Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজিবি সদস্যের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয়: বিজিবি ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে গত ২২ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মো. রইশুদ্দীনের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয় বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

শনিবার (৯ মার্চ) সকালে ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষদিন বিজিবি-বিএসএফ ডিজির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বিজিবি সদস্য মো. রইশুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় সেদিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ডিজি নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে সেদিন কী ঘটেছিল। আমি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাই না, বিষয়টি অফিসিয়ালি বিজিবিকে অবগত করা হয়েছে।

পরে এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, প্রথমত এটি টার্গেট কিলিং নয়। উভয় দিকের এটা নিয়ে দ্বিধা ছিল। সেদিন অন্ধকার ও ঘন কুয়াশা ছিল। বিএসএফ বিষয়টি অফিসিয়ালি আমাদের জানিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুই পক্ষেরই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে পোশাকধারী ও সাধারণ নাগরিকদের কারও যেন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। কোনো প্রাণ যাক, আমরা কেউই চাই না। প্রাণ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্তে চোরাকারবারীদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোনো অংশে লাগছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে চোরাকারবারীদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোনো পার্টে লাগছে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র দিয়ে গুলি করলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। ক্লোজ রেঞ্জ থেকে রাবার বুলেট ছুড়লে সেটি দিয়েও মৃত্যু হতে পারে। যখন বিবিএসএফ সদস্যদের ওপর দা দিয়ে হামলা করা হয়, তখন তারা অনেক কাছে চলে আসে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ সদস্যরা কখনো গুলি করতে বাধ্য হন।

এর বাইরেও বিপুল চোরাকারবারীদের গ্রেপ্তার করা হয়, গ্রেপ্তারদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে। এজন্য জয়েন্ট বর্ডার পেট্রোলিং, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, চোরাকারবারীর মতো নানা অপরাধীরা বিভিন্ন সময় বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে কখনো কখনো বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে বাধ্য হন। বিএসএফের প্রতিরোধে শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারতীয় অপরাধীরাও মারা যায়।

বিজিবি ডিজি বলেন, আমরা সীমান্তে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করছি। আমরা সীমান্তে কোনো হতাহত হোক চাই না।

তিনি সাম্প্রতিককালে ভারতের সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে আসা মৃত ভারতীয় সৈনিকদের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং সহানুভূতিশীল আন্তরিকতার জন্য বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এবারের ডিজি পর্যায়ের যৌথ সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং একমত হয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন তাঁরা।

সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবির মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয়সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী ৫ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমির সেচ সুবিধা ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে বন্ধ থাকা রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। বিএসএফ মহাপরিচালক উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণের আশ্বাস দেন।

ঢাকায় ৫-৯ মার্চ বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছেন। বিএসএফের মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগ্রাওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। আজকেই তাঁরা দেশে ফিরে যান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়ক বেহাল, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

বিজিবি সদস্যের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয়: বিজিবি ডিজি

প্রকাশের সময় : ০২:০২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে গত ২২ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মো. রইশুদ্দীনের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয় বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

শনিবার (৯ মার্চ) সকালে ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষদিন বিজিবি-বিএসএফ ডিজির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বিজিবি সদস্য মো. রইশুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় সেদিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ডিজি নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে সেদিন কী ঘটেছিল। আমি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাই না, বিষয়টি অফিসিয়ালি বিজিবিকে অবগত করা হয়েছে।

পরে এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, প্রথমত এটি টার্গেট কিলিং নয়। উভয় দিকের এটা নিয়ে দ্বিধা ছিল। সেদিন অন্ধকার ও ঘন কুয়াশা ছিল। বিএসএফ বিষয়টি অফিসিয়ালি আমাদের জানিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুই পক্ষেরই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে পোশাকধারী ও সাধারণ নাগরিকদের কারও যেন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। কোনো প্রাণ যাক, আমরা কেউই চাই না। প্রাণ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্তে চোরাকারবারীদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোনো অংশে লাগছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে চোরাকারবারীদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোনো পার্টে লাগছে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র দিয়ে গুলি করলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। ক্লোজ রেঞ্জ থেকে রাবার বুলেট ছুড়লে সেটি দিয়েও মৃত্যু হতে পারে। যখন বিবিএসএফ সদস্যদের ওপর দা দিয়ে হামলা করা হয়, তখন তারা অনেক কাছে চলে আসে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিএসএফ সদস্যরা কখনো গুলি করতে বাধ্য হন।

এর বাইরেও বিপুল চোরাকারবারীদের গ্রেপ্তার করা হয়, গ্রেপ্তারদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, সীমান্তে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে। এজন্য জয়েন্ট বর্ডার পেট্রোলিং, ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, চোরাকারবারীর মতো নানা অপরাধীরা বিভিন্ন সময় বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে কখনো কখনো বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে বাধ্য হন। বিএসএফের প্রতিরোধে শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারতীয় অপরাধীরাও মারা যায়।

বিজিবি ডিজি বলেন, আমরা সীমান্তে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করছি। আমরা সীমান্তে কোনো হতাহত হোক চাই না।

তিনি সাম্প্রতিককালে ভারতের সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে আসা মৃত ভারতীয় সৈনিকদের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং সহানুভূতিশীল আন্তরিকতার জন্য বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এবারের ডিজি পর্যায়ের যৌথ সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং একমত হয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন তাঁরা।

সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবির মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয়সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী ৫ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমির সেচ সুবিধা ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে বন্ধ থাকা রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। বিএসএফ মহাপরিচালক উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণের আশ্বাস দেন।

ঢাকায় ৫-৯ মার্চ বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছেন। বিএসএফের মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগ্রাওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। আজকেই তাঁরা দেশে ফিরে যান।