স্পোর্টস ডেস্ক :
সকালে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর। চার ঘন্টার ব্যবধানেই শোনা গেল ভিন্ন এক খবর। শুরুতে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবরে সারাবিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া। যদিও খানিক পরেই জানা গেল ভিন্ন তথ্য। বেঁচে আছেন জিম্বাবুয়ের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। টুইটারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সাবেক সতীর্থ হেনরি ওলোঙ্গা এবং বর্তমান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। শুরুতে এই পেসারই জানিয়েছিলেন স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর!
স্ট্রিকের মৃত্যু সংবাদ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওলোঙ্গা আবার আগের টুইট মুছে দিয়ে জানালেন, বেঁচে আছেন স্ট্রিক। ওলোঙ্গা লিখেছেন মৃত্যুসংবাদটি গুজব ছিল।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ভোরেই প্রথম ওলোঙ্গার পোস্টের সূত্র ধরে ছড়িয়ে পড়ে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর সংবাদ। যদিও বেলা ১১টা নাগাদ অন্য এক পোস্টে তিনি জানান, হিথ স্ট্রিক বেঁচে আছেন। তার সঙ্গে কথাও হয়েছে ওলোঙ্গার। টুইটারে একটি চ্যাটের স্ক্রিনশট দিয়ে তিনি লিখেছেন, আমি নিশ্চিত ভাবে জানাতে চাই যে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। আমি নিজেই ওর মুখ থেকে শুনেছি যে ও এখনও জীবিত। থার্ড আম্পায়ার আবার ওকে ফিরিয়ে এনেছে। ও বেঁচে রয়েছে।
স্ক্রিনশটে স্ট্রিকের কথা, বেশ ভালোভাবে বেঁচে আছি। বন্ধু তাড়াতাড়ি খবর পাল্টে দাও, এখনই।’ জবাবে ওলঙ্গা, ‘হা, হা। শুনে খুব ভালো লাগলো। এসব ব্যাপার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক রাতেই তুমি মারা গেছো।
লিভার ও কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন প্রখ্যাত অনকোলোজিস্টের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্ট্রিক। গত মে মাসে তার পরিবার ক্যানসার আক্রান্তের কথা জানায়। মঙ্গলবার তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে ওলঙ্গা টুইটারে লেখেন, ‘দুঃসংবাদ আছে, হিথ স্ট্রিক পরপারে চলে গেছেন। শান্তিতে ঘুমাও লিজেন্ড। আমাদের সেরা অলরাউন্ডার। তোমার সঙ্গে খেলা ছিল আনন্দের। আমার বোলিং স্পেল শেষ হলে ওপারে দেখা হবে।
গত মে মাসেই জানা যায়, লিভার ও কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হিথ স্ট্রিকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি গুজব জানা যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ভক্তরা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টুইট করেছেন, হিথ স্ট্রিককে নিয়ে অনেক খবর পড়লাম, আমি খুব খুশি সেই খবর সত্যি ছিল না।
এর আগেই অবশ্য হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবরে বিভ্রান্ত হয়েছেন অনেকে। খবর চাউর হবার পরেই শোক জানিয়ে টুইট করেছেন বীরেন্দ্রর শেবাগ, ভিভিএস লক্ষণ, অনিল কুম্বলের মত তারকারা। তাদের প্রত্যেকেই অবশ্য নিজ নিজ টুইটার মুছে ফেলেছেন।
হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুতে বাংলাদেশেও নেমেছিল শোকের ছায়া। সকাল থেকেই বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইস্যু ছিলেন হিথ স্ট্রিক। শেষ পর্যন্ত তার বেঁচে থাকার খবরে নেটিজেনদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে হিথ স্ট্রিক পরিচিত এক নাম। ২০১৪ থেকে ২০১৬-এই দুই বছর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন স্ট্রিক। তার সময়ে চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয় বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্টের।
জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে কিংবদন্তি ক্রিকেটার হিসেবে লেখা রয়েছে হিথ স্ট্রিকের নামটি। দেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান স্ট্রিক। টেস্টে ১ হাজার রানের সঙ্গে ১০০ উইকেট এবং ওয়ানডেতে ২ হাজার রানের সঙ্গে ২০০ উইকেট নেওয়া জিম্বাবুয়ের একমাত্র পেসারও তিনি।
২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ছিলেন। দেশের হয়ে ৬৫ টেস্ট ও ১৮৯টি ওয়ানডে খেলে যথাক্রমে ২১৬ এবং ২৩৯টি উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতে টেস্টে ১৯৯০ রান করা স্ট্রিক ওয়ানডেতে করেছেন ২৯৪৩ রান।
২০০৫ সালে সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায় হিথ স্ট্রিককে। খেলা ছাড়ার পর কোচিংকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড এবং আইপিএলের দল গুজরাট লায়নস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে।
তার সুন্দর ক্যারিয়ারে শেষদিকে এসে একটি কালো দাগ লাগে। ক্রিকেট দুর্নীতিতে জড়িয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন স্ট্রিক।