Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজ থেকে উধাও ৫৫ কেজি সোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা খোয়া গেছে বলে চাউর হয়েছে। তবে খোয়া যাওয়া স্বর্ণের পরিমাণ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কেউ মুখ খোলেননি।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতেই বিমান বন্দর থানায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে। মামলায় গুদাম ইনচার্জসহ মোট চারজনকে আসামি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত সোনার হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ সোনা উধাও হলো, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টম হাউসের কোনো কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বর্ণের গুদাম যেখানে, সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এছাড়া পুরো এলাকাটি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই কাস্টম হাউসের গুদামটির অবস্থান। কাস্টম হাউসের গুদামটিতে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ঢাকা কাস্টম হাউস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর জব্দকৃত মালামালগুলো এখানে রাখা হয়।

জানা গেছে, সোনার অলংকার ও সোনার বার মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা কাস্টমের গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেই বাক্সটিই চুরি হয়ে গেছে। গুদামের আলমারি ভেঙে চুরি করা হয়েছে বাক্সটি। কীভাবে এই সোনা গায়েব হয়েছে, তা জানতেই এখন বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফট কাজ করে। এই শিফটগুলোতে জব্দ হওয়া সোনা এক গুদামেই রাখা হতো এতদিন। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ শিফট ভিত্তিক জব্দ হওয়া সোনা আলাদা আলাদা লকারে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে শিফট জব্দ করবে তাদের জব্দ করা সোনা তাদের লকারে থাকবে।

প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ খবর পান প্রায় ৫৫ কেজি সোনা গুদামে নেই। এরপর একটি কমিটি করে দেওয়া হয় গুদামের সব সোনা গণনা করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা মেলে।

আরও জানা যায়, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি সোনা ছিল। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া সোনা থেকে ওই চুরির ঘটনা ঘটেছে।

কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আমাদের আইনি পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

তবে রোববার ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন, তদন্তের পর মামলা করা হবে।

কাস্টমস হাউসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই জব্দ করা মালামাল গুদাম থেকে চুরি হচ্ছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টমস হাউস কাজ করছিল। শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমস হাউজের আলাদা দুটি টিম গুদামের মালামালের তালিকা প্রস্তুত করা এবং গুদাম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। গতকাল (শনিবার) একটি টিম দেখতে পায় যে, বাইরে থেকে তালা অক্ষত থাকলেও ভেতরের লকার ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এরপরই সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। গুদামের মালামালের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই চুরি হওয়া প্রকৃত মালামাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য বের করা সম্ভব হবে।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, এখানে আসলে পণ্য খোয়া যাওয়ার মতো ঘটনা প্রায়শই আমাদের চোখে পড়েছে। এটা আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি যে এখানে একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে বা পণ্য সরানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোর সহায়তা চায় কাস্টমস হাউস। চলছে যৌথ ছায়া তদন্ত। পাহারাদাররা সরিয়েছেন নাকি কোনো চক্র চুরি করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের যে শুল্ক গোডাউন আছে স্বাভাবিক ভাবে আমরা নিজেরাও এটাকে খুব নিরাপদ মনে করতাম। অফিসাররা তালাবদ্ধ করে এটা থেকে বের হয়ে এসেছেন। অন্যান্য সংস্থাও এটা দেখেছে। কোনো একটি জায়গাতে একটু লিকেজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, খোয়া যাওয়া সোনার পরিমাণ কত সেটি এখনই জানাতে পারেননি তিনি। ওসি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি দল কাস্টম হাউসে গিয়েছে। ঘটনা সত্য। তবে, এখনো দালিলিক অভিযোগপত্র হাতে আসেনি। তাই কী পরিমাণ সোনা খোয়া গেছে, সেটি বলা সম্ভব নয়। অভিযোগপত্র হাতে এলে বিস্তারিত জানানো যাবে।

আবহাওয়া

বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজ থেকে উধাও ৫৫ কেজি সোনা

প্রকাশের সময় : ১১:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা খোয়া গেছে বলে চাউর হয়েছে। তবে খোয়া যাওয়া স্বর্ণের পরিমাণ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কেউ মুখ খোলেননি।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতেই বিমান বন্দর থানায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে। মামলায় গুদাম ইনচার্জসহ মোট চারজনকে আসামি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত সোনার হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ সোনা উধাও হলো, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টম হাউসের কোনো কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বর্ণের গুদাম যেখানে, সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এছাড়া পুরো এলাকাটি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই কাস্টম হাউসের গুদামটির অবস্থান। কাস্টম হাউসের গুদামটিতে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ঢাকা কাস্টম হাউস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর জব্দকৃত মালামালগুলো এখানে রাখা হয়।

জানা গেছে, সোনার অলংকার ও সোনার বার মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা কাস্টমের গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেই বাক্সটিই চুরি হয়ে গেছে। গুদামের আলমারি ভেঙে চুরি করা হয়েছে বাক্সটি। কীভাবে এই সোনা গায়েব হয়েছে, তা জানতেই এখন বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফট কাজ করে। এই শিফটগুলোতে জব্দ হওয়া সোনা এক গুদামেই রাখা হতো এতদিন। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ শিফট ভিত্তিক জব্দ হওয়া সোনা আলাদা আলাদা লকারে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে শিফট জব্দ করবে তাদের জব্দ করা সোনা তাদের লকারে থাকবে।

প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ খবর পান প্রায় ৫৫ কেজি সোনা গুদামে নেই। এরপর একটি কমিটি করে দেওয়া হয় গুদামের সব সোনা গণনা করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা মেলে।

আরও জানা যায়, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি সোনা ছিল। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া সোনা থেকে ওই চুরির ঘটনা ঘটেছে।

কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আমাদের আইনি পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

তবে রোববার ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন, তদন্তের পর মামলা করা হবে।

কাস্টমস হাউসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই জব্দ করা মালামাল গুদাম থেকে চুরি হচ্ছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টমস হাউস কাজ করছিল। শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমস হাউজের আলাদা দুটি টিম গুদামের মালামালের তালিকা প্রস্তুত করা এবং গুদাম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। গতকাল (শনিবার) একটি টিম দেখতে পায় যে, বাইরে থেকে তালা অক্ষত থাকলেও ভেতরের লকার ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এরপরই সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। গুদামের মালামালের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই চুরি হওয়া প্রকৃত মালামাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য বের করা সম্ভব হবে।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, এখানে আসলে পণ্য খোয়া যাওয়ার মতো ঘটনা প্রায়শই আমাদের চোখে পড়েছে। এটা আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি যে এখানে একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে বা পণ্য সরানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোর সহায়তা চায় কাস্টমস হাউস। চলছে যৌথ ছায়া তদন্ত। পাহারাদাররা সরিয়েছেন নাকি কোনো চক্র চুরি করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের যে শুল্ক গোডাউন আছে স্বাভাবিক ভাবে আমরা নিজেরাও এটাকে খুব নিরাপদ মনে করতাম। অফিসাররা তালাবদ্ধ করে এটা থেকে বের হয়ে এসেছেন। অন্যান্য সংস্থাও এটা দেখেছে। কোনো একটি জায়গাতে একটু লিকেজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, খোয়া যাওয়া সোনার পরিমাণ কত সেটি এখনই জানাতে পারেননি তিনি। ওসি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি দল কাস্টম হাউসে গিয়েছে। ঘটনা সত্য। তবে, এখনো দালিলিক অভিযোগপত্র হাতে আসেনি। তাই কী পরিমাণ সোনা খোয়া গেছে, সেটি বলা সম্ভব নয়। অভিযোগপত্র হাতে এলে বিস্তারিত জানানো যাবে।