নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন দেশে এক ধরনের প্রচারণা চলছে- একজন বিশেষ কেউ ভালো, আর বাকি সবাই খারাপ। এটা গণতন্ত্রণের জন্য ডেঞ্জেরাস (বিপজ্জনক) ব্যাপার।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর একটা দল প্রচার করত, শুধু তারাই ভাল আর বাকি সবাই খারাপ। ৫ তারিখের পর সেটির বোধ হয় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, এখনো আবার এক ধরনের প্রচারণা চলছে যে, একজন ভালো, আর বাকি সবাই খারাপ। এসব প্রচারণা পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না।
কারও নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি গত ১৬ বছর ধরে। দুঃখজনকভাবে হলেও ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে সেটির বোধ হয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে। মতামত দেওয়ার অধিকার তার আছে। বক্তব্য রাখার অধিকার তার আছে। কিন্তু অবশ্যই একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে– উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। একজন বিশেষ কেউ ভালো বাকি সবাই খারাপ এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ডেঞ্জারাস (বিপজ্জনক) একটা ব্যাপার।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেশকে সৎ মানুষের শাসন দেব, আমরা দেশে ন্যায়বিচার স্থাপন করব, আমরা দেশে এই করব, এসব ভেক টার্মে অনেকের অনেক বক্তব্য আছে অনেক রাজনৈতিক দলের। কিন্তু আজ সারা দিন তোমরা একদম স্পেসিফিক প্রিসাইসলি (সুনির্দিষ্টভাবে) মানুষকে টাচ করে, মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, মানুষের জীবনকে গড়ে তোলে এই রকম প্রিসাইজ আলোচনা আর কোনো রাজনৈতিক দল করেছে?’
দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপি যাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাদের জন্য কাজ করতে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘হয়তো এমনও হতে পারে তোমার এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে… একটা তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে আমাদেরকে। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কমবেশি যেটা মনে হয়েছে, ভালো হবে, আমরা সেটি নিয়েছি। হয়তো তুমি একজনকে পছন্দ করতে, সে হয়তো পায়নি। যে পেয়েছে তার সাথে হয়তো তোমার সম্পর্ক আছে, হয়তো অতটা না, একটু কম সম্পর্ক। ভাইরে, তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছো না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছো।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আগামী দুই মাসের কাজ হলো, জনগণকে বিএনপির পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাদের সমর্থন যোগাড় করা।
নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া প্রার্থী বিবেচনায় না নিয়ে দলের পক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়ত এমনও হতে পারে তোমার এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে, হয়ত তুমি একজনকে পছন্দ করতে সে হয়ত পায়নি। যে পেয়েছে তার সঙ্গে হয়ত তোমার সম্পর্ক আছে একটু কম।ভাইরে তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছ না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছ। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ, এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব ইনশাল্লাহ।”
তারেক রহমানবলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো…এগুলো আমরা পরিকল্পনার মধ্যে রাখব না। এগুলোকে আমরা যেকোনো মূল্যে ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন করব জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে। আমাদের আজকে প্রতিজ্ঞা, আমাদের আজকের কর্মপন্থা হল আমাদের এই পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গেই আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করব। এটাই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী দুই মাসের কাজ। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।
খাল খনন, বায়ু দূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারাদেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মাস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে নেতাকর্মীদের তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’ এরকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি। দুঃখজনক হলেও ২০২৪ সালের ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে সেটির বোধ হয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়, এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
“আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে, মতামত দেওয়ার অধিকার তার আছে, বক্তব্য দেওয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু বিশেষ একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কেন নেই? বিগত যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। কেন আন্দোলন করেছি? কারণ সেখানে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কি মরে যাচ্ছে তার কোনো জবাবদিহিতা ছিল না।
“একমাত্র গণতন্ত্র সমাজে দেশে ও রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার।”
তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইমিডিয়েট ভবিষ্যৎ তোমাদের উপরে। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও তাহলে এদেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে।”
“তা নাহলে একটি ভয়াবহ কিছু হয়ত অপেক্ষা করছে। আমরা যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, ডা. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















