রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় বিয়ের রাতেই আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বর শাকিল হোসেনের (২১) মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বিয়ের রাতে বরের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত শাকিল হোসেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে। তিনি পেশায় চাল ব্যবসায়ী। নববধূ উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের আসমা খাতুন।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে একই উপজেলার বিদিরপুর গ্রামে শাকিলের বিয়ে হয়। দুপুরে কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেলে বরপক্ষ কনে নিয়ে আসে। বিয়ে উপলক্ষে শাকিলদের বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছিল। সন্ধ্যার পর শাকিল নিজেই বাড়ির আলোকসজ্জার বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেন।
আলোকসজ্জার বৈদ্যুতিক তার লিকেজ হয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিল বাড়ির বারান্দার গ্রিল। এটি জানতেন না শাকিল। রাত ৮টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বারান্দার গ্রিলে হাত দেন। এতে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়েন।
পরে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই তার মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে স্থানীয় গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
সকালে শাকিলের মরদেহ বাড়ির পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে তখনো বাড়িটিতে আলোকসজ্জার বাতি লাগানো ছিল। সাজানো ছিল বাসরঘরও। আজ বরপক্ষের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ির সামনে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছিল। সেই প্যান্ডেলের নিচে মন ভার করে বসে থাকতে দেখা গেছে আত্মীয়-স্বজনদের। সবার চোখেমুখে শোকের ছায়া। একটি ঘরে নির্বাক নববধূ আসমা খাতুনকে নিয়ে বসে ছিলেন স্বজনেরা।
পরিবারের লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বিকেলে বরপক্ষ কনে নিয়ে আসে বাড়িতে। সন্ধ্যার পর বর শাকিল নিজেই বাড়িতে আলোকসজ্জার বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেন। রাতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় গ্রিলের সঙ্গে লেগে থাকা ছেঁড়া আলোকসজ্জার বৈদ্যুতিক তারে হাত লাগে শাকিলের। এতেই শাকিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। শাকিলের এমন অবস্থা দেখে তার চাচা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে শাকিলকে রামেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাতেই তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শাকিলের মা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, আমার একটাই ছেলে। কত শখ করে তার বিয়ে দিলাম। আমার ছেলে, ছেলের বউ বাড়িতে থাকবে। কত আনন্দ করব। আমার আর কিছুই থাকল না। ছোট মেয়েটাকে এখন কী করে সান্ত্বনা দিব আমি। এই মেয়েটার এখন কী হবে।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ছেলেটা আমাদের চোখের সামনে বড় হলো। খুবই ভালো ছেলে ছিল সে। বিয়ের দিন তার এভাবে মারা যাওয়াটা মেনে নেওয়ার মতো না। তার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষের মধ্যে শোক নেমে এসেছে।’
গোদাগাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।