Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনামূল্যে বিতরণের দুই ট্রাক বই জব্দ, আটক ২

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৯৩ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই খোলাবাজারে বিক্রয় ও মজুতদারি চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটকসহ দুই ট্রাক বই জব্দ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বইগুলো জব্দ ও তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আটক দুজন হলেন, সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫) ও মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৬)। তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়।

ডিএমপি জানায়, কতিপয় অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের বই মজুতদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাবাজার এলাকায় এই অভিযান চালায় ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। অভিযানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার বই জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, আটককৃতরাসহ অন্যান্য অবৈধ মজুতদারিরা বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করা এবং অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব বই মজুত করে বিক্রয় করে আসছিল।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রির উদ্দেশে মজুদ করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে। সিরাজুল ও দেলোয়ারের বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে জানানো হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তরের কথাও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বই এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে।’

অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে এ রকম ১১৬টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কিনা বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এনসিটিবি অথবা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কেউ জড়িত কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এনসিটিবির দুটা গোডাউন রয়েছে, একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গ্রেফতার সিরাজুল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়ছিল জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সে ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিল। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেটা দেখা গেছে গত বছরেও। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে।

নতুন বছরের প্রথম দুই দিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কালিয়াকৈরে রেলক্রসিংয়ে ট্রাক বিকল, ৩ ঘণ্টা পর শুরু উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল

বিনামূল্যে বিতরণের দুই ট্রাক বই জব্দ, আটক ২

প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই খোলাবাজারে বিক্রয় ও মজুতদারি চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটকসহ দুই ট্রাক বই জব্দ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বইগুলো জব্দ ও তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আটক দুজন হলেন, সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫) ও মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৬)। তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়।

ডিএমপি জানায়, কতিপয় অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের বই মজুতদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাবাজার এলাকায় এই অভিযান চালায় ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। অভিযানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার বই জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, আটককৃতরাসহ অন্যান্য অবৈধ মজুতদারিরা বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করা এবং অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব বই মজুত করে বিক্রয় করে আসছিল।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রির উদ্দেশে মজুদ করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে। সিরাজুল ও দেলোয়ারের বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে জানানো হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তরের কথাও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বই এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে।’

অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে এ রকম ১১৬টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কিনা বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এনসিটিবি অথবা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কেউ জড়িত কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এনসিটিবির দুটা গোডাউন রয়েছে, একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গ্রেফতার সিরাজুল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়ছিল জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সে ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিল। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেটা দেখা গেছে গত বছরেও। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে।

নতুন বছরের প্রথম দুই দিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।