Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বকে রক্ষায় পারস্পারিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পারস্পারিক সহযোগিতাই বিশ্ব ও বিশ্ব মানবতার অস্বিত্ব রক্ষার একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলনের প্রথম দিন দেওয়া বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্যে মানবতার সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও দারিদ্র দূরীকরণ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমাদের এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যার মধ্যদিয়ে দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও সংঘাত মোকাবিলা করার পথ সুগম হবে।

শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে তার চার দফা সুপারিশে এই আহ্বান জানান।

সুপারিশের প্রথম পয়েন্টে বলেছেন, এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শেখ হাসিনা দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত।

তৃতীয়ত, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ত্রয়ীকার সদস্য হিসেবে তিনি বলেন, ‘জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন কপ-২৮ এ, আমি সবাইকে জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্ষতি এবং ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে অভিমত ব্যক্ত করেন, সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে ও শক্তিশালীকরণে জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একে অপরের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আমাদের মাতৃ-পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

২০২২ সালে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেখ হাসিনা উল্লিখিত সুপারিশগুলো করেছেন।

শীর্ষ সম্মেলনের এই অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই, যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরকে অর্থায়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ‘আমাদের মাতৃ পৃথিবী’ জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো মানুষ এবং আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।

‘অতএব, আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা সবুজ এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন, আমরা সার্কুলার অর্থনীতির পদ্ধতিও নিচ্ছি।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জলবায়ু সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে দায় নগন্য হলেও এর বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, সে কারণে আমরা এখন সবুজ ও টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছি।

সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা ও অভ্যাস গড়ে তুলতে ভারতের প্রধান নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘লাইফস্টাইল’ আন্দোলনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ বিষয়ক এই আন্দোলনকে সমর্থন করে।

বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ কম। প্যারিসচুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় অনেক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি গৃহহীনদের জন্য ‘আশ্রয়ণ’ বা ‘আশ্রয়’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তার সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।

তিনি বলেন ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করা।’

বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অবস্থা অর্জন করেছে।

দুর্যোগ মেকাবিলার জন্য তার সরকার ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ চালু করেছি।’’

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানাই।

এর আগে ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার কিছু পরে সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এ দিন সকালে নয়াদিল্লির ভারত মন্ডপম কনভেনশন সেন্টারে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। একে একে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বনেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানান নরেন্দ্র মোদি।

সভার প্রথম অধিবেশন চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে বিকেল ৩টায়। প্রথম ধাপে আলোচনার বিষয় হবে ‘ওয়ান আর্থ’। দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় ‘ওয়ান ফ্যামিলি’। এর মাঝেই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন অতিথিরা।

এবার ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’, এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জি-২০ এর ১৯টি দেশ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জি-২০ সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ববাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি।

ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল। দেশটির মেয়াদকালীন বাংলাদেশসহ সদস্য নয় এমন ৯টি দেশকে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায় ভারত। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি পৌঁছান। এরপরই গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ শনিবার অনুষ্ঠান শুরুর প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের সাইডলাইনে একাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধান, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট রয়েছেন।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতার সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা’ গৃহীত হবে। কালই প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ

বিশ্বকে রক্ষায় পারস্পারিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পারস্পারিক সহযোগিতাই বিশ্ব ও বিশ্ব মানবতার অস্বিত্ব রক্ষার একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলনের প্রথম দিন দেওয়া বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্যে মানবতার সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও দারিদ্র দূরীকরণ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমাদের এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যার মধ্যদিয়ে দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও সংঘাত মোকাবিলা করার পথ সুগম হবে।

শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে তার চার দফা সুপারিশে এই আহ্বান জানান।

সুপারিশের প্রথম পয়েন্টে বলেছেন, এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শেখ হাসিনা দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত।

তৃতীয়ত, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ত্রয়ীকার সদস্য হিসেবে তিনি বলেন, ‘জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন কপ-২৮ এ, আমি সবাইকে জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্ষতি এবং ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে অভিমত ব্যক্ত করেন, সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে ও শক্তিশালীকরণে জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একে অপরের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আমাদের মাতৃ-পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

২০২২ সালে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেখ হাসিনা উল্লিখিত সুপারিশগুলো করেছেন।

শীর্ষ সম্মেলনের এই অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই, যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরকে অর্থায়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ‘আমাদের মাতৃ পৃথিবী’ জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো মানুষ এবং আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।

‘অতএব, আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা সবুজ এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন, আমরা সার্কুলার অর্থনীতির পদ্ধতিও নিচ্ছি।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জলবায়ু সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে দায় নগন্য হলেও এর বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, সে কারণে আমরা এখন সবুজ ও টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছি।

সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা ও অভ্যাস গড়ে তুলতে ভারতের প্রধান নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘লাইফস্টাইল’ আন্দোলনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ বিষয়ক এই আন্দোলনকে সমর্থন করে।

বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ কম। প্যারিসচুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় অনেক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি গৃহহীনদের জন্য ‘আশ্রয়ণ’ বা ‘আশ্রয়’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তার সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।

তিনি বলেন ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করা।’

বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অবস্থা অর্জন করেছে।

দুর্যোগ মেকাবিলার জন্য তার সরকার ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ চালু করেছি।’’

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানাই।

এর আগে ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার কিছু পরে সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এ দিন সকালে নয়াদিল্লির ভারত মন্ডপম কনভেনশন সেন্টারে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। একে একে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বনেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানান নরেন্দ্র মোদি।

সভার প্রথম অধিবেশন চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে বিকেল ৩টায়। প্রথম ধাপে আলোচনার বিষয় হবে ‘ওয়ান আর্থ’। দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় ‘ওয়ান ফ্যামিলি’। এর মাঝেই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন অতিথিরা।

এবার ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’, এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জি-২০ এর ১৯টি দেশ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জি-২০ সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ববাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি।

ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল। দেশটির মেয়াদকালীন বাংলাদেশসহ সদস্য নয় এমন ৯টি দেশকে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায় ভারত। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি পৌঁছান। এরপরই গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ শনিবার অনুষ্ঠান শুরুর প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের সাইডলাইনে একাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধান, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট রয়েছেন।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতার সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা’ গৃহীত হবে। কালই প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।