নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতা না পেয়ে দিশেহারা পথিকের মতো বেসামাল বক্তব্য দিচ্ছে। মির্জা ফখরুলের মানসিক ট্রমা ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে। বিদেশি বন্ধুরা ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, বিএনপির সেই স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে গেছে।
শুক্রবার (২৪ মে) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের ইচ্ছায় আমরা দেশ শাসন করছি। বিএনপি পথ হারিয়ে দিশেহারা পথিকের মত বেসামাল বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের শক্তি কমে এসেছে ক্রমান্বয়ে নেতিবাচক রাজনীতির জন্য।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুঃশাসন ও জুলুম চালাচ্ছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলের মানসিক ট্রমা মনে হয় ভয়ংকর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তিনি ও তার দলের নেতারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তারা আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ। তাদের এদিকও নেই, ওদিকও নেই। বন্ধুরাও আগের মতো এসে তাদের উৎসাহিত করে না।
বিএনপি মহাসচিবকে নিয়ে তিনি বলেন, আগে ঘুম থেকে উঠেই মির্জা ফখরুল মার্কিন দূতাবাসে হাজির হয়ে নাস্তা করতে যেতেন, রাতেও খুঁজে পাওয়া যেত না। বিদেশীরা ক্ষমতায় বসাবে সে কর্পূরও উড়ে গেছে।
এই সরকারের আমলে কোন নিরীহ লোক হয়রানি, জেল জুলুমের শিকার হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখন আপনাদের দল প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশকে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছেন। এইসব অপরাধের সাথে যারা জড়িত তারা তো অপরাধী। তাদেরকে বিএনপি হিসেবে আটক করা হয়নি, আটক করা হয়েছে খুন, আগুন সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে।
বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনা করে কাদের বলেন, কয়দিন আগে চাপাইনবাবগঞ্জে একজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে জানা গেলো তিনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অথচ ফখরুল সাহেব তার পক্ষে এক বিরাট বিবৃতি দিয়ে বসলেন। খুনি, সন্ত্রাস ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাথে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার যে প্র্যাক্টিস (চর্চা) তারা এখনো তা করে যাচ্ছে। এখানে কোন ছাড় নেই।
পৃথিবীতে এই বছর ৬৪টি দেশে নির্বাচন হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার মধ্যে যুক্তরাজ্যও আছে। তাদের নির্বাচন জুলাইয়ের ৪ তারিখ। আফ্রিকার অনেক দেশে ইতিমধ্যে নির্বাচন হয়ে গেছে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভোটার টার্নআউট আমি বলবো সন্তোষজনক। বিএনপির ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিবিসি বলেছলো ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে ২১ শতাংশ দেখিয়েছে। এবার তার ডাবল। এটা কে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বলবেন কম!
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন থেকে সিইসি বলেছেন ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ -এর বেশি। আর এবার দ্বিতীয় ধাপে পড়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। তার মানে এই বার এক শতাংশ বেশি।
তিনি বলেন, ‘টিকটক, ফেসবুকে বিএনপি এত মিথ্যাচার ও নোংরাভাবে আমাদের আক্রমণ করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে। এরপরও তারা বলে- সরকার নাকি তাদের ওপর জুলুম করছে। আসলে বিএনপির এসব বক্তব্য অবান্তর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা অর্জন করেছে, দখল নয়। বিএনপি বলছে দখল। জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচনের পর পৃথিবীর অনেক দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। আমরা বিএনপিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিটি পড়তে বলব।’
বিশিষ্ট সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের কথা স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, শরৎচন্দ্রের কথা, মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন তার মুখে বিষ উগ্র হয়ে নেমে আসে। বিএনপির মুখের বিষ এতই উগ্র, ফেসবুকের যে অপপ্রচার, টিকটকে আমাদের যে নোংরাভাবে আক্রমণ করে এটা কি সম্ভব কোন গণতান্ত্রিক দেশে? প্রধানমন্ত্রী কে যেভাবে আক্রমণ করে! এসব করার পরেও বলে সরকার জুলুম করছে, নির্যাতন করছে। এমন কোন বাজে কথা নেই, তাদের নেতারা প্রতিদিন উচ্চারণ করে না। সেটার জন্য তো কারো গলা টিপে ধরা হয়নি। কাজেই এসব অবান্তর বক্তব্যের কোন মূল্য নেই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা অর্জন করেছে, ক্ষমতা দখল করেনি মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা হলো ক্ষমতা অর্জন, আর বিএনপি বলছে ক্ষমতা দখল। জনগণের ভোটে আমরা ক্ষমতা অর্জন করেছি, এটা আমাদের এচিভমেন্ট। এটা আমাদের অর্জন, ক্ষমতা দখল নয়। মনে হয় যেনো বন্দুকে নল উচিয়ে তাদের নেতা যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, নির্বাচন করে যেনো আমরা ক্ষমতা সেভাবেই দখল করেছি। সারা দুনিয়া জানে। যে কারণে নির্বাচনের আগে দুনিয়ার অনেকেই সমালোচনা করেছে কিন্তু নির্বাচনের পরে! বাইডেনের চিঠিটা আমরা তাদের পড়তে বলবো। যে কারণেই হউক, তিনিও এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
অপরাধের বিষয়ে সরকারের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক অপরাধ অপকর্ম করতে পারে। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার এ ব্যাপারে তাদের অপরাধ-অপকর্মে শাস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সৎ সাহস দেখিয়েছে কিনা। শেখ হাসিনার সরকারের সে সৎ সাহস আছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি কেউ অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় আমরা কেন প্রটেকশন দিব? অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখে সমর্পণ করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে যাদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগ। সরকার তাদের প্রটেকশন দিতে যায়নি। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সরকার কাউকে প্রটেকশন দেয়নি। ব্যক্তি অপরাধ করতে পারে। কিন্তু সরকার তাকে প্রটেকশন কেন দেবে? আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি। সে যতই প্রভাবশালী হোক অপরাধ করলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
সাবেক আইজিপির সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানের নিষেধাজ্ঞায় সরকার বিব্রত কি না? প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক অপরাধ করতে পারে, প্রশ্ন থেকে যায় সরকার অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে সৎ সাহস দেখিয়েছে কি না। শেখ হাসিনা সরকারের সেই সৎ সাহস আছে। কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন। সেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না। সেখানে কোনো সাবেক আইজিপি বা কোনো সাবেক সেনাপ্রধান যে-ই থাকুক না কেন সরকারের কাউকে প্রটেকশন দেওয়ার বিষয়ে নেই।
এসময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি ও নির্মল চ্যার্টাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।