আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সুদানের লড়াইরত জেনারেলদের একজন, আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি ডাগালো বিবিসিকে বলেন, আমরা সুদানকে ধ্বংস করতে চাই না। আমার সেনাদের ওপর বোমাবর্ষণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনায় বসবো না।
দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত এই জেনারেল হেমেডটি নামে ভালোভাবে পরিচিত। তিনি বলেন, তিন দিনের যুদ্ধবিরতির সময় তার যোদ্ধাদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। আমরা সুদানকে ধ্বংস করতে চাই না। তিনি বলছিলেন এবং চলমান সহিংসতার জন্য তিনি দায়ী করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে।
জেনারেল বুরহান দক্ষিণ সুদানে সরাসরি আলোচনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বৃহস্পতিবার রাতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ তিন দিন বাড়াতে সম্মত হয় দুই বাহিনী।
ফোনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মি. হেমেদটি জানান, তিনি আলোচনায় রাজি কিন্তু শর্ত হলো যুদ্ধবিরতি মানতে হবে। শত্রুতা বন্ধ করুন। এরপরেই আমরা আলোচনায় বসতে পারি।
তিনি বলেন, জেনারেল বুরহানের সাথে তার কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তিনি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত শাসক ওমর আল বশিরের অনুগতদের সরকারের নিয়ে আসার অভিযোগ করে জেনারেল বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালে বশিরের নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
হেমেডটি জানান, বশিরের তিন দশকের রাজত্বকাল পরিচিত ছিলো ইসলামপন্থী আদর্শ ও শরিয়া আইন কার্যকরের জন্য। দু:খজনকভাবে বুরহান পরিচালিত হচ্ছে উগ্রবাদী ইসলামী নেতাদের দ্বারা।
তিনি বলেন, জেনারেল বুরহানের সাথে তার কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তিনি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত শাসক ওমর আল বশিরের অনুগতদের সরকারের নিয়ে আসার অভিযোগ করে জেনারেল বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করেন।
২০২১ সালে তিনি ও জেনারেল বুরহান ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। কার্যত দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা বিশেষ করে হেমেডটির এক লাখ সদস্যের শক্তিশালী আরএসএফকে সেনাবাহিনীতে নিয়মিতকরণের সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা ভেঙে পড়েছিল।
জাতিসংঘ জানায়, সুদানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচশো মানুষ নিহত হয়েছে। লাখ লাখ সুদানি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে এবং প্রায়শই যাওয়ার জন্য তাদের টাকা দিতে হচ্ছে এবং যাত্রাপথে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে অনেকে প্রায় চারশো কিলোমিটার হেঁটে খার্তুম থেকে দক্ষিণ সুদান সীমান্তে গেছে।
এদিকে তুরস্কের একটি উদ্ধারকারী বিমান খার্তুমের বাইরে একটি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
হেমেডটি, আমি আজকেই বেসামরিক সরকার পেতে চাই, আগামীকাল নয়। একটি পূর্ণ বেসামরিক সরকার। এটাই আমার নীতি।
আরএসএফ প্রধানের গণতন্ত্রের প্রতি এমন অঙ্গীকার প্রকাশ নতুন কোনো বিষয় নয়। যদিও বিশ্লেষকরা অতীতে গণআন্দোলন দমাতে এই বাহিনীকে নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করে থাকেন।
হেমেডটি বলেন, আরএসএফ যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর সৈন্যদের শত্রু নয়। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তারা গত ত্রিশ বছরের সরকারের ধ্বংসাবশেষ থেকে সুদানকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছিলেন। আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়বো না। দয়া করে আর্মি ডিভিশনসে ফেরত যান এবং আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়বো না।