে বসে থাকেন। শনিবার দিনে সারাদিন ও রাত পর্যন্ত এবং রোববার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের চলমান সংঘাত থেকে এপারে প্রায় সময় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ গতরাতে বেশি শোনা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সীমান্তে স্থানীয়দের সতর্কভাবে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।

আবহাওয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

বোমার শব্দে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত

প্রকাশের সময় : ০১:১৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ উপজেলা প্রতিনিধি : 

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে বোমা বিস্ফোরণ ও মর্টারশেলের শব্দে কাঁপছে এপারে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত পার করেছে সীমান্তবাসী। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার (২ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত। বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে কেঁপে উঠে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বসতবাড়িও।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে থেমে থেমে রোববার ভোর পর্যন্ত হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমা ও মর্টারশেলের ভারী শব্দ এপারের সীমান্তে ভেসে আসে। টেকনাফ, হ্নীলা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সীমান্তজুড়ে মিয়ানমারের রাখাইনে বিস্ফোরণের শব্দ এপারের বাসিন্দাদের কানে লাগছে। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু ও তার আশপাশের সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলছে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সেলিম উল্লাহ বলেন, সারারাত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। রাখাইন সীমান্তে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমা ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর ভূমিকম্পনের মতো কেঁপে ওঠে।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, শনিবার সকাল ও দুপুরে মিয়ানামার অংশে দুই-একবার হেলিকপ্টর উড়তে দেখা গেছে। এরপরই হেলিকপ্টর থেকে বোমা নিক্ষেপ শুরু হয়েছে।

হ্নীলার দমদমিযা এলাকায় বাসিন্দা আমানুল্লাহ ও সাবরাং লেজিরপাড়ার আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে টানা মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা কামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে চললেও গত রাতের মতো বোমা নিক্ষেপ এর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিমান দিয়ে বোমা নিক্ষেপের কারণে টেকনাফ সীমান্তের বসবাসকারী মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। বোমার আঘাতে এবারের মানুষের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। সারারাত বোমা ও বিমানের বিকট শব্দে এপারে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, টেকনাফ, উপজেলার পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া,নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপসহ নাফ নদীর মোহনা সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বড় বড় বিকট শব্দ।

টেকনাফ নাইট্যংপাড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে রাতভর পর পর বিকট শব্দ ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। মনে হচ্ছে মর্টারশেল বোমার আওয়াজ।

হ্নীলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, রাত সাড়ে ৯ টার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছে। সারারাত থেমে থেমে বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। আমার বাড়িতে ও বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের চলমান সংঘাতে এপারের বাসিন্দারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের অভ্যন্তরে চলা এই যুদ্ধ এক-দুই দিন বন্ধ থাকলেও আবারো শুরু হয়। এতে সীমান্তসহ সাগর ও নাফ নদেতে জেলেরা যেতে ভয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে রাত জেগে বসে থাকেন। শনিবার দিনে সারাদিন ও রাত পর্যন্ত এবং রোববার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের চলমান সংঘাত থেকে এপারে প্রায় সময় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ গতরাতে বেশি শোনা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সীমান্তে স্থানীয়দের সতর্কভাবে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।