সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ধনী দেশগুলো চীনের উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। ভৌগলিক অবস্থান ও উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশও বিদেশিদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে বৈশ্বিক হেলাখেলার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিদেশিদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। ধনী দেশগুলো চীনের উত্থান দেখতে পারে না। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিশ্ব হেলাঠেলার মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। তাদের এই বিভিন্ন রকম সমস্যার মধ্যে আমাদের এসে ঢোকাচ্ছে । তবে যাই হোক, আমরা ওভারকাম করব। শেখ হাসিনা যদি থাকেন, চিন্তার কিছু নেই।
জ্যেষ্ঠ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা প্রবাসে আলিশান বাড়ি করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে এ কথা জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো ঠিক জানি না। যদি করে থাকেন, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) বের করেন। কোনো লোক বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার করুক, সেটা আমরা চাই না। আওয়ামী লীগ সরকার সেটা চায় না।
বিএনপি বিদেশিদের কাছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের উল্টো দল (বিএনপি) তাঁদের কাছে এমনও তথ্য দিয়েছে, শেখ হাসিনার এই ১০-১২ বছরে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এটা নির্যাতনের কারণে। তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে ফেলেছে। তারপর হিন্দু সম্প্রদায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু আসলে হিন্দু সম্প্রদায় আরও ১০ লাখ বেড়েছে। তারা (বিএনপি) বলেছে, বাংলাদেশ থেকে খ্রিষ্টান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের কয়েকজন এগুলো বিশ্বাসও করেছেন। তারা আসুক, দেখুক এসে, এখানে কোনো নির্যাতন হচ্ছে কি না। প্রতিদিন লোক রাস্তায় মরছে কি না। তারা বলেছে, রাস্তাঘাটে মানুষ মরে পড়ে আছে। আসুক খুব ভালো, দেখে যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যানের আগামীকাল চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকেরা) কংগ্রেসম্যান নিয়ে এত চিন্তায় কেন? আপনি কি আমেরিকার কংগ্রেসম্যান? আমেরিকাতে ৪৩৫ জন কংগ্রেসম্যান আছেন। তাঁরা দুনিয়া বেড়াবেন তো বটেই। ওরা এলে ভালো। আমাদের দেশ দেখে যাক। তাঁদের ধারণা, বাংলাদেশ হচ্ছে দরিদ্র সাইক্লোনের দেশ। আসলে দেখবেন, এরা তো গরিব না, ভালো। আমরা ওয়েলকাম করি। তাঁরা আসছেন, এটা সুখবর। তাঁরা দেখুক। তাঁদের ধারণা যে বাংলাদেশে দিনে- রাতে রাস্তাঘাটে মানুষ মরছে।
কংগ্রেসম্যানরা রোহিঙ্গাদের দেখতে আসছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা আসছেন মোটামুটি রোহিঙ্গাদের জন্য। ওখানে তাঁরা কিছু খরচপাতি দেন মানবিক কারণে। সেই খরচপাতি আমাদের দেন না, রোহিঙ্গাদের জন্য তাঁদের ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিগুলো দেয়। ওরা টাকাপয়সা ঠিকমতো ব্যবহার করছে, না চুরি করছে, সেগুলো হয়তো তাঁরা দেখবেন। যাঁরা আসছেন, তাঁরা হচ্ছেন টাকা অনুমোদন কমিটির সদস্য। এমনি তাঁরা টাকা কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা বলেছি, আরও টাকা না দিলে ঝামেলা হবে। হয়তো তাঁরা এলে আমাদের উপকারই হবে। টাকা বাড়াবে। আমাদের জন্য না, রোহিঙ্গাদের জন্য।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথাব্যথার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে জুলাই—এ পর্যন্ত ৬৭ দেশে ইলেকশন (নির্বাচন) হয়েছে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২২টি দেশে (নির্বাচন) হবে। কিন্তু ওগুলোর কোনো খবর–টবর দেখি না। বাংলাদেশে এইটা কেন হচ্ছে? আমাদের উল্টো দল হইচই করে। বিদেশিদের সব সময় নালিশ দেয়। জনগণের কাছে তারা নালিশ পার্টি, তারা নালিশ দেয়। আর একটি হচ্ছে আমাদের কিছু প্রবাসী আছেন, তাঁরা ওই নালিশ পার্টির অংশবিশেষ। তাঁরা বাংলাদেশের ইস্যু প্রত্যেক দিন ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন। মিথ্যাচার করে বলেন। এরপর ভয়াবহ দেশ বলে মনে করেন অনেকে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কেউ কেউ তো বিদেশে ধুমধামে আছেন বিগত ১৫ বছর ধরে, কেমনে সম্ভব! নিশ্চয় টাকা-টুকা নিয়ে গেছেন। এগুলো আগামীতে বন্ধ করতে পারলে আমাদের দেশে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। আমাদের আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার। এইসব বড়লোকরা বিদেশে না নিয়ে গিয়ে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করলে সবার উন্নতি হবে।
এর আগে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দর হবে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চান, দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের সেবা করতে চায়। আওয়ামী লীগ আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। এই স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে বারবার আওয়ামী লীগ সরকার দরকার। এই সরকার ক্ষমতায় না থাকলে পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশ প্রথম হয়। এক দিনে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়। সরকারের মদদে বিরোধী দলের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। বোমাবাজি ও সন্ত্রাসের দেশ না চাইলে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে।
উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।