স্পোর্টস ডেস্ক :
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে দিল্লি বহু দূর। সাধারণত কেউ যদি কোনো কিছু একেবারে সহজভাবে নেয়, সেক্ষেত্রে এই প্রবাদটা ব্যবহার করা হয়। এটা নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডের কেউ কখনো শোনেনি। তাদের জানার কিংবা বোঝারও কথা নয়। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জস বাটলারদের হারের পর এই প্রবাদ বাক্য প্রসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। খাতা-কলমে না হোক, ব্যাটে-বলে আজ রশিদ খানরা ইংলিশদের বুঝিয়ে দিয়েছেন দিল্লি বহু দূর!
এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বড় কোনো অঘটনের জন্ম দিলো আফগানিস্তান। আগের দুই ম্যাচে গো-হারা আফগানিস্তান দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে হারিয়ে দিয়েছে গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ৫ বলে ২৮৪ রান তুলে অলআউট হয় আফগানিস্তান।
জবাব দিতে নেমে আফগান স্পিনের সামনে খেই হারিয়ে ফেলে ইংলিশরা। মুজিব-উর রহমান, রশিদ খান এবং মোহাম্মদ নবির মায়াবি ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যার ফলে আফগানিস্তানের জয় এলো ৬৯ রানে।
এ নিয়ে তৃতীয় ম্যাচ খেললো আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ড। দুই দলই দুটি করে ম্যাচ হেরেছে এবং জিতেছে একটি করে ম্যাচ। ইংল্যান্ড হেরেছে নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের কাছে। আর আফগানিস্তান হারলো বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে।
২৮৫ রানের পুঁজি নিয়েই লড়াই করতে নামে আফগান বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারেই আফগানিস্তানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন বা হাতি পেস বোলার ফজল হক ফারুকি। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এই পেসার।
বেয়ারস্টো সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেও বাংলাদেশ আম্পায়ার সৈকতের বিচক্ষণ সঠিক সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখেন টিভি আম্পায়ার। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে যেন বিপদেই পড়ে ইংলিশরা।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ডেভিড মালান ও জো রুট কিছুটা বিপর্যয় সামাল দেন ৩০ রানের জুটি গড়ে। কিন্তু ৭ম ওভারেই সেই জুটি ভাঙেন স্পিনার মুজিব। তার অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন আগের দুই ম্যাচে অর্ধশতক করা জো রুট।
প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৫২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ইংল্যান্ডরা। আফগান স্পিনে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। ১৩তম ওভারে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ারন ডেভিড মালানকে আউট করে আবারো ইংল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ফেলেন অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবী। ১৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা এই বোলার বলে মালান শর্ট এক্সট্রা কাভারে ইব্রাহিম জারদানের হাতে ধরা পড়েন।
৯০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক জস বাটলারকেও হারায় তারা। নাভিন উল হকের অসাধারণ এক ইন সুইং ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হন জস বাটলার। মাত্র ১৮ বলে ৯ রান করেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। বাটলারের আউটের দুই ওভার পরেই রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন লিভিংস্টোন।
১১৭ রানে ৫ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের এক পাশে যখন ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিল চলছিল ঠিক অন্যপাশে আফগান বোলারদের উপর চড়াও হচ্ছিলেন হ্যারি ব্রুক। তুলে নিনে অর্ধশতকও।
২৮তম ওভারে আবারো ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার নবী। এবার তার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্যাম কারান। ক্রিস ওকসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩৩তম ওভারে তাকেও প্যাভিলিয়নে ফেরান মুজিব।
মুজিবের বোলিংয়ের কারিশমা তখনও শেষ হয়নি। এরপরের ওভার করতে এসেই ইংলিশদের এই ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান ৬১ বলে ৬৬ রান ব্রুককে আউট করলে কার্যত ইংলিশদের জয়ের আশা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এরপর শেষের দিকে আদিল রশিদ ২০, ক্রিস উড ১৮ ও রিস টপলি ১৫ রান করলেও তা ম্যাচ জয়ের মত যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৪০.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ইংলিশরা ২১৫ রানেই থামে।
আফগানিস্তানের হয়ে মুজিব ৩টি, নবী ও রশিদ খান ২টি, ফজলহক ফারুকী ও নাভিন উল হক ১টি করে উইকেট পান।
এর আগে, টসে হেরে দিল্লির ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করে দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। উদ্বোধনী জুটিতে তারা গড়েন ১১৪ রান। জাদরান ৪৮ বলে ২৮ রান করে আদিল রশিদের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন। এরপর গুরবাজকে সঙ্গ দিতে আসেন রহমত শাহ। তবে ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রহমত। আউট হন ৩ রান করে। তাকেও ফেরান আদিল রশিদ।
অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ। ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৮০ রান করে ফেরেন এ আফগান ওপেনার। এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১৯ ও মোহাম্মদ নবি ৯ রান করে ফিরলে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন রশিদ খান ও ইকরাম আলী খিল। এই দু’জনে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৪৩ রান। রশিদ ২২ বলে ২২ করে আউট হলে ফের চাপে পড়ে আফগানরা।
শেষ দিকে আফগানদের হাল ধরেন তরুণ ব্যাটার ইকরাম। ৬৬ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় ৫৮ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। এছাড়া ১৬ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন মুজিব উর রহমান। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৫ ওভারে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রানে থামে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ২৮৮। কাছাকাছি এসেও সেটা টপকাতে পারেনি তারা।
ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন আদিল রশিদ। ২টি উইকেট পান মার্ক উড। এছাড়াও একটি করে উইকেট নেন রিচ টপলি, জো রুট ও লিয়াম লিভিংস্টোন।
এ নিয়ে বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে দুটিতে হারল ইংলিশরা। অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে এটিই ছিল আফগানদের প্রথম জয়।