স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো হারের স্বাদ নিলো আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ হেরেছিল কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে। কিন্তু এরপর বিশ্বকাপটাই নিজের করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমায় গত প্রায় এক বছরে শাসন করেছে প্রতিপক্ষকে। তবে উরুগুয়ের কাছে এসে থামলো তাদের অজেয় ধারা।
আর ছয়টা দিন পার হলে পুরো একটা বছর অপরাজিত থাকার স্বাদ পেতো আর্জেন্টিনা। কিন্তু ভুলে যাওয়া হারের স্বাদ পেতে হলো ঘরের মাঠে। ম্যাক্সি আরাউজো ও ডারউইন নুনেজের গোলে আর্জেন্টিনার ১৪ ম্যাচের জয়যাত্রার অবসান হলো। শুধু তা-ই নয়, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড থেমে গেল।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকালে ২০২৬ বিশ্বকাপের লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। রোনালদ আরাউহো দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডারউইন নুনেস।
দশম মিনিটে প্রথম ভালো আক্রমণ শাণায় উরুগুয়েই। সতীর্থের লং পাস গতিতে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস ওতামেন্দিকে পেছনে ফেলে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ডারউইন নুনেস, কিন্তু তার নেওয়া শট চলে যায় পোস্টের বেশ বাইরে দিয়ে। তিন মিনিট পর মেসির শট আটকান উরুগুয়ে গোলরক্ষক।
পায়ের কিছু কারিকুরি, দারুণ কিছু মুভ দেখালেও প্রথম অর্ধে উরুগুয়ের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারেননি প্রায় এক মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার মধ্যে না থাকা মেসি। আর্জেন্টাইন তারকাকে কড়া পাহারায় রাখার কৌশল নিয়েছিলেন উরুগুয়ে কোচ বিয়েলসা।
৪১তম মিনিটে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় উরুগুয়ে। বাঁ দিকে মলিনার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বাইলাইনের একটু উপর থেকে বক্সে ক্রস বাড়ান মাতিয়াস ভিনা। ক্লিয়ার করতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোনো ডিফেন্ডার। রোনালদ আরাউহোর কোনাকুনি শটে পরাস্ত এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বিরতির আগে আর সমতায় ফিরতে পারেনি আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে উরুগুয়ে। তবে ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েও কপালের কাছে হেরে যান আর্জেন্টিনার তারকা লিওনেল মেসি। বক্সের বাইরে থেকে করা ফুটবল জাদুকর মেসির ফ্রি-কিক উরুগুয়ের গোলপোস্টে আঘাত করে ফেরত আসে।
এরপর ম্যাচে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। একের পর এক ফাইল করে হলুদকার্ড দেখতে থাকেন দুই দলের ফুটবলাররা। পুরো ম্যাচে মোট সাতবার সতর্কতামূলক হলুদকার্ড বের করেন রেফারি। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার ফুলবলাররা কার্ডটি দেখেছেন চারবার। অপরদিকে উরুগুয়ে এই কার্ডটি দেখেছে তিনবার।
৮১তম মিনিটে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন ডি মারিয়া, কিন্তু তার কোনাকুনি শট যায় দূরের পোস্টের বাইরে। স্কালোনির বিষন্ন মুখ ভেসে ওঠে পর্দায়। একটু পর কর্নারে ওতামেন্দির হেড ফিস্ট করে ফিরিয়ে উরুগুয়েকে জয়ের পথে রাখেন গোলরক্ষক।
৮৭তম মিনিটে উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত করে দেন নুনেস। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে এক ছুটে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে জাল কাঁপান এই ফরোয়ার্ড।
কেন এমন হার, সেই কারণ খুঁজে পেয়েছেন মেসি। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের জন্য খেলাটা কঠিন ছিল। তারা আক্রমণাত্মক ছিল। মাঠে শারীরিক শক্তিনির্ভর ও দ্রুতগতির ফুটবল খেলেছে। তাই আমাদের জন্য সেরাটা খেলা কঠিন ছিল। আমরা মাঠে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম না। বল বেশিক্ষণ পায়ে রাখার উপায় বের করতে পারিনি। তারা শারীরিক শক্তিনির্ভর দল, সেটাই তাদের কাজে দিয়েছে।’
আগামী বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিশ্চিতভাবে বড় ধাক্কা খেলো আর্জেন্টিনা। যদিও এই হারে তাদের বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। ৫ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে মেসিরা। আর্জেন্টিনার মাঠে প্রথমবার জিতলো উরুগুয়ে, তাতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেলো তারা।