নিজস্ব প্রতিবেদক :
শ্রম আইন অনুসরণ না করে বিধিবহির্ভূত শ্রমিক ছাঁটাই করলে কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ে আরএমজি খাতের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) ২০তম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঈদের পর শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে বলে সরকারকে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য দিয়েছে। এ ধরনের চেষ্টা হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। যারা পোশাকখাত নিয়ে চক্রান্ত করবে তারা দেশের শত্রু।
শ্রমিক ছাঁটাই ও অসন্তোষেরন বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দিচ্ছে- ঈদের পর শ্রমিকরা যখন কাজে ঢুকবে তখন বড় ধরনের ছাঁটাই করা হবে, আরেকটা উত্তেজনা তৈরি করা হবে। এই কারণে আজকে মিটিং করেছি। ছাঁটাই করতে হলে আইন অনুযায়ী করতে হবে।
তিনি বলেন, ছাঁটাই করতে হলে আইন অনুযায়ী করতে হবে। শিল্প পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, আর্মি এবং কলকারখানা পরিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়কে অভিহিত না করে বিধিবহির্ভূতভাবে যদি ছাঁটাই করা হয়- তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবো। ধরে নেবো তিনি এই ছাঁটাই করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে আরেকবার পানি ঘোলার চেষ্টা করছেন।
পাশাপাশি ছাঁটাই নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সরকারের দপ্তরগুলোতে তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কেউ রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিক্ষোভের অধিকার আছে, রাস্তা ব্লক করার অধিকার নেই। কেউ যদি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে ’বিচিত্ররকমের’ উস্কানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক শ্রমিক নেতা উস্কানি দিচ্ছে। উস্কানি যারা দিচ্ছে তাদেরকে খুঁজে বের করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রমিকদের অসৎ উদ্দেশ্যের উদাহরণ দিয়ে সচিব বলেন, সোমবার টিএনজেডের শ্রমিকরা কারখানার কাছে সমাবেশ করেছে। তারা এ বৈঠকে না এসে ওখানে সমাবেশ করছে কেন? আবার তারা পানি ঘোলা করবে। সমস্যার সমাধানের জন্য যখন আলোচনা চলছে, তখন আরেক গ্রুপ শ্রমিক বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাসে চড়ে এসে শ্রম ভবনের সামনে বসে আছে। এগুলো কেন হবে?
”পুরো বিষয়টা খুব সহজভাবে দেখলে হবে না। এটার পেছনে অনেক বিষয় আছে। একটি পক্ষ আছে যারা চাচ্ছে না যে আমাদের কারখানাগুলো চলুক। তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের দিয়ে নানা রকম সমস্যা তৈরি করছে। তারা সত্যিকার অর্থে এই দেশের শত্রু। আরএমজিটা ড্যামেজ করা গেলে এই দেশের ক্ষতি করা যাবে। ৪০ লাখ শ্রমিক যদি ভালো থাকে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।
দুই দফায় গাজীপুরের পোশাক কারখানা ‘টিএনজেড অ্যাপারেলসকে’ টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু কোম্পানিটির চারটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সচিব বলেন, “এই কোম্পানি আর চালানো যাচ্ছে না। নভেম্বরে ১৬ কোটি টাকা দিয়েছি, এখন আবার ১৭ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে। আবার কোরবানিতে ১৫ কোটি টাকা বকেয়া হবে, এটা তো হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয়েছে টিএনজেডের চারটি কারখানাই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ৩২০০ জন।”
টিএনজেডের ক্ষেত্রে বেক্সিমকো মডেল প্রয়োগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে ৪০ হাজার শ্রমিকের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া যেভাবে মালিক পরিশোধ করেছে, টিএনজেডের বকেয়াও মালিক পরিশোধ করবে। তাকে দেশে ফিরতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
”তার রিবুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি করব। তার ওপর কোনোরকম ট্রাস্ট রাখতে পারছি না। সে বিদেশে বসে আছে, দেশে আসার লক্ষণ নেই।”
টিএনজেডের সমস্যার সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে। শ্রমিকদের পাওনা কত আছে বের করা হবে। সম্পদ বিক্রি করলে কীভাবে কী হবে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তারা দেবে। আজ থেকে কারখানাটি আমরা হেফাজতে নিয়েছি।”