Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেড়িবাঁধে আশার আলো দেখছে পদ্মা তীরের মানুষ

পদ্মার তীরে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধ

উত্তাল পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা শরীয়তপুরের জাজিরাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ। হাজার হাজার মানুষ হয়েছে ঘরছাড়া। বসত-ভিটা হারিয়ে পথে বসেছে বহু মানুষ। সেই ভাঙনরোধে তৈরী হয়েছে বেড়িবাঁধ। তাতে আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

নদীবেষ্টিত জেলা শরীয়তপুর। উত্তরে পদ্মা, পশ্চিমে কীর্তিনাশা, দক্ষিণে আরিয়াল খাঁ আর পূর্বে মেঘনা। তবে এ জেলাটি সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে উত্তরের পদ্মা নদীর দ্বারা। ১৯৯১ সাল থেকেই পদ্মা ভাঙতে শুরু করলেও সেটা ফসলি জমি হওয়ায় কেউ কর্ণপাত করেনি। কিন্তু যখন মানুষের বাড়িঘর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভাঙতে শুরু করে ঠিক তখনই টনক নড়তে শুরু করে।

২০০০ সালে দিকে প্রথম বড় ধরনের আক্রমণ হয় নড়িয়া উপজেলার ঘরিসার ইউনিয়নের প্রাচীনতম সুরেশ্বর লঞ্চঘাট। এর পাসেই বাহাদ্দী বেপারীর বাজার। পুরো বাজারটি কেউ বুঝে ওঠার আগেই নদীর কয়েক শ ফুট পানির নিচে চলে যায়। পানি ওপরে উঠে পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। হতাহত হয় অনেক। এর পরে অল্পঅল্প করে ভাঙতে থাকে।

২০১৫ সাল আবারো ভাঙতে শুরু করে। তথ্যমতে ঘড়িসার ইউনিয়নের চরমোহন নামক গ্রাম এর ২৩৫ পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভিটেবাড়িশূন্য হয়।

২০১৬ সাল নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও কেদারপুরের ইউনিয়নের সাহেবের চর এলাকা পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয় কয়েক শ পরিবার।

২০১৭ সালে ৭ আগস্ট একসঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেল ওয়াবদা বাজার ও আশপাশের বাড়িঘর। পাওয়া যায়নি অনেকের লাশ। পদ্মা মারমুখী ধীরে ধীরে। ২০১৮ সাল। শুরু হয়ে গেল আগস্ট মাস। এ যেন পদ্মার তীরে থাকা মানুষের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা। স্রোতের তীব্রতা বাড়তে থাকল সুরু হলো পদ্মার সাথে মানুষের যুদ্ধ।

 


মানুষের বাড়িঘর গ্রাস করতে শুরু করল। বর্ষার শেষ হতে হতে পদ্মা নদীর গর্ভে নড়িয়া পৌরসভা ও কেদারপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর, ঐতিহ্যবাহী মুলফতগঞ্জ বাজার ও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৫০১৮টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

২০১৯ সালেও সরকারের জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা অবস্থায় নড়িয়া উপজেলার কেদরপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২টি পরিবার নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।

নড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদী হোসেন জানিয়েছেন ১৭-১৮ ও ১৯ অর্থবছরে ৬৯০৬টি পরিবার নদীভাঙনে বাড়িঘর হারিয়েছে।

পদ্মার ভাঙনে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক গ্রাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য মসজিদ ও মন্দির।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হলো জাজিরা নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মার ডানতীর রক্ষার কাজ। প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিক সুরক্ষার চেষ্টা। পরে মোক্তারের চর থেকে সুরেশ্বর পর্যন্ত সারে ৯ কিলোমিটার পদ্মার ডানতীর রক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে প্রথমে ভাঙনরোধে চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে ১৮-১৯ অর্থবছরে শুষ্ক মৌসুমে জিও ব্যাগ অপসারণ করে নদীর তীর এসকাভেটর দিয়ে সমান করে তীর রক্ষার জন্য স্থাপন শুরু হয় কংক্রিটের তৈরি ব্লক।

আরও পড়ুন : বরিশালে স্পিডবোট চলাচলে নিয়মই মানা হয় না

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্য মতে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার, জিও টিউব ১৭৫৯টি ও কংক্রিটের ব্লক প্রস্তুত করা হয়ে ১২ লাখ ১৮ হাজার, যা নদীর তীরে স্থাপন করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো জানিয়েছে, পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষা বাধ প্রকল্পে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৭ লাখ টাকা, ১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ১৯-২০ অর্থ বছরে ২৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ২০-২১ অর্থবছরে ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানিয়েছেন, ২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে মুলফতগঞ্জ থেকে সুরেস্বর পর্যন্ত ব্লক এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

আশায় বুক বাঁধতে শুরু করছে শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে পদ্মা নদীর রূপ বোঝা দায়, তার পরেও যদি শাসনের আওতায় আনা যায় মাঝের ডুবোচরগুলো অপসারণ করা হয়, তাহলে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে। এ তীরের রক্ষার চেষ্টা সফল হবে ও তীরে বসবাসকারীরা সুফল পাবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজের সুফল পাচ্ছে না সাত গ্রামের মানুষ

বেড়িবাঁধে আশার আলো দেখছে পদ্মা তীরের মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০

উত্তাল পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা শরীয়তপুরের জাজিরাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ। হাজার হাজার মানুষ হয়েছে ঘরছাড়া। বসত-ভিটা হারিয়ে পথে বসেছে বহু মানুষ। সেই ভাঙনরোধে তৈরী হয়েছে বেড়িবাঁধ। তাতে আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

নদীবেষ্টিত জেলা শরীয়তপুর। উত্তরে পদ্মা, পশ্চিমে কীর্তিনাশা, দক্ষিণে আরিয়াল খাঁ আর পূর্বে মেঘনা। তবে এ জেলাটি সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে উত্তরের পদ্মা নদীর দ্বারা। ১৯৯১ সাল থেকেই পদ্মা ভাঙতে শুরু করলেও সেটা ফসলি জমি হওয়ায় কেউ কর্ণপাত করেনি। কিন্তু যখন মানুষের বাড়িঘর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভাঙতে শুরু করে ঠিক তখনই টনক নড়তে শুরু করে।

২০০০ সালে দিকে প্রথম বড় ধরনের আক্রমণ হয় নড়িয়া উপজেলার ঘরিসার ইউনিয়নের প্রাচীনতম সুরেশ্বর লঞ্চঘাট। এর পাসেই বাহাদ্দী বেপারীর বাজার। পুরো বাজারটি কেউ বুঝে ওঠার আগেই নদীর কয়েক শ ফুট পানির নিচে চলে যায়। পানি ওপরে উঠে পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। হতাহত হয় অনেক। এর পরে অল্পঅল্প করে ভাঙতে থাকে।

২০১৫ সাল আবারো ভাঙতে শুরু করে। তথ্যমতে ঘড়িসার ইউনিয়নের চরমোহন নামক গ্রাম এর ২৩৫ পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভিটেবাড়িশূন্য হয়।

২০১৬ সাল নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও কেদারপুরের ইউনিয়নের সাহেবের চর এলাকা পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয় কয়েক শ পরিবার।

২০১৭ সালে ৭ আগস্ট একসঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেল ওয়াবদা বাজার ও আশপাশের বাড়িঘর। পাওয়া যায়নি অনেকের লাশ। পদ্মা মারমুখী ধীরে ধীরে। ২০১৮ সাল। শুরু হয়ে গেল আগস্ট মাস। এ যেন পদ্মার তীরে থাকা মানুষের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা। স্রোতের তীব্রতা বাড়তে থাকল সুরু হলো পদ্মার সাথে মানুষের যুদ্ধ।

 


মানুষের বাড়িঘর গ্রাস করতে শুরু করল। বর্ষার শেষ হতে হতে পদ্মা নদীর গর্ভে নড়িয়া পৌরসভা ও কেদারপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর, ঐতিহ্যবাহী মুলফতগঞ্জ বাজার ও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৫০১৮টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

২০১৯ সালেও সরকারের জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা অবস্থায় নড়িয়া উপজেলার কেদরপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২টি পরিবার নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।

নড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদী হোসেন জানিয়েছেন ১৭-১৮ ও ১৯ অর্থবছরে ৬৯০৬টি পরিবার নদীভাঙনে বাড়িঘর হারিয়েছে।

পদ্মার ভাঙনে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক গ্রাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য মসজিদ ও মন্দির।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হলো জাজিরা নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মার ডানতীর রক্ষার কাজ। প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিক সুরক্ষার চেষ্টা। পরে মোক্তারের চর থেকে সুরেশ্বর পর্যন্ত সারে ৯ কিলোমিটার পদ্মার ডানতীর রক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে প্রথমে ভাঙনরোধে চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে ১৮-১৯ অর্থবছরে শুষ্ক মৌসুমে জিও ব্যাগ অপসারণ করে নদীর তীর এসকাভেটর দিয়ে সমান করে তীর রক্ষার জন্য স্থাপন শুরু হয় কংক্রিটের তৈরি ব্লক।

আরও পড়ুন : বরিশালে স্পিডবোট চলাচলে নিয়মই মানা হয় না

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্য মতে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার, জিও টিউব ১৭৫৯টি ও কংক্রিটের ব্লক প্রস্তুত করা হয়ে ১২ লাখ ১৮ হাজার, যা নদীর তীরে স্থাপন করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো জানিয়েছে, পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষা বাধ প্রকল্পে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৭ লাখ টাকা, ১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ১৯-২০ অর্থ বছরে ২৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ২০-২১ অর্থবছরে ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানিয়েছেন, ২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে মুলফতগঞ্জ থেকে সুরেস্বর পর্যন্ত ব্লক এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

আশায় বুক বাঁধতে শুরু করছে শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে পদ্মা নদীর রূপ বোঝা দায়, তার পরেও যদি শাসনের আওতায় আনা যায় মাঝের ডুবোচরগুলো অপসারণ করা হয়, তাহলে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে। এ তীরের রক্ষার চেষ্টা সফল হবে ও তীরে বসবাসকারীরা সুফল পাবে।