নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। আর সংস্কার বেশি চাইলে আরও ছয়মাস সময় দিতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে গঠিত ছয়টি কমিশন তাদের প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেবে। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে সরকার কিছু ভাবছে না। লুটপাট, দুর্নীতি ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। সরকার বরাবরই বলে আসছে, সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা হবে। পরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি রোডম্যাপ দিয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, সেই রোডম্যাপের মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে একটি জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে পেরেছি। অর্থনীতি যে গতিতে এগোচ্ছিল সে হিসেবে বর্তমান রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার কিন্তু বর্তমানে তা আছে ২২ বিলিয়ন ডলারে। সে হিসেবে বলতে পারি আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিদেশে থাকা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরে অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরেন। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ বেশকিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেন তিনি। এসব কমিশন এখন তাদের প্রতিবেদন দিচ্ছে সরকারকে। সংস্কারের পরই জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শফিকুল আলম বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে তারা খুব বেশি একটা সংস্কার চাইবে না, তাহলে আমরা এ বছরের ডিসেম্বরে এসে একটা নির্বাচন করব। যদি দলগুলো মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিয়ে অনেক সংস্কারের কাজ করিয়ে নেই, আরও আমার সংস্কারটা লাগবে, সেক্ষেত্রে আরও ছয় মাস সময় নেব।
“বাংলাদেশে একটা সত্যিকারের ‘ডিবেট-ডায়লগ’ হওয়া দরকার। আমাদের আগামী ১০০-২০০ বছরের রাজনৈতিক বন্দোবস্তটা কী হবে, আমরা কী সংবিধান চাই, সেখানে কী সংস্কার চাই, রাজনৈতিক দর্শন কী আনতে চাই? তরুণ প্রজন্ম কী সরকার চায়, নির্বাচন ব্যবস্থাটা কীভাবে করব? পুলিশ ব্যবস্থাটা কীভাবে করব? পুলিশ কতটুকু স্বাধীনতা পাবে, বিচার ব্যবস্থা কতটুকু স্বাধীনতা পাবে…।”
প্রেস সচিব বলেন, “নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরে আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা গণতান্ত্রিক পর্যায়ে যাব ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন করব। গণতন্ত্রের মধ্যে থাকলে হয় কি…‘প্ল্যান অ্যান্ড এরোরের’ মধ্যে থাকি, এটা হচ্ছে না অন্যটা করলাম। করতে করতে সমাজ একটা ম্যাচিউরিটির মধ্যে থাকে। সেটা আমাদের হয়নি।
“আমাদের পুরো ফাউন্ডেশনটা ছিল কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট, সেটা ধ্বংস হয়ে গেল। গত ১৫ বছরে হাসিনা একটা ‘শেখ রাজতন্ত্র’ করলেন। ভয়াবহ একটা রাজতন্ত্র, কারও কথা বলার অধিকার নাই, ইকোনমিতে যে যার মত লুটপাট করছে, সারা বাংলাদেশ জুড়ে ৪-৫ হাজার ম্যুরাল করে ফেললেন। পদ্মা ব্রিজের তার ও তারা বাবার বড় ম্যুরাল তৈরিতে খরচ ১১৭ কোটি টাকা। ক্যান ইউ ইমাজিন দ্যাট? সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার নিজের কারণে কর্ণফুলীর নিচে দিয়ে টানেল নিয়ে গেলেন, ১২ হাজার কোটি টাকা।…একটা লোক রিপোর্ট করে নাই, আপনি দেখেন।”